জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সিনিয়র সচিবকে ডিও লেটার (আধা-সরকারি পত্র) দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম। ‘বিগত সরকার সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ উল্লেখ করে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩’ বাতিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। কমিশন পদত্যাগের আগে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি ডিও লেটার পাঠানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে গেছেন। আমি সচিব হিসেবে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছি।
মঙ্গলবার পাঠানো ডিও লেটারে সচিব বলেন, ছাত্র-জনতার সফল বিপ্লব ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে গত ৫ আগস্ট বিগত সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। ফলস্বরূপ গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নবযাত্রা শুরু করেছে।
সচিব তার আধা সরকারি পত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আপনি অবগত আছেন যে ২০০৭-০৮ সালে দল-মত নির্বিশেষে সবার আস্থার জায়গা থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ নাগরিকের ডেমোগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক তথ্যসংগ্রহ করে জাতীয়ভাবে ভোটার ডাটাবেজ গড়ে তোলা হয়। এই ডাটাবেজে বর্তমানে প্রায় ১২ কোটি ১৯ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে। ইউএনডিপির সমীক্ষা অনুসারে ভোটারদের এই সংগৃহীত ডাটা ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ সঠিক বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। নির্বাচন কমিশনের গত ১৭ বছর যাবৎ নিবন্ধিত নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিচ্ছে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশব্যাপী নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে। তিনি লিখেছেন, তৎকালীন সরকার সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্যসমৃদ্ধ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করা সিদ্ধান্ত নেয়। নির্বাচন কমিশনের মতামত না নিয়েই রুলস অব বিজনেস পরিবর্তন করা হয়। বিগত সরকারের আমলে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। আইনটির কার্যকারিতার তারিখ নির্ধারিত না হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের অধীনেই বর্তমানে এনআইডি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়, একই জনবল ও অর্থ দ্বারা একদিকে ভোটার তালিকা ও উপজাত হিসেবে নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হচ্ছে যা সর্বস্তরে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হলে তথ্যের অমিলের কারণে ভোট প্রদান বাধাগ্রস্ত হবে এবং নির্বাচন পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটবে। এছাড়া তথ্যভাণ্ডারের শুদ্ধতা বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের তথ্যের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষিত থাকায় কোনও তথ্য বিকৃতিসহ তথ্যের অপব্যবহারের সুযোগ কম উল্লেখ করে ডিও লেটারে আরও বলা হয়, বর্তমানে সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে বাংলাদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে এনআইডি কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে ‘ডাটাবেইজ ম্যানিপুলেট’ করার আশঙ্কা দেখা দেবে এবং ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ বিনষ্ট হবে।
নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্তকরণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বাতিলের বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সদ্য পদত্যাগকারী) অনুমোদন দিয়েছেন বলেও ডিও লেটারে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে এ সংক্রান্ত ৩৬ পাতার বিভিন্ন তথ্য ও প্রমাণক সংযুক্ত করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য