-->
শিরোনাম

ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ যেতে চান ৩২ কর্মকর্তা

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ
যেতে চান ৩২ কর্মকর্তা

মাছ চাষ, খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ যাওয়ার খবর পুরনো। এবার ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ যেতে চান সরকারের ৩২ কর্মকর্তা। চলমান একটি প্রকল্পের আওতায় এ খাতে খরচ ধরা হয়েছে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রত্যেক কর্মকর্তা খরচ বাবদ পাবেন ১০ লাখ টাকা। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এ প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা। গত চার বছরে এ খাতে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় বিদেশ সফর হয়নি। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে এক বছর।

বর্ধিত ডিপিপিতেও (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তিন কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ ভ্রমণে অর্থব্যয় করতে চান না সরকার সংশ্লিষ্টরা। দেশে গবাদি পশুর জন্য পুষ্টিকর ঘাস উৎপাদনের জন্য ‘প্রাণী পুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাসের চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১১৭ কেটি ৪৯ লাখ টাকা।

প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ছে এক বছর। বাড়তি সময়ের মধ্যে হলেও বিদেশ ভ্রমণে যেতে চান কর্মকর্তারা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে তারা।

৩২ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক আমজাদ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, প্রকল্পের কাজ চলমান। বর্তমানে অগ্রগতি প্রায় ২৭ শতাংশ। আমরা বরাদ্দ ঠিকমতো পাইনি। তাই অগ্রগতি ভালো হয়নি। ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি, এজন্য এক বছর মেয়াদ বাড়ছে।

প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পে ৩২ কর্মকর্তা উন্নত দেশে ভ্রমণ করবেন, যেখানে ঘাসের চাষ ভালো হয়। দেশগুলো নিউজিল্যান্ড হতে পারে, ভিয়েতনাম হতে পারে আবার অন্য দেশও হতে পারে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে ৩১ কোটি ৫২ লাখ ১৭ হাজার টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ না পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অগ্রগতি হয়নি এবং ডিসেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে প্রকল্পের নির্ধারিত কাজসম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই ব্যয় ব্যতিরেকে মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৫ নাগাদ বাড়ছে।

প্রকল্পটি খামারি পর্যায়ে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রাণী পুষ্টির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। প্রকল্পের মাধ্যমে দেশব্যাপী খামারিদের মধ্যে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ প্রযুক্তি সাইলেজ সম্প্রসারণ করার সংস্থান রয়েছে।

এ প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান থাকলে খামারিদের মধ্যে উন্নত জাতের কাঁচা ঘাস চায় এবং সাইলেজ প্রযুক্তি জনপ্রিয় হবে। গবাদিপশুকে পর্যাপ্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ কাঁচা ঘাস সরবরাহ বাড়বে এবং গো-খাদ্যের আমদানি নির্ভরতা কমবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নেপিয়ার ঘাসের চার-পাঁচটি জার্মপ্লাজম দেশে আনা হবে। এগুলো কীভাবে প্রস্তুত করা যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন কর্মকর্তারা। কীভাবে সারাদেশের খামারি পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া যায়, ল্যাবরেটরিতে জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়ে তিনটি দেশে কর্মকর্তারা যাবেন। দুধ উৎপাদন বাড়ানো ও খামারিদের লাভবান করতেই এমন উদ্যোগ। খাদ্যের মধ্যে কাঁচা ঘাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুধ উৎপাদন বাড়াতে কাঁচা ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। কাঁচা ঘাস সহজপ্রাপ্য হলে গাভি পালনও সহজতর হবে। তাই আধুনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে হবে। সে জন্য দরকার ব্যাপকভাবে উচ্চ উৎপাদশীল ঘাস চাষ। খামারি পর্যায়ে উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করার মাধ্যমে গবাদি পশুর পুষ্টির উন্নয়ন করা প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। এছাড়া প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় খামার পর্যায়ে প্রাণী পুষ্টি উন্নয়ন প্রযুক্তি প্রদর্শন ও দুর্যোগকালীন গো-খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সাইলেজ প্রযুক্তি গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ। এছাড়া সাভারে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে স্থায়ী জার্মপ্লাজম নার্সারি স্থাপন করাসহ ৮ হাজার ৯৭০টি উচ্চ উৎপাদনশীল উন্নত জাতের স্থায়ী বা অস্থায়ী ঘাসের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে। সম্প্রসারণ করা হবে বিদেশ থেমে আমদানি করা নেপিয়ার-১ জার্মপ্লাজম। বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণের জন্য ১৭ হাজার ৯৪০টি খামারে লাগসই প্রযুক্তি (সাইলেজসহ) হস্তান্তর করাসহ অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ ঘাসের বীজ বিতরণ, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স খাদ্য এবং কৃমিনাশক বিতরণ, কমিউনিটি এক্সটেনশন এজেন্ট নির্বাচন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

ঘাস চাষ শেখার বিষয়ে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, এখন বিদেশ ভ্রমণের সময় নয়, দেশের জন্য কাজ করার সময়। কোনো অনুমোদিত প্রকল্পে যদি ঘাস চাষের কোনো বিষয় থাকে সেটা বাদ দেওয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। এটা আমাদের হাতে এলে কেটে বাদ দেব। এখন প্রকল্পের আওতায় কেউ বিদেশ যেতে পারবে না সাফ কথা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ঘাস চাষে শেখার কিছু নেই।

এটা অর্থের অপচয়। ঘাস চাষ শিখতে দেশ ঘোরার কোনো মানে নেই। দেশে যে ঘাসগুলো ব্যবহার হয় একই ধরনের কাজ হবে। ভালো জাতের ঘাস নাও হতে পারে। ঘাস চাষ এমন কিছু টেকনিক্যাল কোনো জিনিস নয়। এটা বাড়তি খরচ ও অপচয়। এটা দেশ ঘোরার একটা পাঁয়তারা। অর্থের অপচয়। তিনি বলেন, গম, ধান যেভাবে চাষ করা হয় এটা একইভাবে হয়। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। জিনিসটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত এবং অপচয়মূলক প্রকল্পের কাজ বাদ দেওয়া উচিত। এটা নিয়ে একগাদা লোক বিদেশে গিয়ে দেখে আসার কী আছে? এই অপচয় বন্ধ করা উচিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে সব ধরনের অপচয় বন্ধ করা এখনই মুখ্য সময়।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version