-->
শিরোনাম

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সংবর্ধনায় মির্জা ফখরুল

ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সংবর্ধনায় মির্জা ফখরুল

এক দশকের নির্বাসন শেষে দেশে ফেরার পর সাহসী সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে সংবর্ধনা দিয়েছেন ঢাকার সাংবাবিদকেরা। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতীয়ভাবে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে সেটা সুপরিকল্পিতভাবে বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে এ বিজয় অর্জিত হয়েছে। এই বিজয়কে ধরে রাখতে হবে। যাতে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়। সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে আমাদের যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, সেই ঐক্যকে যেন আমরা অটুট রাখতে পারি। আজকে সুপরিকল্পিতভাবে সেই ঐক্যকে বিনষ্ট করার একটি চক্রান্ত চলছে। সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনে গত ১৫ বছরে অনেকেই নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। অনেকেই দেশছাড়া হয়ে দীর্ঘদিন নির্বাসনে থেকেছেন। তবে দেশপ্রেমিক জনতা দেশের বাইরে থেকেও গণতন্ত্র রক্ষায় সংগ্রাম করে গেছে।

এ সময় তিনি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তিনি গণতন্ত্রের সত্যিকারের নায়ক। আমরা যখন কথা বলতে পারিনি, তখন মুশফিক আমেরিকা এবং ইউরোপে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এমন সন্তান বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নেওয়া দরকার।

ফখরুল বলেন, মুশফিক গণতন্ত্রের সত্যিকারের হিরো ছিলেন। মুশফিক আমাদের কাছে, এই দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে তিনি হিরো হিসেবে থাকবেন।

অনুষ্ঠানে মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, স্বৈরাচার মুক্ত করে দেশের মানুষ এখন মুক্ত বাতাসে বসবাস করছেন। দেশটাকে নতুন করে স্বাধীন করতে গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে যারা জীবন দিয়েছেন তাদেরকে তিনি স্মরণ করেন। বলেন, নতুন করে স্বাধীনতা আনতে ছাত্র-জনতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তবে, বেশ আগে থেকেই কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করে আসছে। একটা পর্যায়ে যার সমাপ্তি করেছে ছাত্র-জনতা।

তিনি বলেন, এখনো ষড়যন্ত্র কিন্তু থেকে নেই। তাই আমাদেরকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। কারণ, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসররা এখনো বসে নেই। তাই, এ আন্দোলনে কার ভূমিকা কম বা বেশি ছিল তা নিয়ে আমাদের তর্ক করার সময় এখন নয়। দেশটাকে নিয়ে কেউ যেন আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা একটি কার্যকর রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র চাই। যা দেশের মানুষের জন্যে মঙ্গল বয়ে আনবে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, দেশটি আমাদের নিকট প্রতিবেশী। আমরা চাই ভারত বিশেষ কোন দল বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তির প্রতি সম্পর্ক না করে দেশের মানুষের চাওয়াকে প্রধান্য দেবে। যেটি তারা করে আসছে বেশ আগে থেকে। আমি ইতিমধ্যে ভারতের কয়েকজন দায়িত্বশীল পর্যায়ের মানুষের কাছে আবদেন করেছি- তারা যেন এদেশের সব দল বা মানুষের প্রতি সম আচরণ করেন।

এছাড়া নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস একজন নোবেল জয়ী। যেকারণে আমরা গর্বিত। এই সরকারের সব উপদেষ্টা তাদের নিজস্ব সেক্টরে অত্যন্ত দক্ষ ও পরিচিতজন। আমরা আশা করছি জনগণের পার্লস বুঝে তারা কাজ করবেন।

দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে নিজের আবেগ আর অনুভূতি ব্যক্ত করে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের জন্যেই কাজ করেছি। আজাীবন তা করে যাবো। ইতিপূর্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের কোন লোভ আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে ফুলেল সংবর্ধনা দেন সাংবাদিক নেতারা। এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকেও তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। জাস্টনিউজবিডি ডটকমের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক খালিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাঈদ খান ও নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাম্মদ মোস্তফার নেতৃত্বে সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে সংবর্ধনা জানানো হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সরকারি কর্মকর্তা সমিতির নেতা ড. নেয়ামত উল্যাহ, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দচন্দ্র প্রমাণিক, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কবি আব্দুল হাই সিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলমসহ এছাড়া দেশের প্রতিটি সেক্টরের বিশিষ্টজনেরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর সমালোচনার জন্য পরিচিত বিশিষ্ট সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী প্রায় এক দশক নির্বাসনে থাকার পর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে দেশ ছাড়ার পর তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত হোয়াইট হাউস এবং জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক এবং অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলাম সম্পাদিত বৈদেশিক নীতি ম্যাগাজিন সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভস-এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও কাজ করছেন। তিনি জাস্টনিউজবিডি’র সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। মুশফিকুল ফজল আনসারী বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচনী জালিয়াতি এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থাকে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন বিশ^বাসীর সামনে।

মুশফিকের সমালোচনামূলক সাংবাদিকতার কারণে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তাকে নির্বাসিত করা হয়। এর আগে, তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনীতিক প্রতিবেদক ছিলেন। এছাড়াও বার্তা সংস্থা ইউএনবি সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়া আউটলেটে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্ট। ওয়ার্কএক্সিপিরিয়েন্স রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেছেন বিশ্বখ্যাত বৃটেনের দ্য টাইমস ও সানডে টাইমস পত্রিকায়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠান অ্যাঙ্কর করেছেন, পাশাপাশি এনটিভিতে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান "হ্যালো এক্সেলেন্সি" হোস্ট করেছেন, যেখানে অসংখ্য রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতি থাকতেন।

 

ভোরের আকাশ/মি

 

মন্তব্য

Beta version