-->

ভারীবর্ষণে খুলনায় ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিবেদক
ভারীবর্ষণে খুলনায় ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা
  • তলিয়ে গেছে ৮ হাজার ২৫০ মৎস্যঘের
  • ৩ দশমিক ১৫ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট

সাম্প্রতিক বিরামহীন প্রবল বর্ষণে খুলনা জেলায় মাছ ও ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে মৎস্য ও কৃষি বিভাগ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষি ও কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। টানা বৃষ্টিতে খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদের অসংখ্য মৎস্যঘের এবং আবাদি জমি। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তাদের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ততথ্য মতে, টানাবর্ষণে ডুমুরিয়া ও ফুলতলার ৮ হাজার ২৫০টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধ হয়ে ফষলহানি ঘটেছে ৩ দশমিক ১৫ হেক্টর জমি। এতে মৎস্যঘের মালিক ও সাধারণ কৃষক বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। টাকার অংকে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

ডুমুুরিয়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, অবিরাম বর্ষণে বিল ডাকাতিয়া এলাকার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মাছের ঘের সম্পূর্ণ ভেসে গেছে; এতে মাছচাষীদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৪৫ কোটি টাকা।

মাছের ঘেরের পাশাপাশি কৃষি খাতও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডুমুুরিয়া উপজেলার রংপুর, গুটুদিয়া, রঘুনাথপুর ও ধামালিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন জানিয়েছেন। এতে ধান ছাড়াও টমেটো ক্ষেতসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্ষেত ধ্বংস হয়ে গেছে। ইবনে আমিন বলেন, ফসলহানির কারণে স্থানীয় কৃষকদের ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। ক্ষতির মাত্রা যাতে আর না বাড়তে, সে জন্য ফসলের ক্ষেত থেকে দ্রুত পানি সরানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান।

এদিকে টানা বর্ষণে ফুলতলা উপজেলায় ৭৫০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে, এতে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফুলতলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম সুলতান বলেন, তারা মাছচাষিদের আরও ক্ষতি এড়াতে জাল দিয়ে ঘের সুরক্ষিত করার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে, টানাবর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮০ হেক্টর জমির ধান ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফুলতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা। কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের একটি তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি করেছে এবং সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিলে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হতে পারে।

বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতি মৌজার মৎস্য চাষি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক তার জীবন-জীবিকার ওপর বৃষ্টির বিধ্বংসী প্রভাব বর্ণনা করেছেন। তিনি যে ছয়টি মাছের ঘের পরিচালনা করেন তার মধ্যে চারটি ভেসে গেছে, এতে আট কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান মোস্তাক।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের বিরামহীন ভারী বর্ষণের ডুমুরিয়া ও ফুলতলাসহ জেলার সব ক’টি উপজেলায় মৎস্য ও কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এই ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা যাচ্ছে না বলেও দুই বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version