না ফেরার দেশে চলে গেলেন আট বারের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রাথমিক গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার রাত ৮টায় রাজধানীর ল্যাব এইড ক্যান্সার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন মেয়ে ফারহানা রহমান। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর আদর্শ কলেজ মাঠে প্রথম জানাজা ও সাড়ে ১১টায় ফুলবাড়ী কলেজ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।
১৯৫৩ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার জামগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাবা মোবারক হোসেন এবং মা শাহেদা খাতুন। রাজনৈতিক অঙ্গণে তিনি ‘ফিজার’ নামেই অধিক পরিচিত।
তিনি ১৯৬৮ সালে স্থানীয় সুজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে ফুলবাড়ি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা এবং এগারো দফা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মোস্তাফিজুর রহমান সেক্টর-৭ এর অধীনে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ফুলবাড়ি কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৭৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ১৯৮৬ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে ১৯৭০ সালে কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ফুলবাড়ী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জি.এস ছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দিনাজপুর জেলা কমিটির সদস্য, ১৯৮০ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৯২ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২১ বছর নেতৃত্ব দেন। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের প্রতিবাদ করায় ১৩ অক্টোবর ১৯৭৫ সালে সেনা হেফাজতে এবং ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের জন্য কারাভোগ করেন।
মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৮৬ সালে প্রথমবার পরবর্তীতে ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৪ দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ি-পার্বতীপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তিনি বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী এবং ৩১ জুলাই ২০০৯ থেকে ২১ নভেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, জার্মানী, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। ১৯৭৯ সালে তিনি রাজিনা রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। ফারহানা রহমান ও ফারজানা রহমান নামে দুই কন্যা সন্তান রয়েছে এই দম্পতির। চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিলে সংসদ সদস্য পদ হারান মোস্তাফিজুর রহমান।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য