-->

পাচারের অর্থ ফেরাতে ৭১ দেশে দুদকের চিঠি

জবাব মিলেছে ২৭ দেশের

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
পাচারের অর্থ ফেরাতে ৭১ দেশে দুদকের চিঠি

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জোরালো তৎপরতা শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত ৭১টি দেশে চিঠি (মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট-এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক। এর মধ্যে ২৭টি দেশ থেকে চিঠির জবাব পেয়েছে দুদক। গতকাল মঙ্গলবার দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধি দলের সভা শেষে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। দুদক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কো-অপারেশন বিভাগের প্রধান মিশেল ক্রেজা, প্রোগ্রাম ম্যানেজার পাবলো প্যাডিন পেরেজ, নাদের তানজা এবং কিশওয়ার আমিনের সমন্বয়ে একটি টিম দুদকে বৈঠক করেন। এসময় দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ও সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন, দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন, পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ ও গোলাম শাহরিয়ারের সমন্বয়ে একটি টিম সংস্থাটির পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে হাসিনা সরকারের আমলে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে বেশ জোরালোভাবেই তৎপরতা শুরু করেছে দুদক। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), জাতিসংঘের ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি), বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ধারাবাহিকভাবে দুদকের সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ ফেরতসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সভা করেছে। ওই সব বৈঠক থেকে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত, বিশেষ করে মানিলন্ডারিং, সাইবার ক্রাইম, আর্থিক লেনদেনের তদন্তের ক্ষেত্রে ফরেনসিক অ্যানালাইসিস, ট্রেডবেইজড, মানিলন্ডারিং, অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল, সম্পদ পুনরুদ্ধার, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত আর্থিক অপরাধ, মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স, তথ্য বিনিময়সহ বিভিন্ন ইস্যু গুরুত্ব দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করলো দুদক।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এরইমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, সরকারের একাধিক সাবেক পদস্থ কর্মকর্তার সম্পদ জব্দের আদেশ হয়েছে, ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত ৭১টি মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। ২৭টি এমএলএআরের জবাব পেয়েছি। পাচার করা অর্থের বিষয়ে যথাযথ তথ্য পরে জানাতে পারব। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপে এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। তিনি বলেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সে বিষয়টি আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সামনে উপস্থাপন করেছি। যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে সে অর্থ ফিরিয়ে আনতে তারা যাতে সহযোগিতা করে সে বিষয়টি আমরা তাদের বলেছি। বৈঠকে আমরা তাদের যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে সেই দেশগুলোর নাম উল্লেখ করেছি, আশা করছি ওই সব দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তারা আমাদের সহযোগিতা করবে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, সভায় দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিনিধি দলকে অবহিত করা হয়। এছাড়া দুদকের সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ও পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল তাদের পক্ষ থেকে দুদককে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

পতিত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে অন্তত ১৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে কানাডা, আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার হয়েছে বলে দুদকের ভাষ্য।

মন্তব্য

Beta version