দেশে মোট সার্টিফিকেটধারী বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ ৮২ হাজার। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কর্মহীন থাকছেন প্রায় ৮ লাখ তরুণ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের একটি পট পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থা বৈষম্য সৃষ্টির একটা প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এখন লক্ষ্য হতে হবে শিক্ষাব্যবস্থার এই বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করা। গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গণস্বাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উঠে আসে এসব মন্তব্য। অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের একটি পট পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থা বৈষম্য সৃষ্টির একটা প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এখন লক্ষ্য হতে হবে শিক্ষাব্যবস্থার এই বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করা। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারে ইতোমধ্যে কমিটি করা হয়েছে, এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এখন কিভাবে কী করা যায়, সে বিষয়ে আমরা উপদেষ্টার সঙ্গে বসে কাজ করবো। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষার অন্যান্য খাত নিয়েও সংস্কারের কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে, তবে এটা একটি সমন্বিত উদ্যোগ হতে হবে।
বক্তব্যে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দেশে মোট সার্টিফিকেটধারী বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ ৮২ হাজার। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কর্মহীন থাকছেন প্রায় ৮ লাখ তরুণ। এই বেকারত্বের হার দেখে বোঝা যায় উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে যেমন মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে পেটেন্ট বা কপিরাইট তৈরির মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারছে না, আবার বিদ্যমান বা ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে যুগের প্রয়োজনে যে ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতার চাহিদা তৈরি হচ্ছে, তা বর্তমানে চালু গতানুগতিক বিষয় ও কোর্সগুলো ঠিকমতো পূরণ করতে পারছে না। এ প্রেক্ষিতে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দীর্ঘ তাত্ত্বিক আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট কোর্সের পরিবর্তে মডিউলার এপ্রোচে প্রয়োগমুখী মাইক্রো-ক্রেডেন্সিয়াল কোর্স চালু করা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় এই ধরনের কোর্সে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীর বিজ্ঞানসহ সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে যথাযথ মৌলিক যোগ্যতা অর্জন জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে উচ্চশিক্ষার প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এসব কলেজের শিক্ষার মান ও পাঠ্য বিষয়বস্তুর প্রাসঙ্গিকতার ওপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রমবাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষতাসম্পন্ন স্নাতক তৈরির বিশেষ সুযোগ রয়েছে। তবে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় সেটি হয়ে উঠছে না। সম্মেলনে যেসব সুপারিশ তুলে ধরা হয় সেগুলো হলো -
১. বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রাথমিক কাজ হিসেবে ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনয়ন। মুখস্থনির্ভর লিখিত পরীক্ষার বদলে প্রবণতানির্ভর টেস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও সক্ষমতা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
২. এ ছাড়াও গতানুগতিক কন্টেন্টনির্ভর কোর্সের বদলে গবেষণানির্ভর, প্রয়োগমুখী, সমস্যা সমাধাননির্ভর আন্তঃবিষয়ক মাইক্রো-ক্রেডেন্সিয়াল কোর্স চালু করা সময়ের দাবি।
৩. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান ও শ্রমবাজারের দাবি অনুযায়ী শিক্ষার সংস্থান জরুরি।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন, যাতে তারা মনিটরিং, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট এবং মার্কেট বেসিস ডিগ্রি-কোর্স প্রণয়নে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শাহিনূর আল আমিন, লালমাটিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আকমল হোসেন প্রমুখ।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য