-->
শিরোনাম

১৫ লাখ টাকা দেনা রেখে উধাও জবি ছাত্রলীগ

মাহমুদুল হাসান মামুন, জবি
১৫ লাখ টাকা দেনা রেখে
উধাও জবি ছাত্রলীগ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল ছাত্রলীগের। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন দোকান-পাটে চাঁদাবাজি, সাপ্তাহিক ও মাসিক চাঁদা উত্তোলনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। শুধু চাঁদাবাজিই না, দলবেঁধে গিয়ে খেয়ে টাকা পরিশোধ না করারও নজির রয়েছে। জবির টিএসসি ও ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়া মিলিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাকি খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টাকার বেশি।

জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি সংলগ্ন আরামবাগ হোটেল মালিক ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের কাছে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা পান। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের মেহেদীর কাছে অন্তত এক লাখ, মিরাজের কাছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধুমাত্র সেক্রেটারি প্যানেলের নিকটই তার পাওনা টাকার পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির চায়ের দোকান থেকেও বাকি খেয়ে টাকা পরিশোধ করতেন না তারা। টিএসসির ‘খোকন মামা’ চায়ের দোকান থেকে বাকি খেয়ে বিল পরিশোধ করেননি অনেকেই। এই দোকানী জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মিলিয়ে অন্তত এক লাখ টাকার বেশি বাকি পড়ে রয়েছে তার।

টিএসসির ভাতের হোটেলেও দেখা যায় একই চিত্র। আনোয়ারের ভাতের হোটেল থেকে বাকি খেয়ে বিল দিতেন না শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আকতার হোসাইনের অনুসারীরা। সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী মিরাজের নির্দেশে বাকি খেতো কর্মীরা। এই দোকানি জানায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা এক লাখ টাকার বেশি বাকি খেয়েছে। এছাড়াও টিএসসি শিঙাড়া-সামুচার দোকানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাকি খাওয়ার হিসাবই নেই। দোকানিরা বলেন, প্রতিদিন ছেলেরা আসত, খেতো, টাকা না দিয়ে চলে যেত। টাকা চাইলে গালাগালি করত। বিশেষত সভাপতি প্যানেলের রবি এবং মেহেদীর লোকজন প্রতিদিন অন্তত ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকার বাকি খেতেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যাফেটেরিয়াতেও গত দুই বছরে ছাত্র-লীগের নেতাকর্মীরা ক্যান্টিন থেকে সাত লাখ টাকার মতো ফাও খেয়েছে। পরবর্তীতে আর টাকা দেয়নি। এখন তাদের সবাই পলাতক।

ক্যাফেটেরিয়া সূত্রে জানা গেছে, জবির ক্যাফেটেরিয়ায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির নামে বাকি রয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের নামে বাকি রয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও ক্যাফেটেরিয়াতে বাকির হিসেবে নাম রয়েছে ছাত্রলীগের আরো অন্তত পাঁচ নেতাকর্মীদের নামে। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির মাই ম্যান খ্যাত রবিউল ইসলাম রবির নামে বাকি ৫২ হাজার টাকা। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসানের গ্রুপ লিডার খ্যাত মিরাজের নামে বাকি রয়েছে ৭৫ হাজার টাকা, সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান বাবুর নামে বাকি ৫৫ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে ক্যাম্পাস সংলগ্ন আরামবাগ হোটেলের স্বত্বাধিকারী আবু লাল মিয়া বলেন, ছাত্রলীগের শুধু সেক্রেটারি প্যানেল এই বিগত এক বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা বাকি খেয়ে ধার পরিশোধ করেনি। ছাত্রলীগের সেক্রেটারি প্যানেল এর নেতা মেহেদী একাই এক লাখ টাকার উপরে বাকি খেয়ে টাকা দেয়নি। তার অনুসারীদেরকে খাবার খেতে পাঠিয়ে দিয়ে ফোন করে বলে দিত এবং পরবর্তীতে বিল চাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতো। এছাড়াও সেক্রেটারি প্যানেল এর আরেক নেতা মিরাজ অর্ধ-লক্ষ টাকা বাকি খেয়েছে। তিনি আরো বলেন, তারা প্রতিনিয়ত একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জন করে এসে ইচ্ছেমতো খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যেত। তাদের থেকে টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, বোঝার পর থেকে আমরা তাদের বাকি খাতায় তুলে রাখা থেকে বিরত থাকি।

এবিষয়ে জবি ক্যাফেটেরিয়া পরিচালক মাসুদ রানা বলেন, দীর্ঘদিন বাকি খেয়েছে ছাত্রলীগ। টাকা দেবে দেবে করে আর দেয়নি। এর বাইরে আরো অনেকে আছে যারা টুকটাক খেয়েছে, তার হিসাব নেই। খেয়ে তারা টাকা দিত না, আবার খাবার দিতে দেরি হলেও ক্যান্টিনের ওয়েটাদের মারধরও করেছে সাজবুলসহ বেশ কয়েকজন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. কে এ এম রিফাত হাসান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে বিষয়টি সত্য হলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা রেগুলার স্টুডেন্ট হলে তাদের থেকে টাকা আদায় করার ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রশাসনিকভাবে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version