-->
শিরোনাম

উন্নয়ন কর্মসূচিতে আন্দোলনের ধাক্কা

দুই মাসে এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ২.৫৭%

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
উন্নয়ন কর্মসূচিতে আন্দোলনের ধাক্কা

অর্থবছরের শুরুর দিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি এমনিতেই ধীর থাকে। এ বছর আন্দোলনের ধাক্কায় সেই গতি আরও কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে এর হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৫৭ শতাংশে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্টে) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত কোনো অর্থবছরেই এডিপি বাস্তবায়নের হার ৩ শতাংশের কম ছিল না। এমনকি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পর কোনো অর্থবছরেই এডিপি বাস্তবায়নের হার ৩ শতাংশের কম ছিল না। গত কয়েক বছরের মধ্যে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

গত বুধবার প্রকাশিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই ও আগস্ট মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র সাত হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। যা মোট এডিপি বরাদ্দের ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এখনো এডিপির ১ শতাংশ বরাদ্দও খরচ করতে পারেনি ২৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অগ্রগতি শূন্য শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই ও আগস্ট মাস জুড়ে ছাত্র আন্দোলনসহ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন-পরবর্তী সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল না। এরই নেতিবাচক প্রভাবই পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে জুলাই ও আগস্ট মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র সাত হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১০ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। আগের অর্থবছরগুলোতেও ব্যয় ছিল আট হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের দুই মাসে ৫ শতাংশের বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে মাত্র ছয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলো হলোÑ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, আইএমইডি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, ইআরডি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ বিভাগ। শূন্য শতাংশ বাস্তবায়ন তথা এডিপি বাস্তবায়ন শুরুই করতে পারেনি পাঁচটি যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এদিকে শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে চারটিÑ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। এর বাইরে ১ শতাংশের কম এডিপি বাস্তবায়ন করা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছেÑ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষাসেবা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় কর্ম কমিশন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিদেশি অর্থায়নের কিছু প্রকল্পের বিদেশিকর্মী, ঠিকাদার প্রতিনিধি ও পরামর্শকরা প্রকল্প ছেড়ে চলে যান। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্ট মাসে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২৪১ কোটি টাকা, যা সরকারি তহবিলের বরাদ্দের ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে বৈদেশিক সহায়তা খাতের বরাদ্দ থেকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ব্যয় হয়েছে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ বা ৩ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।

তবে সরকারি প্রকল্পে গত অর্থবছর থেকেই হিমশিম খাচ্ছিল পতিত শেখ হাসিনা সরকার। অর্থসংকটে অনেক প্রকল্পেই অর্থ খরচ করা সম্ভব হচ্ছিল না। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইতিহাসের সর্বনিম্ন বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই এডিপি বাস্তবায়নে তেমন উন্নতি দেখা যায়নি। জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের কারণেও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটে। পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এর তিন দিনের মাথায় নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর সর্বত্রই সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়। পরিবর্তন আনা হয়েছে সর্বোচ্চ বিচারালয় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত। এখনও সেই কার্যক্রম চলছে। এতে করে উন্নয়ন কর্মসূচি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version