-->

বায়তুল মোকাররমে খতিব প্যানেল হচ্ছে

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
বায়তুল মোকাররমে খতিব প্যানেল হচ্ছে

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের নতুন খতিব কে হচ্ছেন, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অনুসারীদের মধ্যে থেকে কাউকে ‘খতিব’ পদে নিযুক্ত করতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানটিতে খতিব নিয়োগ দেয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। গত ২২ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সাবেক খতিব মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে। আওয়ামী লীগের অনুসারী আলেম হিসেবে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররমে অনুসারীদের নিয়ে উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন খতিব পদ থেকে মাওলানা রুহুল আমিনকে অপসারণ করে।

গত কয়েকদিনে ইসলামী ঘরানার সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বায়তুল মোকাররমে খতিব নিয়োগে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামী সক্রিয় রয়েছে। এর বাইরে ইসলামী আন্দোলনসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের আগ্রহ রয়েছে। এই সক্রিয়তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি তৎপরতা হয়েছে।

জাতীয় সিরাত উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ‘সিরাতুন্নবী (সা) মাহফিল’ ডেকেছে জামায়াতপন্থি আলেমরা। আজ শনিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে সম্মেলনটি। এই সিরাত মাহফিলে দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরামরা তাফসির পেশ করবেন। প্রধান মেহমান হিসেবে তাফসির পেশ করবেন আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের খতিব ‘আওলাদে রাসূল’ আনোয়ার হোসাইন তাহের আল জাবের আল মাদানী। মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন মাওলানা আবু তাহের জিহাদি।

জামায়াতপন্থি কেউ-কেউ বলছেন, বায়তুল মোকাররমের খতিব করার জন্যই জাতীয়ভাবে পরিচিত করতে আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের খতিব আনোয়ার হোসাইন তাহের আল জাবের আল মাদানীকে ঢাকায় এনে সম্মেলন করছে জামায়াত। এ বিষয়ে আয়োজকদের অন্যতম, জামায়াত নেতা মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানীকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। যদিও জামায়াতের তরুণ নেতাদের কেউ-কেউ বলেছেন, বর্তমানে সারা দেশে পরিচিত ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে বায়তুল মোকাররমের খতিব করা হলে জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানটি সক্রিয় হতে পারবে।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী অবশ্য মনে করেন, বায়তুল মোকাররমের খতিব হতে হবে সরকারের অনুদাসমুক্ত। ইসলাম ও এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেবেন না, যিনি রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড ইসলামবিরোধিতার গেলে যেন পথ নির্দেশ করতে সক্ষম - এমন যোগ্য, সৎ ও জ্ঞানী আলেমকেই খতিব পদে নিযুক্ত করা উচিত।

পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের তথ্য বাতায়নে উল্লেখ করা হয়েছে, আব্দুল লতিফ ইব্রাহিম বাওয়ানি প্রথম ঢাকায় বিপুল ধারণক্ষমতাসহ একটি গ্র্যান্ড মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মোকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থলে মসজিদটির জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। স্থানটি নগরীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র থেকেও ছিল কাছে। বিশিষ্ট স্থপতি টি আব্দুল হুসেন থারিয়ানিকে মসজিদ কমপ্লেক্সটির নকশার জন্য নিযুক্ত করা হয়। পুরো কমপ্লেক্স নকশার মধ্যে দোকান, অফিস, লাইব্রেরি ও গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

বর্তমানে দুইজন ইমাম ভারপ্রাপ্ত খতিব হিসেবে কাজ করছেন। তারা হলেন, মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান ও মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে মাওলানা রুহুল আমিন, প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, হাফেজ মুফতি মোহাম্মদ নূরুদ্দীন, মাওলানা উবায়দুল হক, মুফতি আব্দুল মুইজ, মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান বারকাতী, ক্কারী উসমান মাদানী, মাওলানা আব্দুর রহমান কাশগরি বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ধর্মভিত্তিক একটি দলের নেতা জানান, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরে এলেই খতিব ইস্যুতে আলোচনার উদ্যোগ নেবে হেফাজত। এক্ষেত্রে উপদেষ্টার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের ঘনিষ্ঠতা থাকায় সমর্থনও জরুরি বিষয় বলে দাবি করেন এই নেতা।

একাধিক কওমি মাদরাসাভিত্তিক দলের নেতা জানান, খতিব হিসেবে হেফাজতের নেতাদের আলোচনায় মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা আবদুল মতিন, মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুফতি রফিকুল ইসলাম, হাটহাজারী মাদরাসার প্রধান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. এবিএম হিজবুল্লাহ, ইসলামী বক্তা মুশতাক উন নবী কাশেমী, মুফতি ওবায়দুল্লাহ হামজার নাম আলোচনায় আসছে।

ধর্ম উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের দাবি, উপদেষ্টা সৌদি আরব সফরে যাওয়ার আগে ইঙ্গিত দিয়েছেন, সরকারের উচ্চ-পর্যায়ে বিশেষ করে ছাত্রপ্রতিনিধিদের জায়গা থেকেও বার্তা এসেছে বায়তুল মোকাররমের খতিব নিয়োগে একটি প্যানেল করে দেওয়ার। এই প্যানেলের সদস্য হবেন তিন থেকে চারজন। বাংলাদেশ বিদ্যমান ইসলামী প্রধান চারধারার মধ্য থেকে সহনশীল ও উদারপন্থি আলেম, বিশেষজ্ঞদের প্রাধান্য দিয়ে প্যানেল খতিব করা হবে, বলে জানিয়েছে উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সূত্রটি।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা সৌদি আরবে রয়েছেন। হেফাজতের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মাদানীকে উদ্ধৃত করে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা একেএম আশরাফুল হক বলেন, ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা দেশে ফিরে আসার পর খতিব বিষয়ে আলোচনা হবে। তিনি বর্তমানে মদিনায় অবস্থান করছেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, দেশে প্রধানত ইসলামী ঘরানার চারটি ধারা রয়েছে। দেওবন্দিপন্থি, সালাফি-আহলে হাদিস, জামায়াতপন্থি ও সুন্নি বা তরিকতপন্থি। তিনি উল্লেখ করেন, এই চার ঘরানার কোনো ঘরানার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না এমন কিছু মেনে নেওয়া হবে না।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version