-->

প্রিপেইড মিটারে বিরক্ত বিদ্যুতের গ্রাহকরা

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রিপেইড মিটারে বিরক্ত
বিদ্যুতের গ্রাহকরা

টঙ্গীতে বসবাসকারী নাইম আহমেদ ডেসকোর প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী একজন গ্রাহক। তিনি বলছেন, সাধারণত প্রিপেইড মিটার রিচার্জের ক্ষেত্রে ২০ ডিজিটের টোকেন ডায়াল করতে হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ১৮০ ডিজিটের পিন ডায়াল করতে হচ্ছে। কোনো কারণে একটি সংখ্যা ভুল হলে পুনরায় সবগুলো সংখ্যা ডায়াল করতে হয়! বিদ্যুৎ বিভাগের এ কাণ্ডে তিনি যারপরনাই বিরক্ত। ‘আজগুবি’ টোকেনের এ বিড়ম্বনায় পড়ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের বিদ্যুতের আরও অনেক গ্রাহক। তারা জানিয়েছেন, বেশি সংখ্যার টোকেন মিটারে প্রবেশ করাতে তাদের গলদঘর্ম হতে হয়। এ বিড়ম্বনা থেকে দ্রুত মুক্তি চান তারা। তারা মনে করছেন এটা একটা হয়রানি।

বিদ্যুৎ খাতে গ্রাহকসেবার মান উন্নয়নে ২০১৫ সালে প্রিপেইড মিটার চালু করে সরকার। এর ফলে গ্রাহকরা ঘরে বসেই অনলাইনে বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছেন। এতে যেমন শতভাগ বিল আদায় নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। তবে প্রিপেইডে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে নতুন ভোগান্তি দেখা গেছে এর টোকেন সিস্টেমে। প্রিপেইড মিটার রিচার্জের ক্ষেত্রে সাধারণত ২০ ডিজিটের একটি টোকেন গ্রাহকের মোবাইল ফোনে বার্তা আকারে আসে। সেই টোকেন নম্বরটি মিটারে প্রবেশ করালে রিচার্জসম্পন্ন হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একবার রিচার্জ করলে ২০ ডিজিটের এমন টোকেন ১০ থেকে ১২টি করে গ্রাহকের কাছে আসছে। সংখ্যায় যা দাঁড়ায় ২০০ থেকে ২৪০টি ডিজিট বা সংখ্যা। রিচার্জসম্পন্ন করতে সবগুলো সংখ্যা মিটারে প্রবেশ করাতে হয়। যা গ্রাহকদের জন্য বেশ ভোগান্তির।

চাঁদপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম যেমন বলছেন, পল্লী বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করতে গিয়ে আমাকে বেশ কয়েকবার এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কার্ডে টাকা রিচার্জের পর ফোনে টোকেন নম্বর আসে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ২০ ডিজিটের ১২টা টোকেন এসেছে। অর্থাৎ ২৪০টি সংখ্যা। আমাকে বাধ্য হয়েই সবগুলো সংখ্যা সঠিকভাবে বসিয়ে রিচার্জ কমপ্লিট করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ভাবলাম এ সমস্যা শুধু আমারই হয় কি না। পরে দেখলাম না, অনেকেরই এমন সমস্যায় হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করা হলেও তারা সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান দিতে পারেনি। টেকনিক্যাল ইস্যুতে এমনটা হয়ে থাকে বলে জানানো হয়। অগত্যা ২০০ সংখ্যা চেপেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন গ্রাহকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখন বিদ্যুতের ট্যারিফ বা মূল্য চেঞ্জ হয় তখন টোকেনের এই সমস্যা হয়। সার্ভার থেকে মিটারে তথ্য জমা দিতে গেলে এতগুলো টোকেন চলে আসে। এই প্রবণতা আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে বেশি। কারণ, এই খাতে সøাবের সংখ্যা বেশি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাইকারি, খুচরা ও সঞ্চালন পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। তখন একবার এ ধরনের ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া যায়। সবশেষ চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ানো হয়। এরপর থেকে সমস্যাটা আবার সামনে আসে। বিদ্যুতের বাড়তি দাম সার্ভারে আপডেট করতে গিয়ে এ সমস্যা হচ্ছে।

পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত বছরের শুরুতে প্রতিটি গ্রাহকের তথ্য হালনাগাদ করা হয়। এই সংখ্যাগুলো দ্বারা গ্রাহকের নাম, শ্রেণি-বিভাগ ইত্যাদি তথ্য বোঝানো হয়। এ তথ্যগুলো বিতরণ কোম্পানির সার্ভারে এনক্রিপটেড অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়।

বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারের এ বিড়ম্বনার বিষয়টি অজানা নেই বিদ্যুতের কর্মকর্তাদেরও। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কারিগরি বিষয়ক পরিচালক নাজমুল হক জানান, মিটার রিচার্জের ক্ষেত্রে টোকেনের এই সমস্যার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। মূলত বিদ্যুতের নতুন দর আসার পর এই কারিগরি সমস্যাটা দেখা দেয়। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। গ্রাহকের সংখ্যা যেহেতু অনেক বেশি, তাই সময় লাগতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তরিকুল হক বলেন, বিদ্যুতের ট্যারিফ বা দাম পরিবর্তন করা হলে, লোডশেডিং বাড়লে, নতুন সংযোগ বা অভ্যন্তরীণ কোনো পরিবর্তনের ফলে অনেক সময় গ্রাহক এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে আমরা অ্যাডভান্স মিটার ইনফ্রাস্ট্রাকচার নামক একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, যাতে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে গত বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত মোট বিদ্যুতের গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৩১ লাখ। এর মধ্যে প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছেন ৫১ লাখ ৭ হাজার ৪৫২ জন। দেশে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ করছে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ২৯১, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ১৩ লাখ ১০ হাজার ৫৬৪, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৬৯, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ৬ লাখ ১৪ হাজার ২০৫, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো) ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯২৩ ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ৫ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ছয়টি প্রকল্প চলছে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version