প্রথম দফার আকস্মিক বন্যায় দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১২টি জেলার ৭২টি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ হাজার ৮৩৫টি গবাদি পশুর খামার। এ ছাড়া ৫ হাজার ৪৭৯টি হাঁস-মুরগির খামারও ক্ষতির কবলে পড়েছে। সব মিলে এ খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪৮৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রবল বৃষ্টি আর উজানের ঢলে আগস্টের মাঝা-মাঝি দেশের ১২টি জেলা মারাত্মকভাবে বন্যা আক্রান্ত হয়। জেলাগুলো হলো- সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, খুলনা, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। নজিরবিহীন এ বন্যায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক গবাদি পশুর মৃত্যু হয়। ভেসে যায় পশুখাদ্য ও খামারের অবকাঠামো।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভয়াবহ বন্যায় ১২ জেলার ৭২ উপজেলায় ৭ হাজার ৮৩৫টি গবাদি পশুর খামারে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৭টি গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পশুর মূল্য ৩০ কোটি ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া ৫ হাজার ৪৭৯টি খামারে ক্ষতি হয়েছে ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩০টি হাঁস মুরগির। অনেক হাঁস-মুরগি মরে গেছে। ভেসেও গেছে বিপুল সংখ্যক হাঁস-মুরগি। এতে ক্ষতি হয়েছে ৪১ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৮০ টাকার। এছাড়া ৭ হাজার ৫০ টন পশু-পাখির খাবার নষ্ট হয়ে গেছে; যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ কোটি ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৫৫০টাকা। বন্যায় বিনষ্ট হওয়া পশুপাখির খড়ের পরিমাণ ২১ হাজার ১৭৮ টন; যার মূল্য ৮ কোটি ৮০ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ঘাস নষ্ট হয়েছে ৬ লাখ ৩০ হাজার ৪৮৬ টন; যার মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ৭৫ লাখ ৯৬ হাজার ১৫০ টাকা। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ৪৫ হাজার ১২১ একর চারণ ভূমি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পদক্ষেপ : প্রাণিসম্পদ বিভাগ প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ২০ হাজার ৪৯৬টি গবাদি পশু এবং ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮৫টি হাঁস-মুরগিকে টিকা দিয়েছে। এছাড়া ১৩ হাজার ৬৮৬টি পশু ও ২ লাখ ৭ হাজার ৮৮৭টি রোগাক্রান্ত হাঁস-মুরগিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এরই মধ্যে কার্যকর নানা পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, জরুরি পশুখাদ্য সরবরাহ ও বিতরণ; গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রদান এবং ঘাসের কাটিং বিতরণ করা হবে। সহজ শর্তে খামারিদের ঋণ দেওয়া হবে। পশু ও হাঁস-মুরগির খামারগুলো সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা. মো. বয়জার রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, বন্যা চলমান অবস্থায় আমরা গোখাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবো।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য