আলোচনায় ‘রিসেট বাটন’

সিরাজুল ইসলাম
আলোচনায় ‘রিসেট বাটন’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই মাসের মাথায় চরম সমালোচনার মুখে পড়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভয়েস অব আমেরিকাকে সাক্ষাৎকারে ‘রিসেট বাটন’ বক্তব্য দিয়ে তিনি সমালোচিত হচ্ছেন। নেটিজেনদের অনেকে হ্যাসট্যাগ ‘স্টেপডাউন ইউনূস’ বা ‘ইউনূস হটাও’ প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেছেন- এমন অভিযোগও করেছেন অনেকে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন এবং সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস জ্ঞানী হলেও মুক্তিযুদ্ধে তার কোনও অংশগ্রহণ আমরা জানি না। রিসেট বাটন কিন্তু আমরাও চাপতে পারি। আমরা ১৯৭১ সালে রিসেট বাটনে চাপ দিয়ে পাকিস্তানকে ওয়াশ-আউট করে বাংলাদেশ তৈরি করছি; সেভাবে আবারও রিসেট বাটন চাপ দিতে পারি। তবে বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, মানুষের নানা বিষয় নিয়ে আবেগ থাকতে পারে। কিন্তু এগুলো নিয়ে যারা সমালোচনা করছে, এখানে একটা রাজনীতি আছে। তারা সবাই পরাজিত শক্তির পক্ষে। তার মতে, ‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে এই মুহূর্তে যারা সমালোচনা করছেন, তারা মনে করে যে একাত্তর-ই শুরু, একাত্তর-ই শেষ। অথবা, পঁচাত্তরের পর সব শেষ হয়ে গেছে। ‘বঙ্গবন্ধু না থাকলে বাংলাদেশ হতো না’ দাবির পাশাপাশি সমালোচনাকারীরা এখন বলছেন যে ‘বাংলাদেশ একমাত্র নিরাপদ থাকে শেখ হাসিনার হাতে’- শেখ হাসিনা বিদায় হয়ে গেছে, এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। এদিকে রিসেট বাটন নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যখন রিসেট বাটন চাপার কথা বলেছেন, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি থেকে নতুনভাবে শুরু করার কথা; যা বাংলাদেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের দুয়ারে ঠেলে দিয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষের ভোটের অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা হরণ করেছে। বাংলাদেশের গৌরবের ইতিহাসকে মুছে ফেলার কথা তিনি বোঝাননি। তার এই ব্যাখ্যার পরও সমালোচনা থামছে না।

জানা গেছে, দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে ‘রিসেট বাটন’ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। এই শব্দ দু’টো এখন ফেসবুক সার্চের ক্ষেত্রে ‘পপুলার নাউ’ ক্যাটাগরিতে চলে এসেছে। শুধু তাই নয়, এই রিসেট বাটন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এতদূর গড়িয়েছে যে অনেকেই তাদের ফেসবুক পোস্টে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লিখছেন ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’। অর্থাৎ, ‘ইউনূসকে হটাও’। টুইটারে যে হ্যাশট্যাগগুলো ট্রেন্ড করছে, এটি সেগুলোর মাঝে অন্যতম। সামাজিক মাধ্যমে অধ্যাপক ইউনূসের নামে চলমান এই সমালোচনায় যেমন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থকদের বড় সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে; তেমনি সেই সরকারের বিরোধিতাকারীদেরও দেখা যাচ্ছে। এদিকে, মাত্র দুই মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চেয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ ছিল- স্টেপ ডাউন হাসিনা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে চলে যান প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা শেখ হাসিনা। তারপর প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রকাশ্য বা প্রচ্ছন্ন সমর্থন নিয়ে গত ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু দুই মাসেরও কম সময়ের মাঝে কী এমন হলো যে মুহাম্মদ ইউনূস এত তোপের মুখে পড়লেন? কেন অনেকে প্রশ্ন করছেন যে ‘রিসেট বাটনে পুশ’ করলেই অতীত মুছে ফেলা যায় না?

‘রিসেট বাটন’ যেভাবে এল : সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯-তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে বসেই গত ২৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি। প্রায় ১৯ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে তার কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ, সেনাবাহিনীকে ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়াসহ আরও কিছু বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাওয়া হয়েছিলো। তেমনই একটি প্রসঙ্গ ছিলÑ সরকার পতনের পর ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের যে বাড়িটি ছিল, যেটিকে পরবর্তী জাদুঘর বানানো হয়েছে, সেটিকে ‘বিনষ্ট’ করা হয়েছে; অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর শোক দিবস হিসাবে ১৫ আগস্টের (শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী) ছুটি বাতিল করা হয়েছে; শেখ মুজিবুর রহমানের বহু ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

উপস্থাপকের প্রশ্ন ছিল, ‘এ নিয়ে সমালোচনা আছে। অনেকেই বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তারা ফ্যাসিবাদের আইকন হিসাবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতির জনক হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বীকৃত। এ ব্যাপারে আপনার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী?’

কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থাপকের এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর দেননি। তিনিই বরং উপস্থাপককে বললেন, ‘আপনি পুরনো দিনের কথাবার্তা বলছেন। এর মাঝে একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল। আপনার বোধহয় স্মরণে নেই। আপনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন এসব ঘটনা ঘটেইনি। নতুন ভঙ্গিতে যা হচ্ছে, সেটিকে দেখতে হবে তো। কত ছেলে প্রাণ দিলো, সেটা নিয়ে আপনার কোনও প্রশ্ন নাই। কেন প্রাণ দিলো?’

এর ঠিক পরেই তিনি বলেন, ‘প্রথম স্বীকার করতে হবে যে ছাত্ররা বলেছে, আমরা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছি; এভ্রিথিং ইজ গন; অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলবো। দেশের মানুষও তা চায়। সেই নতুন ভঙ্গিতে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সংস্কার করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার ওই মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা হচ্ছে। ফেসবুকে এই মুহূর্তে ‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে যে সব পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলোর মাঝে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের এক লাইনের একটি পোস্ট অন্যতম। অনেকেই তার ওই পোস্ট নিজ নিজ প্রোফাইলে শেয়ার করেছেন। মিজ শাওন তার দেওয়া পোস্টে কটাক্ষ করে শুধু প্রশ্ন করেছেন, ‘রিসেট বাটনে চাপ দিলে নোবেল পুরষ্কারের কী হবে?’ এখানে উল্লেখ্য, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকসহ যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি, যিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। অতীত মুছে ফেলা প্রসঙ্গে আবু সাঈদ নামক একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীও মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত অর্জন ও পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ‘ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শাসন, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের জন্ম, শেখ হাসিনা সরকারের সকল অতীত কর্মকাণ্ড’ মুছে গেছে কি না, এই প্রশ্নও রাখেন তিনি। যদিও তার ওই পোস্টে আদনান এইচ খান নামক একজন লিখেছেন, ‘এটি স্রেফ একটি উপমা।’ এমন আরও অনেকেই ফেসবুক ও টুইটারে লিখেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস ওই সাক্ষাৎকারে ১৯৭১ সাল তথা বাংলাদেশ গঠনের ইতিহাসকে অস্বীকার করে কথা বলেছেন। রিসেট বাটনে চাপ দেওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন লেখক তসলিমা নাসরিন। তবে তার প্রশ্নটা একটু ভিন্ন। তিনি প্রশ্ন করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস যে তরুণদের কথা বলছেন, তাদের মাঝে কারা রিসেট বাটন টিপেছে? মুহাম্মদ ইউনূসকে বিভিন্ন ধর্ম ও মতবিদ্বেষী তরুণরা ঘিরে রেখেছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানতে চেয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ওই তরুণদেরকেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব দিতে চান কি না।

যারা পোস্টগুলো করছেন, তারা সবাই যে পরিচিত বা জনপ্রিয় মুখ, তেমন না। অনেক সাধারণ মানুষ বা যারা গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তারাও ‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে হতাশ। এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন এবং সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্নাও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস জ্ঞানী হলেও মুক্তিযুদ্ধে তার কোনও অংশগ্রহণ আমরা জানি না। রিসেট বাটন কিন্তু আমরাও চাপতে পারি। আমরা ১৯৭১ সালে রিসেট বাটনে চাপ দিয়ে পাকিস্তানকে ওয়াশ-আউট করে বাংলাদেশ তৈরি করছি, সেভাবে আবারও রিসেট বাটন চাপ দিতে পারি।

জেড আই খান পান্নার এই বক্তব্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে শেয়ার করছেন। অনেকে আবার এও বলছেন যে তার ওই বক্তব্য আওয়ামী লীগের পক্ষে গেছে। এ বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার হাঁটুতে গুলি লেগেছে। তার বন্ধুরা যুদ্ধে মারা গেছে। সেইসময় আমাদের সামনে ছিল- আমি নিজে বাঁচবো, যে মারছে তাকে মারবো ও দেশকে স্বাধীন করবো। আমাদের কারও কোটার চিন্তা ছিল না। এটা আমি সর্বোচ্চ আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছি। তো, আমার ইতিহাস উনি (মুহাম্মদ ইউনূস) মুছে দেওয়ার কে?

১৯৭২ সালের পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগ করেন না এবং এখনও কোনও দল করছেন না জানিয়ে জেড আই খান পান্না বলেন, এই কথাটা আমার কলিজার ওপর গিয়ে বিঁধছে। এই কথাটা হার্ট করে কিনা? তাহলে তো দাঁড়ায় যে ওনার কোনও অতীত নাই।

বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘রিসেট বাটন’ নিয়ে যা হচ্ছে, তা ভুল বোঝাবুঝি। আমি পলাশীর যুদ্ধের কথা ভুলে গেছি, পানিপথের যুদ্ধের কথা ভুলে গেছি। সিপাহী বিদ্রোহের কথা ভুলে গেছি। সাতচল্লিশও ভুলে গেছি। এখন যে জেনারেশন এই পরিবর্তন এনেছে, তাদের বয়স ২৫-৩০ বছরের নিচে। তারা একাত্তর দেখে নাই। ঠিক যেভাবে আমি পলাশী দেখি নাই।

গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, কথা হলো, মানুষের নানান বিষয় নিয়ে আবেগ থাকতে পারে। কিন্তু এগুলো নিয়ে যারা সমালোচনা করছে, এখানে একটা রাজনীতি আছে। তারা সবাই পরাজিত শক্তির পক্ষে। তার মতে, ‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে এই মুহূর্তে যারা সমালোচনা করছেন, তারা মনে করে যে একাত্তর-ই শুরু, একাত্তর-ই শেষ। অথবা, পঁচাত্তরের পর সব শেষ হয়ে গেছে। ‘বঙ্গবন্ধু না থাকলে বাংলাদেশ হতো না’ দাবির পাশাপাশি সমালোচনাকারীরা এখন বলছেন যে ‘বাংলাদেশ একমাত্র নিরাপদ থাকে শেখ হাসিনার হাতে’- শেখ হাসিনা বিদায় হয়ে গেছে, এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না।

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, রিসেট মানে হলো, আমাদের সবকিছু আমূল সংস্কার করতে হবে। প্রচলিত ধারার রাজনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, অর্থনীতি আমরা চাই না। এখান থেকে বের হতে হলে অতীত থেকে একটা ছেদ ঘটাতে হবে। উনি (মুহাম্মদ ইউনূস) যদি এটাই বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে আমি মনে করি, উনি ঠিকই বলেছেন। উপস্থাপকের কথায় মুহাম্মদ ইউনূস কিছুটা বিরক্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।

উপস্থাপকের প্রশ্নের উত্তর মুহাম্মদ ইউনূস এখানে এক কথায় দিয়েছেন যে এগুলো নিয়ে বসে থাকলে হবে না। ৩২ নম্বরের বাড়ি পোড়ানো হয়েছে, ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয়েছে... ৮০০-৯০০ ছেলেপেলে গুলি করে মেরে ফেলেছে, এই বিষয়গুলো তার থেকে ছোট নাকি বড়? উনি ওই প্রশ্নটাই করেছেন।

শত শত ছেলে গুলি খেয়ে মারা গেছে। কিন্তু আমরা দেখেছি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজীপাড়া রেলস্টেশনে গিয়ে কান্নাকাটি করেছেন। তার মানে, এখানে বোঝা যাচ্ছে যে তার কাছে গুরুত্বটা কী। অধ্যাপক ইউনুসের কাছে গুরুত্ব হলো, ৫ আগস্ট পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারটা। উনি সেটাকেই জোর দিয়েছেন।

যা বলছেন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর : প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘রিসেট বাটন’ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। লিখিত বক্তক্যে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যখন রিসেট বাটন চাপার কথা বলেছেন, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি থেকে নতুনভাবে শুরু করার কথা; যা বাংলাদেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের দুয়ারে ঠেলে দিয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষের ভোটের অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা হরণ করেছে। বাংলাদেশের গৌরবের ইতিহাসকে মুছে ফেলার কথা তিনি বোঝাননি। যখন আপনি রিসেট বাটন চাপবেন, তখন সফটওয়্যার আবার নতুন করে চালু হয়। সেটা হার্ডওয়্যারের কোনো পরিবর্তন করে না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের হার্ডওয়্যার তৈরি হয়েছিল। ভয়েস অব আমেরিকাকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার নিয়ে কিছু মানুষ ভুল ব্যাখ্যা করছে।

প্রেস সচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে গত ৮ অগাস্ট ঢাকায় পৌঁছানোর পর মুহাম্মদ ইউনূস শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ছাত্রদের নেতৃত্বে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ছিল আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। প্রথম স্বাধীনতা এসেছিল ১৯৭১ সালে গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ড. ইউনূসের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে তার প্রেস সচিবের বিবৃতিতে। সেখানে বলা হয়, অধ্যাপক ইউনূস (তখন) যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই তিনি সেখানে ‘বাংলাদেশ নাগরিক কমিটি’ গঠন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার যাতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী প্রচার চালান। তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা সম্পর্কে বিশ^কে অবহিত করার জন্য বাংলাদেশ নিউজলেটারও প্রকাশ করেন।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য