-->

৬২ এএসপি’র নিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে গেল!

এমদাদুল হক খান
৬২ এএসপি’র নিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে গেল!

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও বাংলাদেশে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ ‘হঠাৎ’ স্থগিত করা হয়েছে। এ নিয়ে দেজজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে কি অনিশ্চিত ৪০তম বিসিএস পুলিশের ৬২ এএসপি’র নিয়োগ- এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। একজন সাবেক আইজিপি বলেছেন, কুচকাওয়াজ স্থগিতের ঘটনাটি বেআইনি না হলেও অনেকটা নজিরবিহীন।

গতকাল রোববার সকাল ১০টায় একাডেমিক প্যারেড গ্রাউন্ডে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের এ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ এবং প্যারেড পরিদর্শন করার কথা ছিল। এ ছাড়া পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কুচকাওয়াজে অংশ নেয়ার জন্য শনিবার রাতে সারদা পুলিশ একাডেমিতে অবস্থান করছিলেন। তবে শনিবার রাতে জানানো হয়, অনিবার্য কারণবশত শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, রাজশাহীতে রোববার (গতকাল) অনুষ্ঠিতব্য ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনিবার্য কারণবশত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণার্থী সহকারী পুলিশ সুপারদের পুরো ব্যাচ জুড়ে কুচকাওয়াজ স্থগিতের ঘটনা অনেকটাই নজিরবিহীন বলছেন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাদের কয়েকজন।

সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেছেন, এটি আইন বহির্ভূত না হলেও একটু ‘অস্বাভাবিক ও কিছুটা নজিরবিহীন’। কিছু কিছু ব্যাচের লম্বা সময় ধরে প্রশিক্ষণে রাখার ঘটনা আগেও হয়েছে অনেক সময়। কিংবা প্রশিক্ষণ চলাকালে বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে অনেকে বাদ পড়েছেন চাকরি থেকে। কিন্তু পুরো ব্যাচের কুচকাওয়াজ স্থগিতের ঘটনা সম্ভবত নজিরবিহীন ও একটু অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণকালে কারও আচরণ যথাযথ না হলে তাকে সরাসরি বাদ দেয়ার এখতিয়ারও কর্তৃপক্ষের আছে। এ ছাড়া আবেদনের সময় যেসব তথ্য প্রার্থী দিয়ে থাকে, সেগুলোর কোনোটি অসত্য প্রমাণিত হলেও ব্যবস্থা নেয়া যায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেছেন, এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার, নতজানু আচরণ এবং সক্ষমতার অভাব প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। তাদের উচিত ছিলো আগেই বিষয়টি রিভিউ করা; যাতে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কেউ ভিকটিমও না হয়, আবার সুবিধাও না পায়। এখনো উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিভিউ করে দেখা এবং খেয়াল রাখতে হবে যোগ্য কেউ যেন ভিকটিম না হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ঢালাওভাবে পুরো একটি ব্যাচের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেয়াটা ‘সুবিবেচনাপ্রসূত’ নয়। কেউ যদি রাজনৈতিক পরিচয় বা সুবিধা নিয়ে কোন ফেভার পায়, কিংবা প্রশ্ন পেয়ে চাকরি পায়, সেটি যথাযথ তদন্তে প্রমাণিত হলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে একটি ব্যাচকে রাজনৈতিক তকমা দেয়াটা যৌক্তিক হতে পারে না।

জানা গেছে, ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তারা ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর সারদা পুলিশ একাডেমিতে যোগদান করেন। অভিযোগ আছে, শেখ হাসিনার সরকার তিনটি ক্যাটাগরিতে ৪০তম বিসিএস থেকে ওই ৬২ জনকে এএসপি হিসাবে নির্বাচন করে। ক্যাটাগরিগুলো হলো- ছাত্রলীগ, গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এবং দলীয় ক্যাডার। সূত্র মতে, ওই সময় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অনেকে বাদ পড়েন শুধু এসবি এবং এনএসআইয়ের রিপোর্টের কারণে। আওয়ামী লীগ না করলে কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে ফলাফল যত ভালোই হোক পরিবারের কেউ বিএনপি অথবা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ আমলে সম্পন্ন হওয়া তিনটি ব্যাচের বিসিএসের নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। এতে অন্তত ৬২ জন ছাত্রলীগ নেতা নিয়োগ পেয়েছেন বলে শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে তাকে দেয়া আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানের কথাও জানান তিনি।

শিক্ষানবিশ এএসপিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত হওয়ার পর আরেকটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে সালাউদ্দিন আম্মার লিখেন, প্রোগ্রাম ক্যানসেল করেছে পুলিশ একাডেমি সারদা। কিছুদিন ধরে চলা অনুষ্ঠান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল থেকেই রাজশাহীতে থাকার পরও মাত্র জানাল ক্যানসেল করা হয়েছে। কিছু বুঝলেন? আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের আমরা কখনো গ্রহণ করব না। তদন্ত হোক, পরে যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ পাক।’

সূত্র মতে, প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আগে অভিযুক্ত ৬২ জনের পরীক্ষার ফলাফল থেকে শুরু করে এসবি, এনএসআই রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে নিরীহ কেউ আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখার পর পুনরায় প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ দিন-তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।

এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসি ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলো। এরপর, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ যাচাই-বাছাইয়ের সব ধাপ শেষে ২০২২ সালের নভেম্বরে নির্বাচিত প্রার্থীদের গেজেট প্রকাশ করেছিল সরকার। ওই গেজেট অনুযায়ী তখন ৭১ জনের সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদানের কথা। যাদের মধ্যে ৬২ জন দু’বছরের প্রশিক্ষণ শেষে গতকাল রোববার পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেয়ার কথা ছিল।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version