-->
শিরোনাম

জমি খেকো ‘লাক মিয়া’র দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জমি খেকো ‘লাক মিয়া’র দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লাক মিয়ার কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের অনুসন্ধানে এরইমধ্যে এই চেয়ারম্যানের সাড়ে ৪০০ বিঘার ওপর জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। সম্প্রতি দুদকের অনুসন্ধানকারী টিম কমিশনে ৭০টি দলিলমূলে প্রায় ১৭০ বিঘা জমি ক্রোকের আবেদন করেছে।

লাক মিয়া ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম, সন্তান মিনজু আক্তার ও হাফসা আক্তারের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছে দুদক। আবেদনের শুনানি নিয়ে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন তা মঞ্জুর করেন এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন।

লাক মিয়ার দুর্নীতি অনুসন্ধানের দায়িত্বে থাকা দুদকের একজন সহকারী পরিচালক বলেন, চাল, গম ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের হদিস পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বাবুর ছত্রছায়ায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন লাক মিয়া। এক যুগ আগেও তেমন কোনো সম্পদ ছিল না লাক মিয়ার। ২০১২ সালে খুলেছেন আয়কর ফাইল। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তার নামে রয়েছে ৪৫০ বিঘা জমি। ঢাকায় আছে ১১টি বহুতল বাড়ি। ব্যাংক হিসাবে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণও পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, লাক মিয়া এত সম্পদ গড়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর। গত ১০ বছর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময়।

এসব বিষয়ে জানতে লাক মিয়ার গ্রামীণ নম্বরে একাধিক বার ফোন দিয়ে জবাব পাওয়া যায়নি। দুদক সূত্র জানায়, গত ২৭ আগস্ট, ২ সেপ্টেম্বর ও ২২ সেপ্টেম্বর তিন দফায় তাকে হাজির হতে বললেও হাজির হননি লাক মিয়া। এমনকি দুদক উপ-পরিচালক মো. সোহানুর রহমান ও সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত অনুসন্ধান টিম পুলিশের থানা বা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তলব করে চিঠি দিলেও যোগাযোগ করেননি লাক মিয়া।

লাক মিয়ার যত সম্পদদুদক অনুসন্ধান সূত্র জানায়, লাক মিয়ার স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- মারুয়াদী মৌজায় ৪৫৭ শতাংশ, মুড়ালদী মৌজায় ৪৮৫ শতাংশ, লস্করদীতে ৬০২ শতাংশ, গুলপান্দীতে ১২২ শতাংশ, যাত্রাবাড়ীতে ৫২২ শতাংশ, দিঘলদীতে ৩১০ শতাংশ, উজান গোবিন্দীতে ১৮৫৪ শতাংশ, ফাউসায় ১৩৫০ শতাংশ, বড় মনোহরদীতে ১২২৮ শতাংশ, রিষেরচরে ৩২৭ শতাংশ, বিনাইরচরে ৭০৫০ শতাংশ ও ছোট মনোহরদী মৌজায় ২৪ শতাংশসহ মোট ৯ হাজার ১৬৯ শতাংশ বা ২৭৮ বিঘা জমি।

এই চেয়ারম্যান ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার গোলাকান্দাইল মৌজায় ৩৩৮০ নম্বর দাগে ৫৫ শতাংশ জমি কিনেছেন। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার বাঘবের মৌজায় ৭৮ শতাংশ জমি, বাঘবের মৌজায় ৯৩ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৫২ শতাংশ এবং রূপগঞ্জ থানার বাঘবের ও গুতিয়াব মৌজায় ৬২ শতাংশ নাল জমি কিনেছেন।

এছাড়া লাক মিয়া ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমের নামে নারায়ণগঞ্জের কামরাঙ্গীরচর, আড়াইহাজার ও ঝাইগাড়া মৌজায় প্রায় ৫৫ বিঘার জমির দলিল পাওয়া গেছে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version