-->

প্রকল্পের ৬৫ শতাংশই পরামর্শক ব্যয়

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকল্পের ৬৫ শতাংশই পরামর্শক ব্যয়

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রকৃতিতে থাকা পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করেছে ‘স্ট্রেংদেনিং ইনস্টিটিউশনস ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ইন ঢাকা’ প্রকল্প। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার হাড়িয়া নামক স্থানে শুরু হবে প্রকল্পের কাজ। সেখানে গবেষণা হবে মেঘনা নদীর পানি নিয়ে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্প প্রস্তাব এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে জমা পড়েছে। প্রকল্পটি জার্মান ডেভলপমেন্ট করপোরেশন (জিআইজেড) সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হবে। ৫৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ৩৪ কোটি ৯১ লাখ টাকাই রাখা হয়েছে পরামর্শকদের জন্য। সে হিসাবে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ তথা দুই-তৃতীয়াংশ খরচই রাখা হয়েছে পরামর্শক খাতে।

এদিকে প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে আজ বুধবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, সভায় সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খান। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, প্রকল্প প্রস্তাবনায় এত বিপুল পরিমাণ পরামর্শক ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে পিইসি সভায় প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রকল্পটি। প্রকল্পের আরও অন্যান্য খাতের ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যায়, ইনস্টিটিউশন ও টেকনিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কের উন্নতির মাধ্যমে ইনটেক পয়েন্ট এরিয়ার কাছাকাছি মেঘনা নদীর পানি গুণগত মান নিশ্চিত করা এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। এর জন্য সোনারগাঁও উপজেলার হাড়িয়া নামক স্থানে ঢাকা ওয়াসার ইনটেক পয়েন্ট থেকে মেঘনা নদীর তিন কিলোমিটার ডাউনস্ট্রিম ও ৩৫ কিলোমিটার আপস্ট্রিম এবং মেঘনা নদী এই অংশের আশপাশের এলাকাগুলোতে পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের ধরনের ওপর পরামর্শকের খরচ নির্ভর করে। এ প্রকল্পটি যেহেতু কারিগরি প্রকল্পের মতো, তাই পরামর্শক থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরামর্শক খাতে এত বেশি টাকার প্রয়োজন আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হবে। অহেতুক পরামর্শক ব্যয় যেন করা না হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে পিইসি সভায়।

পরিকল্পনা কমিশনের বিবেচনায় প্রকল্পের আরও কিছু খরচ প্রশ্নবিদ্ধ। ইক্যুইপমেন্ট ও ম্যাটেরিয়াল বাবদ এক কোটি ৯৬ লাখ টাকা (প্রকল্প ব্যয়ের ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ), প্রশিক্ষণ সেমিনার বাবদ তিন কোটি টাকা ধরা হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার নিজস্ব ব্যয় ১৩ কোটি ৪৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা (২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ)। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে সম্পদের পরিমাণ বাড়ানো যায় কীভাবে, সেটি নিয়েও পিইসি সভায় আলোচনা করা হবে। প্রকল্পের টিএপিপিতে মানবসম্পদ দক্ষতা উন্নয়নের আওতায় এক্সপোজার ভিজিট ট্রেনিং ও ওয়ার্কশপ বাবদ থোক হিসেবে আরও তিন কোটি দুই লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে পিইসি সভায়।পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন সহযোগী ব্যবস্থাপনা খরচ অঙ্গে থোক হিসেবে পাঁচ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং উন্নয়ন সহযোগী ব্যবস্থাপনা খরচ অঙ্গে থোক বাবদ সাত কোটি ৬৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া টিএপিপিতে সরঞ্জাম এবং উপকরণ সংগ্রহ অঙ্গে থোক বাবদ এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব ব্যয় বিষয়েও জানতে চাওয়া হবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে। টিএপিপিতে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল দেখানো হয়েছে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। বর্তমানে ২০২৪-২৫ অর্থবছর চলমান রয়েছে। সে জন্য প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল বাস্তব ভিত্তিতে নির্ধারণ করার বিষয়ে সভায় আলোচনা করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের টিএপিপিতে অনুদান হিসেবে ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ১৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বৈদেশিক অনুদান। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রকল্প অনুদান এক ইউরো ১১৮ টাকা ৬৭ পয়সা হারে নির্ধারণ হয়েছে, বর্তমানে যা অনেক বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে বিনিময় হার অনুযায়ী প্রকল্প ব্যয় বাড়বে কি না, সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version