-->

রাষ্ট্রপতির বিদায় কোন প্রক্রিয়ায়

অপসারণ নাকি পদত্যাগ

সিরাজুল ইসলাম
রাষ্ট্রপতির বিদায় কোন প্রক্রিয়ায়

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বিদায়ের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই- এমন বক্তব্যের পর তার ওপর পদত্যাগের চাপ বেড়েই চলেছে। এই দাবিতে গত মঙ্গলবার বঙ্গভবনের সামনে এবং সারাদেশে বিক্ষোভ হয়েছে। তবে তাকে কোন প্রক্রিয়ায় বিদায় করা হবে- অপসারণ করা হবে; নাকি তিনি পদত্যাগ করবেন; সেই বিষয় নিয়ে চলছে আলোচনা। তিনি পদত্যাগ করলে যে সাংবিধানিক জটিলতা তৈরি হবে; তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। গতকাল বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখান থেকে বের হয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দেশে কোনো ধরনের সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হোক; তা তার দল চায় না। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদে থাকা বা না থাকার বিষয়টি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি কোনো ‘সাংবিধানিক প্রশ্ন হতে পারে না’। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আজ উপদেষ্টার পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রপতি থাকবেন কি থাকবেন না- এ প্রশ্নটি এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়, এটি একেবারেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সেই সময় বিদ্যমান রাষ্ট্রপতি রেখেই সরকার গঠন করেছিলাম। যদি এই মনে হয় এ সেটআপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অথবা এ সেট আপে জনগণ অসন্তুষ্ট; তাহলে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবব এবং পুনর্মূল্যায়ন আমরা করছি। ফলে ‘রাজনৈতিক সমঝোতা বা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে’ সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলোচনা করছি এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। এটা রাজনৈতিক আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলায়। এটি এ মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি। এ সময় সবাইকে ‘শান্ত এবং ঐক্যবদ্ধ’ থাকার আহ্বান জানান তথ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা জনগণের প্রতি আহ্বান রাখছি, এ মুহূর্তে আমরা সচেতন থাকি এবং শান্ত থাকি। কোনো ধরনের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বা দেশি-বিদেশি নানা ধরনের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র চলছে; আমরা যাতে এমন কোনো পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, যাতে তারা সুবিধা নিতে পারে। সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বঙ্গভবন বা অন্য কোথাও ‘আন্দোলনের প্রয়োজন নেই’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তুমুল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কিনা, সে বিষয়টি নিয়ে আড়াই মাস পর বিতর্ক তৈরি হয় রাষ্ট্রপতির একটি কথায়। দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা শুনেছেন; কিন্তু কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই। ওই বক্তব্য মানবজমিনের একটি ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি চাপে পড়েন। প্রথমে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাহাবুদ্দিন ‘মিথ্যা’ বলে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামে। গত মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই বিক্ষোভ করা হয়। পরে রাতে কিছু সংখ্যক মানুষ ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেন্ডে নিক্ষেপ করে। পরে তারা সেখান থেকে সরে যান। গতকাল বুধবার অবশ্য সেখানে কোনো বিক্ষোভকারীকে দেখা যায়নি। তবে সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বিজিবি মোতায়েনও করা হয়।

আলোচনায় সাংবিধানিক শূন্যতা: রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠার মধ্যেই বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন স্থায়ী কমিটির আরও দুই সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠক শেষে বেলা ১২টায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপির তিন নেতা। বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে কোনো মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে কিনা- সেই প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্পেসিফিক কোনো ব্যাপার না। আমরা বলেছি দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করব। তিনি বলেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে যে রাজনৈতিক সংলাপ চালিয়ে আসছেন, তারই ধারাবাহিকতায় এ বৈঠক।

দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য যে সংস্কার চলছে সে কাজ জোরদার করার জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেইসব সংস্কার দ্রুত করে নির্বাচনের মাধ্যমে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আলোচনা আমরা করছি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণ যে কষ্ট পাচ্ছে, তা দূর করার ব্যাপারে সরকারকে ‘আরো কঠোর ও কার্যকর ভূমিকা’ পালনের পরামর্শ দেওয়ার কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দোসররা নানা কৌশলে, নানাভাবে দেশে রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন লড়াই করে বহু রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পরিবর্তন অর্জন করেছি, এই পরিবর্তনের সুরক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য আরো সুদৃঢ় করা দরকার। এখানে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার সংগঠন, ছাত্র-যুব সংগঠন, সবার দৃঢ়তর ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। যাতে কেউ কোনোভাবে দেশে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট কিংবা রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে না পারে, এভাবে সবাইকে হুঁশিয়ার থাকতে হবে।

রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করা এবং ঐকমত্যেরভিত্তিতে সেই সংস্কারগুলো করার দাবি তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণের চলমান সংকটগুলো নিরসন করার, আন্দোলনের ‘মূল আকাক্সক্ষা’ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কথা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন।

আমরা বলেছি, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যদি কোনো সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকট করার চেষ্টা করে, তাহলে গণতন্ত্রকামী ও আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব।

রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে বিষয়ে আলোচনা হয়নি: রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ‘সিদ্ধান্ত হয়নি’ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হলে তা সাংবাদিকদের জানানো হবে। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরাকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শফিকুল আলম। রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য এবং সরকারের একমত পোষণের পরবর্তী ধাপে সরকারের কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ আমার কাছে নেই- রাষ্ট্রপতির এমন বক্তব্যের জেরে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি ‘অসত্য’ বক্তব্য দিয়ে ‘শপথ ভঙ্গ’ করেছেন। এ অবস্থায় সংবিধান অনুযায়ী তাকে অপসারণের বিষয়ে ভাবা যায়।

এরপর মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, রাষ্ট্রপতির বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তেব্যের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার একমত। তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে আইন উপদেষ্টা মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

বাধা এখন সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ: এদিকে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, গত দুই দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্য এবং শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভে প্রস্তুত হয়ে গেছে রাষ্ট্রপতির বিদায়ের মঞ্চ। রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে ভালো। না হলে সরকারের পক্ষ থেকে একটা অবস্থান পরিষ্কার করা হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদের আজ বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তখন সব দিক বিবেচনা করে সরকারের করণীয় ঠিক করা হবে।

সরকারের একাধিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হবে কিনা- বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বহুবার আলোচনা হয়েছে। তবে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হবে কি হবে না- এমন সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখন পর্যন্ত। কোনো কোনো উপদেষ্টা এসব আলোচনায় মত দিয়েছেন যে রাষ্ট্রপতিকে রেখে দিলে যেকোনো সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিতে পারেন। আবার কারও কারও মত ছিল, সংসদ না থাকায় রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের একমাত্র পথ হচ্ছে পদত্যাগ। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ, যাতে বলা আছে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ক্ষেত্রমতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গত ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেছেন। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এর আগে গত ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

ফলে রাষ্ট্রপতিকে সরানোর চেয়ে সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকেই সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে বেছে নেওয়া হয় উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। সরকারকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে একমত উপদেষ্টা পরিষদ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন সংসদের অনুপস্থিতিতে তাকে অপসারণ সম্ভব কিনা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, রাষ্ট্রপতিকে সরানো যায় দুইভাবে। একটি হলো অভিসংশন করলে বা বাদ দিলে, আরেকটি হলো স্পিকারের মাধ্যমে সংসদে। কিন্তু বর্তমানে সংসদ ও স্পিকার দুটোই নেই। তাই সাংবিধানিক শূন্যতা হবে। এখন হয়তো কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে তো আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা উঠতে পারে। নিয়ম মেনে করলে সব কিছুই করা যেত। কিন্তু পরিস্থিতি একটু স্থিতিশীল হলেই অনেকে প্রশ্ন তুলবে।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম বলেন, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করে স্পিকারের কাছে জমা দিবেন। যদিও স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। এখানে দুটো আর্টিক্যাল জরুরি, আর্টিক্যাল সেভেনটি ফোর সাব আর্টিক্যাল সিক্স, তার সঙ্গে পড়তে হবে আর্টিক্যাল ফিফটি ফোর। সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদের ৬ ধারায় বলা আছে, এই অনুচ্ছেদের (২) দফার বিধানাবলি সত্ত্বেও ক্ষেত্রমতো স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে। এভাবে রাষ্ট্রপতি অপসারণ হলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আবার আরেকটি প্রশ্ন তৈরি হয়, শূন্যস্থানে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ হবেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আহসানুল করীম বলেন, রাষ্ট্রপতি নিয়োগ হয় না। রাষ্ট্রপতি নিয়োগ শুধু সংসদ করতে পারে। রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রক্রিয়া কী হবে এবং পদত্যাগ করলে কার কাছে জমা দিবেন এ নিয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হকও বলছেন, বিষয়টি নিয়ে খুবই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে সময়ের আলোকে সম্পূর্ণ পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করবে।

অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইনের শিক্ষকদের একটি অংশ বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ‘আইন ও সংবিধানের’ বিষয়টিই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। ফলে ‘জনআকাঙ্ক্ষার’ আলোকে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে অন্য কাউকে সে পদে বসাতে চাইলে সেটি অসম্ভব কিছু নয়। যদিও সরকার পরিবর্তনের পর দেশের সংবিধান স্থগিত করা হয়নি।

অনেকে আবার বলছেন, রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন কিনা, এটা একটা বড় প্রশ্ন। সরকার থেকে পদত্যাগে চাপ দেওয়া যেতে পারে। তবে, তা অতীতে বিভিন্ন বাহিনীর মাধ্যমে হয়েছে। এখন অবশ্য ছাত্ররা রাজপথে নামার ফলেও চাপ তৈরি হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version