-->

রাষ্ট্রপতির বিদায় নিয়ে সরকার দ্বিধায়!

সিরাজুল ইসলাম
রাষ্ট্রপতির বিদায় নিয়ে সরকার দ্বিধায়!

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বিদায় নিয়ে জল্পনা-কল্পনা আপাতত শেষ হচ্ছে না। তার পদত্যাগ দাবিতে মঙ্গলবার সারাদেশে বিক্ষোভ হলেও পরিস্থিতি গত বুধবার থেকে শান্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে কয়েকজন উপদেষ্টা ভিন্ন মত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর আগে বুধবার তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি থাকবেন কি থাকবেন নাÑ প্রশ্নটি এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়। এটি একেবারেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন। তিনি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। এদিকে, রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছে বলে জানা গেছে। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ নজরুল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। অনেকে আবার ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চান বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টিতে একমত নয়। রাষ্ট্রপতির অপসারণ কিংবা পদত্যাগ ইস্যুতে আপাতত কোনো সিদ্ধান্তে যেতে চায় না বিএনপি। কারণ এতে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে বলে মনে করছে দলটি। এ ইস্যুতে আপাতত চুপ রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। ইস্যুটিতে গুরুত্ব পাচ্ছে না জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করে দলটিকে কোনো আলোচনায় ডাকেনি অন্তর্বর্তী সরকার।

বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের প্রশ্নে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতেই বিষয়টাতে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

গত বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রপতি থাকবেন কি থাকবেন নাÑ প্রশ্নটি এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়। এটি একেবারেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং এর মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। তবে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সেই সময় বিদ্যমান রাষ্ট্রপতি রেখেই সরকার গঠন করেছিলাম। যদি এই মনে হয় এ সেটআপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অথবা এ সেট আপে জনগণ অসন্তুষ্ট; তাহলে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবব এবং পুনর্মূল্যায়ন আমরা করছি। ফলে রাজনৈতিক সমঝোতা বা রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

এর আগে গত সোমবার রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের ব্যাপারে সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি যে বলেছেনÑ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ, তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেনÑ প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।

সাংবিধানিক সংকট চায় না বিএনপি : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, কেউ যেন কোনোভাবে দেশে নতুন করে সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের সংকট তৈরির চেষ্টা করা হলে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা হবে। গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা দেখছি যে, পতিত ফ্যাসিবাদী ও তাদের দোসররা নানা কৌশলে দেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে। দীর্ঘদিন লড়াই করে বহু সহযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পরিবর্তন অর্জন করেছি, এর সুরক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করা দরকার। কেউ যেন কোনোভাবে দেশে নতুন করে সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

রাষ্ট্রপতির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি তা এড়িয়ে যান। রাষ্ট্রপতি অপসারণের আলোচনার মধ্যেই গত বুধবার বিএনপির প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে। এদিকে, রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা সৃষ্টি করতে ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা চক্রান্ত করছে অভিযোগ করে এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। গত বুধবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির পদটা একটা সাংবিধানিক পদ বা একটা প্রতিষ্ঠান, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমে শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রীয় সংকটের সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যদি গণতন্ত্রে উত্তরণের পথটা বিলম্বিত হয়, বাধাগ্রস্ত হয় বা কন্টকাকীর্ণ হয়, তা জাতির কাম্য নয়। সুতরাং পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দোসররা যাতে কোনো রকমের ষড়যন্ত্র, বা এখানে অন্যকিছুর পাঁয়তারা না করতে পারে, সে জন্য আমরা সবাইকে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণ চায় কি না জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা এই মুহূর্তে রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টি করবে, সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করবে, যেটা জাতির কাম্য নয়।

নতুন মুখের সন্ধান : গত কয়েক দিনে মো. সাহাবুদ্দিনকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে নতুন মুখ খুঁজতে সরকারের তরফ থেকে নানামুখী তৎপরতার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের কাছে রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব করা হলেও তিনি রাজি হননিÑ এমন খবরও বেরিয়েছে সংবাদমাধ্যমে। তবে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে গতকালই প্রথম অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা করা হয়। একাধিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ব্যাপারে ছাত্রদের দাবি রয়েছে। ছাত্রনেতারা ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি পদে আনতে চাইলেও সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যক্তিরও সন্ধান করা হয়। নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে একাধিক গ্রহণযোগ্য সাবেক প্রধান বিচারপতির নাম নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন আছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফেরার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আবারও আলোচনা হতে পারে। সেখানে আসতে পারে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত। আজ শুক্রবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

রাজনৈতিক দলের অবস্থান : মো. সাহাবুদ্দিনকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করা বা অপসারণের জন্য নতুন পদক্ষেপে’ বিএনপি রাখঢাক না রেখেই তার অবস্থান জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদে থাকার অধিকার হারিয়েছে মত দিলেও তার পদত্যাগ প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর জোরালো দাবি নেই। বলতে গেলে দলটি চুপ রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের (ইমপিচমেন্ট) মাধ্যমে অপসারণ করতে অবশ্যই সংসদ লাগবে। দ্বাদশ সংসদ বিলুপ্তির কারণে সেটি সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে ভিন্ন কোনো পদ্ধতির বিষয়ে নির্দেশনা বিদ্যমান সংবিধানে নেই। সংবিধানের আলোকে মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ করতে হলেও স্পিকারকে প্রয়োজন। কিন্তু ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পদত্যাগে স্পিকারের পদটিও এখন শূন্য। এ ক্ষেত্রে তিনি কার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন, সেটিও অস্পষ্ট। বিএনপি-জামায়াতের দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের প্রতি বিশেষ কোনো অনুকম্পা বা সহানুভূতি তাদের নেই। তবে এই ইস্যুতে এ মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হোক, এটা বিএনপি চায় না। রাষ্ট্রপতি পদে ছাত্র নেতাদের পছন্দের তালিকায় ড. ইউনূস থাকলেও বিএনপি-জামায়াতের পছন্দ বিকল্প গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। একই ব্যক্তির হাতে রাষ্ট্রের শীর্ষ দুই পদ (রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী) তুলে দিতে আপত্তি রয়েছে তাদের। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের গতিতে বিএনপি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ আশা করছে তারা। এসব বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ার নতুন করে রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে জটিলতার বিরুদ্ধে দলটি।

বাধা এখন সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ : সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ বলছে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ক্ষেত্রমতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গত ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেছেন। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এর আগে গত ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন সংসদের অনুপস্থিতিতে তাকে অপসারণ সম্ভব কি না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, রাষ্ট্রপতিকে সরানো যায় দুইভাবে। একটি হলো অভিসংশন করলে বা বাদ দিলে, আরেকটি হলো স্পিকারের মাধ্যমে সংসদে। কিন্তু বর্তমানে সংসদ ও স্পিকার দুটোই নেই। তাই সাংবিধানিক শূন্যতা হবে। এখন হয়তো কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে তো আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা উঠতে পারে। নিয়ম মেনে করলে সব কিছুই করা যেত। কিন্তু পরিস্থিতি একটু স্থিতিশীল হলেই অনেকে প্রশ্ন তুলবে।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম বলেন, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করে স্পিকারের কাছে জমা দিবেন। যদিও স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। এখানে দুটো আর্টিক্যাল জরুরি, আর্টিক্যাল সেভেনটি ফোর সাব আর্টিক্যাল সিক্স, তার সঙ্গে পড়তে হবে আর্টিক্যাল ফিফটি ফোর। সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদের ৬ ধারায় বলা আছে, এই অনুচ্ছেদের (২) দফার বিধানাবলি সত্ত্বেও ক্ষেত্রমতো স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে। এভাবে রাষ্ট্রপতি অপসারণ হলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আবার আরেকটি প্রশ্ন তৈরি হয়, শূন্যস্থানে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ হবেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আহসানুল করীম বলেন, রাষ্ট্রপতি নিয়োগ হয় না। রাষ্ট্রপতি নিয়োগ শুধু সংসদ করতে পারে। রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রক্রিয়া কী হবে এবং পদত্যাগ করলে কার কাছে জমা দিবেন এ নিয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হকও বলছেন, বিষয়টি নিয়ে খুবই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে সময়ের আলোকে সম্পূর্ণ পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করবে।

অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইনের শিক্ষকদের একটি অংশ বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ‘আইন ও সংবিধানের’ বিষয়টিই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। ফলে ‘জনআকাক্সক্ষার’ আলোকে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে অন্য কাউকে সে পদে বসাতে চাইলে সেটি অসম্ভব কিছু নয়। যদিও সরকার পরিবর্তনের পর দেশের সংবিধান স্থগিত করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে গত এপ্রিলে শপথ নিয়েছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। তখনকার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর তালিকায় তার নাম ছিল। কর্মজীবনে জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় সম্পৃক্ত হয়েছিলেন তিনি। রোববার মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মন্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করা হয়। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ছাত্রদের মধ্যে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেন। গত বৃহস্পতিবার ওই আলটিমেটাম শেষ হয়। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার বঙ্গভবনের গেটে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা জড়ো হন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version