-->

অপরাধী ব্যবসায়ীদের ব্যক্তি পর্যায়ে শাস্তি হবে: আসিফ মাহমুদ 

ঢাবি প্রতিনিধি 
অপরাধী ব্যবসায়ীদের ব্যক্তি পর্যায়ে শাস্তি হবে: আসিফ মাহমুদ 

অপরাধী ব্যবসায়ীদের ব্যক্তি পর্যায়ে শাস্তির আওতাধীন করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। শনিবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, " দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে একটা সমস্যা হলো ট্রানজেকশন (লেনদেন) এর একটা প্রভাব। বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর অধিকাংশেরই মালিকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার বা ঋণ খেলাপির অভিযোগ আছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবে ব্যাক্তির অপরাধ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য আছে। যে ব্যক্তি অপরাধ করেছে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ব্যাবহার করে এবং সরকারের সাথে সুসম্পর্কের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে তাদেরকে আমরা ট্রায়ালের আওতায় নিয়ে আসবো কিন্তু ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় রাখার জন্যে সরকার সহযোগীতা করছে। ব্যক্তির অপরাধের কারণে ব্যক্তি ট্রায়ালের শিকার হবে তবেপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা অভয় দিতে চাই আপনারা আপনাদের কাজ করুন। যাদের জন্যে এত বছর জনকল্যাণমুখী কাজ করতে পারেন নি এখন সুযোগ এসেছে সেদিকে নজর দিন।"

আসিফ মাহমুদ বলেন, " দ্রব্যমূল্যের একটি ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি আমরা দেখতে পেয়েছিলাম, সেটিকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমরা নিয়েই কার্যক্রম শুরু করি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলায় জেলায় টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের সাথে ছাত্র প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। তার কিছু সুফল আমরা দেখেছি। গত বছর একজন ভোক্তা হিসেবে দেখেছি যখন দামটা বাড়া শুরু করে তখন সেটা অসীম পর্যায়ে চলে যায়। কাঁচামরিচের দাম ১২০০ টাকায় উঠে গিয়েছিলো। দাম সঠিক সময়ে এবার নিয়ন্ত্রণ করায় আর বাড়তে দেয়া হয় নি। শীতের সবজি আসছে। দাম আরো কমে আসবে বলে আশা রাখছি। এ সরকারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নেই বলে কারো প্রতি ঝোঁক নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা দেখেছি ইতিপূ্র্বে যে সরকারগুলো ছিলো তারা সবাই কর্পোরেটদের হাতে জিন্মি ছিলো। আমরা কোন কর্পোরেটদের হাতে বন্দি নই,আমরা স্বাধীন। আমরা যে কারো বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে পারি এবং নিচ্ছি। দেশের অন্যতম ২ টি প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও কিন্তু ছাড় দেই নি।"

"ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধন এর বিষয়ে আমি বাণিজ্য মন্ত্রনালয় এর উপদেষ্টার সাথে কথা বলেছি। আমরা দ্রব্যমূল্য লাঘবসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিষয়টি প্রকৃয়াধীন আছে। আমরা দ্রুত দ্রব্যমূল্য লাঘবের চেষ্টায় আছি।"

"মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা কৃষক থেকে সরাসরি বাজারে পণ্য পাঠাতে সাহায্য করছি। কোন প্রকার সিন্ডিকেট বা মধ্যসত্ত্বভোগীর দৌরত্বে যেন না আসে সেদিকে তারা কাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষক থেকে সরাসরি বাজারে পণ্য পাঠাতে যারা কাজ করছে তাদেরকে সাহায্য করা হচ্ছে।"

এ সম্মেলনে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব মো: সেলিম উদ্দীন বলেন, "দূর্ভাগ্য জনক বিষয় কিছুদিন আগে বন্যা হয়েছে, অনেক জেলায় ফসলহানী হয়েছে, বছরের এই সময়ে সারাদেশে কার্তিক  অগ্রাহায়ণের মঙ্গা নামে পরিচিত শীতে কিছু ফসলের ঘাটতি হয় এদিকে আন্তর্জাতিকভাবে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, কিন্তু এটিকে আমরা অজুহাত হিসেবে নিতে চাই না। এটি তো আমরা আগে থেকেই জানতাম যে এ সময় এমন হবে। তাই এটি আমাদের জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ। জনগণকে সচেতন হতে হবে। আইন প্রয়োগ করে বাস্তবায়ন করার চেয়ে জনগণের সচেতনতায় এটি সমাধান সহজ। নৈতিক মূল্যবোধ থাকতে হবে। এ আইন বাস্তবায়ন করতে জনগণকে আমাদের সাথে দরকার।"

এ সময়ব তিনি সিন্ডিকেট ভাঙতে সকলের সাহায্য চান। সিন্ডিকেটবাজদের উদ্দেশ্য করে বলেন, "অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে চাইলে আমরা আপনাদেরকে ছাড়ব না। সরকার এখন অনেক জনমুখী। জনগণের সামান্য সমস্যাগুলো আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখি। এই মৌলিক পরিবর্তনটা এসেছে।"

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন,  "ডিমের মত দ্রব্যের দাম বাড়ার পেছনে দায়ী মধ্যস্বত্ব। মধ্যসত্ব বাদ দিয়ে ডজনে ২৫-৩০ টাকা কমানো গেছে। সিন্ডিকেট এর তথ্য গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য পেলে আমরা ব্যাবস্থা নেব।"

"তবে একটা অংশ বাস্তবতাকে অনেকে বুঝতে চায় না। একটা রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হলো তারপর বড় বন্যা হলো। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকার  ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্থ হলো। এতে সাধারণ মানুষ ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্য বাড়া শুরু করলো।"

সম্মেলনে সাবেক অতিরিক্ত সচিব রাশেদুল হক বলেন, "ভোক্তাবধিকার নিশ্চিত করার জন্যে প্রথমত আমাদের মনে রাখতে হবে যারা আইনটা বাস্তবায়ন করছে তারা কতটা ভালো লোক। ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক, সচিব এবং ভোক্তা নিজেও কতটা সচেতন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।বাংলাদেশের জাতীয় বাস্তবতা হলো এখানে আইন প্রয়োগ হয় না। দ্রব্যমূল্যে অতিরিক্ত যোগ, ভেজাল খাবার, প্রতারণা মূলক বিজ্ঞাপনের মতো সমস্যাগুলো রাজনৈতিক, ব্যাবসায়ী, প্রশাসন এই ৩ জনই দায়ী।"

এ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, ভোক্তা অধিকার সংস্থার উপদেষ্টা মোস্তফা রফিকুল ইসলাম ডিউক, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহবায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ এর সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলামসহ প্রমুখ।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version