-->

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি সম্মেলন, ঢাবি ক্যাম্পাসে ভোগান্তি 

ঢাবি প্রতিবেদক
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি সম্মেলন, ঢাবি ক্যাম্পাসে ভোগান্তি 
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের ঢল নেমেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে শুরু করে ক্যান্টিনসহ সর্বত্র এর প্রভাব পড়েছে। সম্মেলনে আগত কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াশরুম ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
 
এদিকে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে বারোটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত হলে যেন শিক্ষার্থী ব্যতীত কেও প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য হলের মেইন গেট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি ৷ 
 
এর আগে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু হয়। এতে যোগ দিতে রাত থেকে জমায়েত হয়েছেন আলেম-ওলামারা। 'দাওয়াত ও তাবলিগ, মাদারেসে কওমিয়া এবং দ্বীনের হেফাজতের লক্ষ্যে' এ সম্মেলন করা হচ্ছে। সমাবেশ শুরু হলে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।
 
এদিকে মঙ্গলবার বেলা ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে সোস্যাল সায়েন্স অনুষদ, কলা অনুষদ, মল চত্বর, ভিসি চত্বরে আগতদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। সম্মেলনে আগত ব্যক্তিরা ক্যাম্পাসের ছেলেদের হল, প্রশাসনিক ভবনসহ সব জায়গার ওয়াশরুম ব্যবহার করছেন তারা। কোনো কিছুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ দেখা যায় নি।
 
নারী শিক্ষার্থীদেরকে বাজে কথা বলে উত্যক্ত করার অভিযোগও উঠেছে সমাবেশে আসা লোকজনদের বিরুদ্ধে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এক নারী শিক্ষার্থী প্রক্টর কছে অভিযোগ নিয়ে এসে বলেন, আমি ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আমাকে বাজে কথা বলে। আমার ক্যাম্পাসে আমিই নিরাপদ নয়। 
 
শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সালেহীনের ফেসবুক পোস্টে একাধিক নারী শিক্ষার্থীর কমেন্টে নারী শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। একটি কমেন্টে এক নারী শিক্ষার্থী বলেন,  "গায়ে ওড়না কোথায়?" "মেয়েরা এখানে কী করে" এরকম বাক্যসহ অন্যান্য বাক্য বলে উত্যক্ত করা হচ্ছে। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে যে কী বললেন? তখন উত্তর দেয়, "আপনাকে বলি নাই। একাডেমিক ভবনে ঢুকে ফিমেল ওয়াশরুমে পর্যন্ত ঢুকে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে। একজন মেয়েকে অলরেডি ব্যাড টাচ করা হয়েছে।"
 
শামসুন নাহার হলের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ❝আজকের এই প্রোগ্রাম এ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোকেয়া ও শামসুন নাহার হলের মেয়েরা। কাল রাত থেকে  সাউন্ড হচ্ছে। আজকেও হচ্ছে। আপনারা প্রোগ্রাম করেন ভালো কথা, শামসুন্নাহার হলের সামনে কি আপনাদের গাড়ি পার্কিং করার জায়গা? মিশুক মনির চত্বরে সব পুরুষ বসে আছে। কলাভবন থেকে যে হলে ফিরবো এই জায়গাটুকু রাখে নাই। আগেও এমন হয়েছে ছাত্রলীগ এমন প্রোগ্রাম করতো তখন মেয়েরা বেশি ভোগান্তিতে পড়তো।❞ 
 
বিশ্ববিদ্যালয়ে যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা
 
এদিকে বেলা বারোটার দিকে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের অবস্থানের কারণে এসব সড়কে যান চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহনের বাসগুলো কার্জন পর্যন্ত এসেছে। এছাড়া কয়েকটি রুটের বাস যাত্রাও বাতিল করা হয়েছে। 
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে শাহবাগ মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আব্দুল বাতেন বলেন, যতক্ষণ প্রোগ্রাম চলবে, ততক্ষণ ভেতরের সড়কগুলোর যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া বাইরের সড়কে যানবাহন চলচাল করছে।
 
শাহবাগ মোড়েও ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারীদের যেতে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বাতেন।
 
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর যা বলছেন
 
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রোগ্রামের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি-কে তারা তাদের লোকসংখ্যা গোপন করেছে। তারা ২০ হাজার বললেও এখন দেখা যাচ্ছে তারা লাখেরও উপরে। আমার কাছে প্রায় ১ শত শিক্ষার্থীর ফোন এসেছে তারা নানা ভাবে হ্যারাজের শিকার হচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে বের করে দেওয়ার মত লোকবল আমাদের নেই। আমরা মাইকিং করতে বলেছি। শাহবাগ থানায় জানিয়েছি, প্রোগ্রাম শেষে যেন টিএসসি সংলগ্ন গেইট দিয়ে কেউ না বের হয়। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি।
 
প্রক্টর বলেন, ❝আমরা লোকবল বাড়াচ্ছি। উপাচার্য দেশে ফিরলেই আমরা ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দিবো যাতে ডিএমপি আমাদের সাথে পরামর্শ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনো প্রোগ্রামের অনুমতি না দেয়। এই মুহুর্তে তাদেরকে বের করে দিতে হলে আমাদেরকে শিক্ষার্থীদের সহায়তা নিতে হবে এতে করে তারা আমাদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। সেটা আমরা করতে পারি না। পাশাপাশি পুলিশ তাদের নিজস্ব নিয়মে কাজ করছে। আজকের এই পরিস্থিতি থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে কাজ করবো।❞

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version