দুই বছরের জন্য ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মীয়মান থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, এ রকম নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি আমরা পেয়েছি। তবে এ সংক্রান্ত চুক্তি হওয়া এখনও বাকি। তখন বিষয়টি পুরোপুরি চূড়ান্ত হবে।
যদিও গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তখনকার চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেছিলেন, জাপান থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী এবং সরকার তাদেরকে এ কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বলতে সাধারণত যাত্রীর বোর্ডিং পাস ইস্যু, ব্যাগেজ আনা-নেওয়া, কার্গোর মালামাল ওঠানো-নামানো, এয়ারক্রাফটের সব ধরনের সার্ভিসকে বোঝায়। থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে শুরু থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছিল বিমান। এখন যাত্রী এবং কার্গো দুটোই সামলানোর দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়াত্ত এ কোম্পানি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে দেশের সব বিমানবন্দরে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। নিজেদের ফ্লাইটের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ৩০-৪২টি এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সেবা দিচ্ছে বিমান। কোম্পানির আয়ের একটি বড় অংশ এই সেবা থেকে আসে। তবে বিভিন্ন সময়ে বিমানবন্দরে লাগেজ থেকে মালামাল চুরি, মালামাল নষ্ট হওয়া, লাগেজ পেতে দেরি হওয়াসহ নানারকম অভিযোগ আছে বিমানের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর চেন্নাইগামী ফ্লাইটের এক যাত্রীর ব্যাগ থেকে ছয় হাজার ৮০০ ইউরো অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে হস্তান্তর করে বিমান।
এসব মিলিয়ে থার্ড টার্মিমালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব জাপানের কোনো কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত গেল বিামনের পক্ষে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে বিমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর জন্য বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করলেন মুখপাত্র বোসরা ইসলাম। তিনি বলেন, যেসব অভিযোগ উঠছে বিমানের বিরুদ্ধে, তার দায় সবটা বিমানের না। এখানে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতাও আছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেখবে। তবে থার্ড টার্মিনালের দায়িত্ব পাওয়ার পর যেসব সমস্যা ছিল বা আছে, সেগুলো দূর করতে বিমান সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। আমরা আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়াচ্ছি। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার বিমানকে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও নির্দিষ্ট সময়সীমা ও পারফরম্যান্সের শর্তও সঙ্গেজুড়ে দেওয়া হয়েছে। গেল ২৪ অক্টোবর বিমানকে এ দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে ইস্যু করা চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন) মো. আলী আজম আল আজাদ বলেছেন, কনসেশন এগ্রিমেন্ট ফর টার্মিনাল-৩ এর আওতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড মূলত থার্ড টার্মিনালের যাত্রী ও কার্গো উভয়ের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস দেবে। এজন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড ও প্রাইভেট সেক্টর পার্টনারের (পিএসপি) মধ্যে একটি সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) সম্পাদিত হবে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, পিপিপি প্রকল্পের আওতায় ‘অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইন্যান্স অব থার্ড টার্মিনাল অ্যাট হযরত শাহজালাল (এইচএসআইএ)’ শীর্ষক এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে গেল ৯ অক্টোবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিমান জানিয়েছিল, বহরকে সমৃদ্ধ করতে ও সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সক্ষমতার উন্নয়নে বিভিন্ন ধাপে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেগুলোর বেশ কিছু বহরে যুক্ত হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশের জিএসই বহরে বর্তমানে ২ হাজারের মত মোটরচালিত ও হস্তচালিত যন্ত্রপাতি রয়েছে। রয়েছে ২৬টি বেল্টলোডার। এছাড়া হাইলোডার, কন্টেইনার প্যালেট ট্রান্সপোর্টার, এয়ার কন্ডিশনিং ভ্যান, প্যাসেঞ্জার স্টেপ, ওয়াটার কার্ট, ফ্লাশ কার্ট, এম্বুলিফটসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান। থার্ড টার্মিনালকে কেন্দ্র করে নতুন যন্ত্রপাতি সংগ্রহের পাশাপাশি জিএসই অপারেটর, মেকানিক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জিএসই বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীদের ব্যাগেজ পাওয়ার সময় কমিয়ে আনার দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বিমান বলেছে, ১৮ থেকে ৫১ মিনিটের মধ্যে ব্যাগেজ ডেলিভারির হার ৮৫ শতাংশের উপরে উন্নীত হয়েছে। এ হার শিগগির শতভাগে উন্নীত করার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর সেবায় জনবল বাড়াতে ১০০ কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে এবং নতুন আরও জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে বিমান জানিয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য