গাজীপুরের শ্রীপুরে জমি দখল করতে এসে তাণ্ডব চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তারা পুলিশের তিন সদস্যসহ ছয়জনকে বেদম মারপিট করেছে। একই সঙ্গে তারা ৩০০ গাছ কেটে ফেলেছে। গত সোমবার দুপুরে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, গাড়ি ভাঙচুর ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করার অভিযোগে এক যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হামলার শিকার আহত পুলিশ সদস্যরা হলেনÑ শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক শামীম আল মামুন, কনস্টেবল পলাশ ও রফিকুল ইসলাম। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত কনস্টেবল রফিকুল ইসলামকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহত অন্যরা হলেন স্মৃতি আক্তার, ওমর ফারুক লিপু ও বাবু। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল। মামলার আসামিরা হলো- কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন প্রধান (৪৫), মিন্টু মিয়া (৩৮), লালু (৩২), আল আমিন (২৫), কামাল হোসেন (৩৫), সাইদুল ইসলাম বেপারী (৫০), শফিকুল ইসলাম বেপারী (৪০), তামিম (৩০), তারেক (২৫) ও শাখাওয়াত শাখা (২৮)। গ্রেপ্তারকৃত শফিকুল ইসলাম বেপারী (৪০) কাওরাইদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি।
হামলায় আহত ও মামলার বাদী শ্রীপুর থানার এসআই শামীম আল মামুন বলেন, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে দুজন পুলিশ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। সেখানে যাওয়ার পরপরই সন্ত্রাসীরা আমার ওপর হামলা চালায়। হামলায় আমার সঙ্গে থাকা দুজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। একজন পুলিশ সদস্যকে ধারালো দা দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। আমরা ঝোপঝাড়ে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করি। আমার ওয়াকিটকি ও মোবাইল নিয়ে নেয় তারা। তিনি আরও জানান, অতিরিক্ত পুলিশ এলে ওয়াকিটকি মোবাইল আর ডায়েরি ফিরিয়ে দেয় এক নারীর মাধ্যমে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছি।
ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দিন জানান, গত সোমবার দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে গলদাপাড়া গ্রামের শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জন ভাড়া করা সন্ত্রাসী তার জমি দখলের চেষ্টা চালায়। তারা তার প্রায় তিন একর জমি থেকে প্রায় ৩০০ গাছ কেটে ফেলে। পরে এক্সকাভেটর দিয়ে জমি থেকে মাটি কেটে পুকুর খনন করছিল। তারা সেখানে গিয়ে বাধা দেওয়ায় স্মৃতি আক্তার, ওমর ফারুক লিপু ও বাবুকে বেদম মারধর করে সন্ত্রাসীরা।
নিজাম উদ্দিন অভিযোগ করেন, মারধরের পর ওই তিনজনকে ফেলে রাখলেও তারা তাদেরকে উদ্ধারের সাহস পাননি। ওই সময় প্রকাশ্য দা, লাঠি ও রড উঁচিয়ে জমিজুড়ে মহড়া দিচ্ছিলো সন্ত্রাসীরা।নিজাম উদ্দিন জানান, ঘটনাটি তিনি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে পুলিশের তিন সদস্য সেখানে যান। জবরদখলকারীরা তাদের ওপরও হামলা চালায়। এদের অনেকেই এলাকার চিহ্নিত ডাকাত দলের সদস্য। প্রত্যক্ষদর্শী শিউলী আক্তার জানান, পুলিশ সদস্যরা সেখানে পৌঁছার পরই হামলার শিকার হন। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা উপ-পরিদর্শকের ওয়্যারলেস সেট ও ডায়েরি ছিনিয়ে নেয়। পরে পুলিশ সদস্যরা আহতদের নিয়ে সেখান থেকে নিরাপদে সরে যান।
অভিযুক্ত শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা নই, নিজাম উদ্দিন আমাদের জমিতে বাধা দেন। শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, গত সোমবার ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরপরই অভিযুক্তরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। মারধর কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পুলিশের তিন সদস্যকে। এসময় সন্ত্রাসীরা পুলিশের ব্যবহৃত একটি সিএনজি ভাঙচুর চালায়। কেড়ে নেয় পুলিশের ওয়াকিটকি মোবাইল ফোন ও ডায়েরি। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন এবং এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য