যাদের দাওয়াতি কার্যক্রম নেই সে সব সাদপন্থিরা জুমা নামাজ শেষে কাকরাইল এলাকা ছেড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দিচ্ছেন। এ ছাড়া, যাদের দাওয়াতি কার্যক্রম রয়েছে, শুধুমাত্র তারা কাকরাইল মারকাজ মসজিদে অবস্থান করছেন ও করবেন। এ ছাড়া, যাওয়ার পথে তাদেরকে আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে কাকরাইল মারকাজ মসজিদে শুরু হয় জুমার নামাজ এবং শেষ হয় সাড়ে ১২টায়।
এরপর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে শুরু হওয়া মোনাজাত শেষে দুপুর ১টার দিকে অ-দাওয়াতী কার্যক্রমে থাকা সাদ অনুসারীরা কাকরাইল এলাকা ছাড়তে থাকেন। সাদপন্থিদের কাকরাইল এলাকায় আসা-যাওয়ার পথে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অনুসারীদের চলতি পথে সেসব নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হচ্ছে— মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের রাস্তা যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু কোনো অবস্থান করা যাবে না। অবস্থান করা যাবে কাকরাইল মসজিদের পূর্ব এবং উত্তর ও দক্ষিণে। রমনা পার্কে কোন সাথী প্রবেশ করবে না; কাকরাইল মসজিদের উত্তর অংশ থেকে হোটেল শেরাটন পর্যন্ত কেউ চলাচল করবে না; টিপটপ মসজিদ থেকে মগবাজার পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে, কিন্তু অবস্থান করা যাবে না; শাহবাগ থেকে টিএসসি এবং পরে দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মাজার পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেউ ঘোরাঘুরি করবে না এবং কোনো প্রয়োজনেই সেখানে যাবে না; মেট্রোরেল দেখার জন্য মেট্রো স্টেশনে কেউ প্রবেশ করবে না; রাস্তার আশপাশে কেউ মানবিক জরুরত (ইস্তিঞ্জা) পুরা করবে না; রাস্তায় কোনো ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। বরং কোনো আবর্জনা দেখলে নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করে দেব; কোন ভাই অসুস্থ হলে মেডিকেল টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করবে; কোনো স্থানে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে শুধু জিম্মাদাররাই তাৎক্ষণিক সমাধানের চেস্টা করবে। অপরাধীকে প্রয়োজনে প্রশাসনের হাতে সোপর্দ করবে। নিজের হাতে অবশ্যই কেউ আইন তুলে নেব না।
কাকরাইল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই সাদপন্থিরা মসজিদ এলাকায় আসতে শুরু করে। আস্তে আস্তে তাদের জমায়েত অনেক বড় হয়। দুপুর ১২টার আগে হাজার হাজার লোকে পরিপূর্ণ হয়ে যায় কাকরাইল এলাকা। প্রধান সড়ক পার হয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ছাড়িয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে জুম্মা আদায় করেন মুসল্লিরা। নিরাপত্তার স্বার্থে কাকরাইল মসজিদের পাশে, রমনা ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যাওয়ার পথটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের ক্ষেত্রে তাবলিগের দুই গ্রুপের মধ্যে মাওলানা যুবায়েরপন্থিরা চার সপ্তাহ ও মাওলানা সাদপন্থিরা দুই সপ্তাহ করে পর্যায়ক্রমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। সেই নিয়ম অনুযায়ী আজ সাদপন্থিরা কাকরাইল মসজিদে অবস্থান নেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী ইজতেমা ময়দানকে দখল করার বিষয়কে কেন্দ্র করে তাবলিগের দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্রতর হচ্ছে। দুই গ্রুপই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। সাদপন্থিরা জানিয়েছেন, আজকে তাদের অবস্থানে যদি কেউ বাধা দেয় ও কোনো ঝামেলা হয়। এর দায়ভার যুবায়েরপন্থিদের নিতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী সাদপন্থিদের আজ কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের কথা থাকলে গেল কয়েকদিন আগে যুবায়েরপন্থিরা সংবাদ সম্মেলন করে জানান, কাকরাইল মসজিদ শুধুমাত্র মূল ধারার তাবলিগের জন্য। যদিও এই কথাকে মাওলানা সাদের অনুসারীরা মনে করছেন জুবায়েরপন্থিরা তাদের মসজিদে অবস্থান করতে বাধা দেবেন।
এই কথা বিবেচনা করে মাওলানা সাদপন্থিরা জুমার নামাজ আদায় করা এবং আগামী দুই সপ্তাহের জন্য কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের জন্য বড় ধরনের জমায়েত করেছেন।
যদিও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাকরাইল মসজিদে নির্ধারিত অবস্থানের সময় শেষ হওয়ায় মাওলানা যুবায়েরের অনুসারীরা সকালে মসজিদের অবস্থান থেকে সরে যায়। দুই গ্রুপের মধ্যে যেন কোনো ধরনের ঝামেলা না হয় সেই কারণে সকাল থেকেই কাকরাইল মসজিদকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য