এক মাস আগে জন্ম নেয় সাজ্জাদ মোল্লার (১৩) যমজ দুই বোন। তার এক সপ্তাহ পর মারা যান মা। রাজনৈতিক মামলায় কারাবন্দি হন তার দিনমজুর বাবা জামাল মিয়া। এতে সদ্যোজাত দুই বোনসহ তিন বোনকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে সাজ্জাদ। বোনদের মুখে দিতে পারছে না খাবার। এমনি এক ‘অমানবিক ঘটনা’ ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামে। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়। তা দেখে হয়তোবা হৃদয় কেপে উঠেছিল কয়েকজন ‘মানবিক আইনজীবী’র, তাই তারা বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতপ্রণোদিত হয়ে সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন ‘ছোট্ট দুই সন্তানের দেখভাল করতে’। হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণকারি আইনজীবীরা হলেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ, ব্যারিস্টার নাজিয়া কবির ও ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ শুভ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান, সাজিয়া আফরিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে আদালতে আদেশের কথা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দুই সন্তানকে জন্ম দিয়ে মারা গেছেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার জামাল মিয়ার স্ত্রী। সদ্যজাত দুই সন্তানকে নিয়ে দুই চোখে যখন আঁধার ঠিক তখনি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন জামাল মিয়া। মাকে হারিয়ে ও বাবা গ্রেপ্তার হওয়ায় সদ্যজাত দুই বোনকে নিয়ে অথৈই সাগরে ছোট দুই ভাই-বোন। এখন তাদের ভবিষ্যত যেন অন্ধকারে। জামাল কোনো রাজনীতি না করলেও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তবে পুলিশ বলছে, স্বেচ্ছাসেক দলের নেতা হত্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে দ্রুত তদন্ত শেষে জামালকে মুক্তি দেওয়ার দাবি পরিবার ও স্থানীয়দের।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামের ১৩ বছরের শিশু ও স্থানীয় এমএমখান উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ মিয়া। বোন ফারিয়ার বয়স সাত বছর। সদ্যজাত দুই বোনের জন্ম হওয়ার ছয় দিনে মাথায় পরপারে পাড়ি দেন মা সাথি বেগম। মাকে হারিয়ে চোখে আঁধার নেমে এলেও বাবাকে নিয়ে ভবিষ্যতের দিন দেখছিলো সাজ্জাদ। তবে বাবা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় সেই ভবিষ্যৎ যেন এখন ফিকে হতে বসেছে।
গত ৮ নভেম্বর রাতে নিজ বাড়ি থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় জামাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর এলাকাবাসী পুলিশের দ্বারস্থ হলেও পারেনি ছাড়াতে। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগরে পাঠানো হয়। এরপর থেকে শিশু সাজ্জাতের চোখে যেন অন্ধকার নেমে আছে। ছোট তিন বোনকে নিয়ে অথৈই সাগরে নিমজ্জিত হয় সাজ্জাত। সদ্যজাত দুই বোনকে দেখাশোনা করছেন নানি ও দাদি। আর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চলছে এখন সাজ্জাদের পরিবার। তবে পরিবারের অভিযোগ, কোনো রাজনীতি না করলেও জামালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনি তাকে ছাড়ানোর জন্যও দাবি করা হয় পঞ্চাশ হাজার টাকা এমন অভিযোগ ভুক্তোভোগী পরিবারের। তবে প্রতিবেশিরা বলেছে, জামাল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তারপরেও তাকে একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এতে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে চার ভাইবোন।
কোটালীপাড়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, জামাল মিয়া ঢাকার তেজগাঁও থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল বলে আমরা জেনেছি। তাই তাকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার দুটি সদ্যজাত সন্তানসহ ছোট চারটি সন্তান রয়েছে বলে জানা ছিল না।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য