-->

সমস্যার পাহাড় উৎরানো সম্ভব?

সিরাজুল ইসলাম
সমস্যার পাহাড় উৎরানো সম্ভব?

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০দিন পূর্ণ হলো আজ শনিবার। এই সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা থাকলেও সরকারের সামনে রয়েছে সমস্যার পাহাড়। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই আরেক দফা বাড়ে দ্রব্যমূল্য। পেঁয়াজের কেজি এখন দেড়শ টাকা। অনেক সবজির কেজি ১০০ টাকার উপরে। বেড়েছে চালের দামও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। খোদ রাজধানীতে দিনে-দুপুরে খুন-ডাকাতি হচ্ছে। যাদের ওপর ভর করে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে; সেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অনেকে এখন সরকারের কিছু কাজের বিরোধিতা করছে। সরকারের নতুন দুই উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন এবং মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর নিয়োগ বাতিল দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এছাড়া সরকারের আরেক উপদেষ্টা ফরিদা আকতারের পদত্যাগ দাবিতেও বিক্ষোভ করেছেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত কয়েকজন। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঘটে যাওয়া গুম-খুনের বিচার করা কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এছাড়া সরকারের ওপর নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতা সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, সংস্কারের জন্য অনন্তকাল সময় দেওয়া সম্ভব না। নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। এই সমস্যাগুলো সরকার কীভাবে উৎরাতে এবং আদৌ উৎরাতে পারবে কি না, তা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা: ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পুলিশের অনুপস্থিতি এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ড জনমনে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে। সিদ্ধিরগঞ্জের ইজিবাইক চালক মোহাম্মদ শামীম ঋণ নিয়ে একটি ইজিবাইক কেনেন। গত সপ্তাহে সেটি ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। রোজগারের একমাত্র অবলম্বনটি হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা। গত তিনমাসে ডজনের বেশি ইজিবাইক ছিনতাই হয়েছে এবং চারজন চালক খুন হয়েছেন বলে দাবি করেন শামীম। সারাদেশে ইজিবাইক চালকদের মধ্যে একটা ছিনতাই আতঙ্ক কাজ করছে। চলতি নভেম্বর মাসের দুই সপ্তাহে রূপগঞ্জ, নরসিংদি, কিশোরগঞ্জ ও ঝিনাইদহ জেলায় চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই করা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন জায়গায় কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি সবচেয়ে আলোচিত। সেখানে বিহারি ক্যাম্পে খুনোখুনি, প্রকাশ্যে ছিনতাই, ডাকাতি, সশস্ত্র মহড়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি উন্নতির জন্য মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযান হয়েছে। জেনেভা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক সন্দেহভাজনক আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু এখনো মানুষের আতঙ্ক কাটেনি বলেই জানান এলাকার একজন বাসিন্দা জেসমিন। তিনি বলেন, এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ। কেমন যেন একটা আতঙ্কে আছি আমরা। আগে রাতে বারোটা একটায় মানুষ যাইতে পারছে বাইরে। এখন তো মানুষ ভয়ের চোটে বাইরায় না। স্কুলে সন্তানকে নিয়মিত আনা নেওয়া করা একজন অভিভাবক বলেন, আমি ২০১০ সালের পর থেকে ঢাকাতে আছি। কখনো আমাদের এলাকার মধ্যে এমন নিউজ পাইনি। গণ্ডগোলের পর থেকে যখন এরকম দেখতেছি তখন আতঙ্কতো থাকবেই। চলন্ত রিকশা থেকে বয়স্ক একজনের কানের দুলটা ছিড়ে নিয়ে গেছে। রক্ত ঝরছে। এটা দেখার পর থেকে আমার বাচ্চাকে আমি বাসা থেকে হিজাব পরায় নিয়ে আসি, স্কুলের কাছে এসে হিজাবটা খুলি। আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তবে পরিচয় প্রকাশ করে মিডিয়ায় বক্তব্য দিতে অনিচ্ছুক তারা।

মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আলী ইফতেখার হাসান দাবি করে বলেন, বিশেষ অভিযানের পর এলাকার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। গত আড়াই মাসে দুটো ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দ্রুততম সময় ডাকাতির ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা রহস্য উদ্ঘাটন করেছি। কিছু আসামি পলাতক আছে। ঘটনা ঘটতে পারে কিন্তু ঘটনা প্রতিকার পাচ্ছে কি না জনগণ সেটাই হলো বিবেচ্য বিষয়। সেই হিসেবে আমরা বলতে পারি আমরা সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করছি চ্যালেঞ্জগুলো। চ্যালেঞ্জ থাকবেই।

এদিকে, রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসায় দিনে দুপুরে ডাকাতি করতে ঢুকে মালামালের সঙ্গে একটি দুধের শিশুকেও নিয়ে চলে গেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে লালবাগ টাওয়ারের পাশের একটি বাসায় একটি বাসায় এ ঘটনার ডাকাতদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক দল। পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মো. জসীমউদ্দীন বলেন, ডাকাতি করতে এসে দুর্বৃত্তরা বাচ্চা নিয়ে গেছে। শিশুটির মা সরকারি চাকরি করেন। তারা আজিমপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। যে বাসায় ডাকাতি হয়েছে তার গৃহকর্ত্রীর এক সহকর্মী ওই পোস্টে লিখেছেন, আজ (গতকাল) শুক্রবার আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার, লালবাগ টাওয়ারের পাশের গলি থেকে আমার অফিস কলিগ ফারজানার বাসায় ডাকাতি হয়েছে। ডাকাত (একজন মহিলা আর দুজন পুরুষ) জিনিসপত্র ও একমাত্র বাচ্চা নিয়ে গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে নিজ বাসায় ছুরিকাঘাতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তার স্ত্রী। নিহত এ কে এম আব্দুর রশিদ (৮২) পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। আড়াইটার দিকে ধানমণ্ডি-১৫ নম্বর এলাকায় পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, ওই বাসার ভাড়াটিয়ারা আব্দুর রশিদকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসেন। রাত পৌনে ৪টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রতিবেশীরা জানান, হামলাকারীরা ডাকাতি করতে ওই বাসায় ঢুকেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া সাইদুর রহমান বাঁধন বলেন, আব্দুর রশিদ ওই বাসার মালিক। তিনি ও তার স্ত্রী যুক্তরাজ্য প্রবাসী। গত সেপ্টেম্বরে তারা দেশে আসেন। রাতে হঠাৎ চিৎকারে ঘুম ভাঙে। পরে তাদের রুমে গিয়ে দেখি আব্দুর রশিদ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন এবং তার স্ত্রী মাথায় পানি ঢালছেন। তাকে তাৎক্ষণিক স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে মারা যান তিনি।

আইন ও শালিস কেন্দ্রের হিসেবে গত তিন মাসে গণপিটুনিতে খুন হয়েছেন অন্তত ৬৮ জন। এসময়, ধর্ষণের ঘটনা ৭৮টি। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুরাও হামলার শিকার হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ে আইন ও শালিস কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, নরসিংদী কারাগার থেকে যে জঙ্গিরা বের হইছিল, সেটার ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিছে। সেখান থেকে যে আর্মসগুলো লুট হইছিল সেগুলো কতটা উদ্ধার হইছে। সেগুলো নিছিল কে? তারপরে রাতারাতি আমরা দেখলাম যে সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘদিন যাবৎ চিহ্নিত সন্ত্রাসী মুক্তি পাইছে কারাগার থেকে। কী গ্রাউন্ডে পাইলো না পাইলো কিছুই জানি না। এইগুলাতো হতাশা আনে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের কতটা নিয়ন্ত্রণ আছে সে প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, আমিতো দেখি হোম মিনিস্টার (উপদেষ্টা) অনেক সময় শুনেও না শোনার ভান করেন। উত্তর দিতে চান না এভয়েড করে যান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে নাই। পুলিশ অসহযোগিতা করতেছে এতে কোনো সন্দেহ নাই। আনসার ননকোওপারেশন করবে এতেও কোনো সন্দেহ নাই। খোঁজ নিয়ে দেখেন সারাদেশের অবস্থা কী? চাঁদাবাজি চলছে সেই আগের মতো। ইজারাদারি প্রথা আমার জায়গায় আপনি আসছেন আপনার জায়গায় আমি আসছি এই চলতেছে। হাট বাজার দখল চলছে।

তিনমাসের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আমরা আশাকরি যে ছয় মাসের মধ্যে একটা টাইমফ্রেমের মধ্যে আগামী তিন মাসের মধ্যে আমরা পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবো। এবং পুলিশ পুরোপুরি ফাংশনাল হবে। সে লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় খোদা বক্সকে নিয়োগ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে প্রায়োরিটি ওয়ান। কারণ এটার সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষের নিরাপত্তা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি বলেন, নতুন করে পুলিশ ও আনসার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর জন নিরাপত্তার স্বার্থে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখার চিন্তা ভাবনাও আছে অন্তর্বর্তী সরকারের। ২২ তারিখ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার আছে। আমরা চাই খুব দ্রুত সেনাবাহিনী তার যে নিয়মিত কার্যক্রম স্বাভাবিক কার্যক্রম সেটাতে ফিরে যাক। সরকার চায় তারা দ্রুত ফিরে যাক। তবে পুলিশ সম্পূর্ণভাবে রিভাইভ করা এবং আমাদের যে অভ্যন্তরীণ যে অন্যান্য বাহিনীগুলো যারা আইনশৃঙ্খলা দেখে থাকে তাদের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি কন্ট্রোলে আসার পরপরই সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে।

দ্রব্যমূল্য: শীতের সবজি বাজারে এলেও দাম এখনও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসেনি। গত সপ্তাহের তুলনায় কয়েকটি সবজির দাম গতকাল কিছুটা কমেছে। বিক্রেতাদের ভাষ্য, বন্যার কারণে উৎপাদন কম। তাই নতুন সবজির দাম সেভাবে কমছে না। কিন্তু এসব সব মানতে নারাজ ক্রেতারা। তারা বলছেন দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের অজুহাত সবসময় প্রস্তুতই থাকে। এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও হাঁসফাঁস কমেনি ক্রেতাদের। গতকাল রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নতুন আলু ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ভারতীয় টমেটো ১০ টাকা কমে ১৩০-১৪০ টাকা, কাঁচা টমেটো ১০০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা, শিম কেজিতে ২০ টাকা কমে ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকা, শসা ৬০-১২০ টাকা, উচ্ছে ও করলা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কাঁকরোল ১২০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০-১০০ টাকা, পটল ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, ধনেপাতার দাম ৫০ টাকা কমে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা করে।

সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে সবজি বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, এখন যেসব সবজির সিজন শেষ সেগুলোর দাম বাড়তি। কারণ এগুলো এখন পাওয়া যাবে না। শীতকালীন সবজির দামও কেন কমছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্যার কারণে উৎপাদন ঠিক মতো হয়নি বলে এখনও সবজি ঠিক মতো ওঠেনি। তাই এখনও দাম কিছুটা বেশি। আরেক বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, সবজির দাম অনেকটাই কমে গেছে, আরও কমবে। নতুন সবজি ঠিকঠাক আসা শুরু করলেই আরও দাম কমে যাবে।

সুযোগ অনেক হলে বাস্তবায়ন সহজ নয়: অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নির্বাচন ব্যবস্থা ও দুর্নীতি প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) মনে করে, এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সহজ হবে না। তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে দেশের বিভিন্ন খাত সংস্কারের এক বিরাট সুযোগ রয়েছে। তবে পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন ও তার কার্যকারিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে। আইসিজি তাদের প্রতিবেদনে এসব চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে।

আইসিজি পরামর্শ দিয়েছে, সরকারের উচিত প্রথমেই জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কিছু দৃশ্যমান সাফল্য অর্জনে মনোযোগী হওয়া। তারা মনে করে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ নতুন এক যুগে প্রবেশ করবে।

গুম-অপহরণের বিচার করা কঠিন: গুম-অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা কঠিন বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গত ১৫ বছরের শাসনকে কয়েক সপ্তাহে মোকাবিলা করা খুব কঠিন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল শুক্রবার গুলশানের এক হোটেলে এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইন ভলান্টিয়ার ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স এর প্রোগ্রামে একথা বলেন তিনি।

আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি থাকলেও আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। গুমের শিকার পরিবারের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে। আমরা সবার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত গুম-বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, এই সরকার সব সরকারের মতো না। আমরা কোনো পলিটিক্যাল ফিগার না। আল্লাহর রহমতে আমরা প্রত্যেকে আমাদের প্রফেশনে প্রতিষ্ঠিত। তাই আগের সরকারের পুনরাবৃত্তির প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, কোনো সরকার কিন্তু গুম বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কমিশন গঠন করেনি। আমাদের সরকার পরিচালনায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই সমালোচনা করবেন।

অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, ন্যায়বিচার সবার অগ্রাধিকার। শুধু গুম বা বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তির পরিবারের জন্য নয়, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার প্রত্যেকের জন্য।

উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ: ছাত্র-জনতার অংশীদারি বিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। উপদেষ্টা পরিষদ নতুন করে পুনর্গঠনের দাবি জানায় তারা। গত সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশে থেকে এ দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সরকারকে উদ্দেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমার চাই, আপনারা অতি দ্রুততম সময়ে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং ছাত্র নাগরিকদের অংশীদারির বাইরে গিয়ে আপনারা যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, আমরা আগেই বলেছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলা চাই। বাংলা থেকে ফ্যাসিবাদকে উচ্ছেদ করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের দোসরদেরও উচ্ছেদ করতে হবে। ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে আমরা আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের নতুন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ সময় কোনোভাবেই জুলাই বিপ্লবের চেতনা বেহাত হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেন তারা। এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে সেখ বশির উদ্দিনকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণ করতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবী ছাত্র-জনতা নামের একটি প্ল্যাটফরম। উপদেষ্টা সেখ বশিরকে বহিষ্কার দাবিতে তার নিজ জেলায় বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীকে বহিষ্কার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীররা। এছাড়া আহতদের কথা না শোনায় বুধবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়কে উপদেষ্টা ফরিদা আকতারের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেন আহতরা।

নির্বাচনি চাপ: ক্ষমতায় থাকতে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা নানা ‘বয়ান’ তৈরি করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, আর কোনো নতুন বয়ান চান না। এখন একমাত্র বয়ান হচ্ছে, গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসতে হবে। গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার গঠিত হতে হবে, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। আপনি যদি নির্বাচিত না হন, তাহলে আপনার তো কোনো দায়বদ্ধতা নেই, জবাবদিহি নেই। হাসিনার কোনো জবাবদিহি ছিল না। কারণ, সে তো নির্বাচিত ছিল না। এর আগে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কাল বিএনপিকে নিষিদ্ধ করলে আমরা কী করব। নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটা নির্দিষ্ট সময় পর আমরা বসে বসে চীনা বাদাম খাব না।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর তিনদিন সরকারবিহীন ছিল দেশ। ৮ আগস্ট ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version