প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সচিব পদায়ন করা হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। একই সঙ্গে এনজিও ব্যুরোতে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সাইদুর রহমান; রেলপথ মন্ত্রণালয়ে মো. ফাহিমুল ইসলামকে এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আকমল হোসেন আজাদকে সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে। আইজিপি করা হয়েছে বাহারুল আলম এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার করা হয়েছে মো. শেখ মো. সাজ্জাদ আলীকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আকমল হোসেন আজাদকে সরিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে। এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমানকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব করা হয়েছে। সেতু বিভাগের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। এর আগে গত ৭ অক্টোবর সেতু বিভাগের সচিব হন ফাহিমুল ইসলাম। তার আগে তিনি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ শাখা থেকে জারি করা অপর এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফকে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) করা হয়েছে। উভয় প্রজ্ঞাপনেই জানানো হয়, জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
পুলিশের ৩৩তম মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হয়েছেন বাহারুল আলম। তিনি এক সময় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান ছিলেন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশে বড় রদবদল হয়। তখন পুলিশের ৩২তম মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে নিয়োগ পান ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট মো. ময়নুল ইসলাম। আর ৩৭তম ডিএমপি কমিশনার হন মো. মাইনুল হাসান।
জানা গেছে, পুলিশপ্রধান হিসেবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া বাহারুল আলম এক সময় এসবি প্রধান ছিলেন। দুই দফা পদোন্নতিবঞ্চিত এই কর্মকর্তা ২০২০ সালে অবসরে যান। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ সদর দপ্তরের শান্তিরক্ষা বিভাগে পুলিশ লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে আফগানিস্তানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সিনিয়র পুলিশ অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেন। এর আগে ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, কসোভো ও সিয়েরা লিওনে দায়িত্ব পালন করেন।
অন্যদিকে সাজ্জাদ আলী বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ১৯৮৪ সালে পুলিশে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি এক সময় ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ছিলেন। তা ছাড়া সাজ্জাদ আলী লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন। চাকরি জীবনে তিনি চট্টগ্রাম ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশ গঠন হলে সেখানেও ডিআইজির দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। মেধাবী, কর্মঠ ও সৎ পুলিশ অফিসার হিসেবে বাহিনীতে সুনাম আছে সাজ্জাদ আলীর। পুলিশের এই কর্মকর্তার বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপায়। গত সোমবার শেখ মো. সাজ্জাদ আলীর চাকরি পুনর্বহাল করে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১-এর মামলা নম্বর ৩৩/২০১৭-এর ৩ সেপ্টেম্বরের রায় অনুযায়ী পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) শেখ মো. সাজ্জাদ আলীকে ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ভূতাপেক্ষভাবে চাকরিতে পুনর্বহাল হিসেবে গণ্য করা হলো। তিনি আদালতের আদেশানুযায়ী সব প্রাপ্য বেতন-ভাতাদি এবং অবসরজনিত আর্থিক সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৯ জন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (সহকারী সচিব) একযোগে বদলি করা হয়েছে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অণুবিভাগের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ শাখা থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বর্ণিত কর্মকর্তাদের নামের পাশে বর্ণিত পদে বদলিপূর্বক নিয়োগ দেওয়া হলো। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
সিনিয়র সহকারী সচিব নিলুফা ইয়াসমিনের সই করা ওই প্রজ্ঞাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সহকারী সচিব) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক খাঁনকে কৃষি মন্ত্রণালয়; ছাবিনা ইয়াছমিনকে পরিকল্পনা বিভাগ; মুহাম্মদ সাইফুল আলম সিদ্দিকীকে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ; মোহাম্মদ ইসমাইলকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ; মাজহারুল ইসলামকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; আবুল হাসেমকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; এ কে ব্রোহী মিঞাকে স্থানীয় সরকার বিভাগ; মোহাম্মদ আবদুল্লা আল মামুন চৌধুরীকে অর্থ বিভাগ এবং মো. মনজুরুল ইসলামকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য