ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকা। ঢাকা কলেজের বাসে সিটি কলেজের হামলার জেরে গতকাল বুধবার বেলা তিনটার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের ৩২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢাকা কলেজে ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়েছে। সিটি কলেজকে ওই এলাকা থেকে স্থানান্তরের দাবি করা হয়েছে। লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেন্ড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সংঘর্ষের জেরে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সকালে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মারধর করেন। পরে দুপুরে ঢাকা কলেজের একটি বাসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবায়ের আরেফিন প্রিয় অভিযোগ করেন, গতকাল আনুমানিক দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলেজ থেকে হেঁটে বাসায় ফেরার সময় ধানমন্ডি ১ নম্বর রোডে ১০-১৫ জন কলেজছাত্র দৌড়ে এসে আমার মাথার পেছন দিকে আঘাত করতে শুরু করে। শার্টের পকেট ছিঁড়ে আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয়। আমি তাদের বলি, ভাই আমি তো কিছুই করিনি, তাহলে কী সমস্যা। তারা বলল, এইটা কলেজে কলেজে মারামারি, তুমি বুঝবে না। ছেলেগুলো কলেজ ড্রেস পরে ছিল; কিন্তু গলায় কোনো আইডি কার্ড ছিল না। সাদা শার্ট-কালো প্যান্ট ও ঘাড়ে ব্যাগ ছিল। আশপাশের মানুষের মন্তব্যে বোঝা গেছে তারা সিটি কলেজের ছাত্র। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় কলেজের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ থেকে নিবৃত করতে ধাওয়া দিয়েছে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী। এসময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক লাঠিপেটা করতেও দেখা যায়। দেখা গেছে, ধাওয়া খেয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভেতরে অবস্থান নিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর চড়াও হন। এ সময় কলেজের ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। পরে ক্যাম্পাসে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রবেশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাইরে চলে আসেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
সংঘর্ষের পর গতকাল বুধবার বিকেল ৪টা থেকে আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাদের কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- শাহরিয়ার (২১), নূর হোসেন (২৪), মো. তুষার (১৮), অনিম (২১), সিজান (১৮), রিফাত (২১), আরাফাত (২১), নিরব (২১), শরিফ (২১), ইয়াকুব (১৮), মেহেদী হাসান (২১), আল ইমরান (১৮), তানভীর (১৮), সুজন (১৮), আরিফ (১৭), মহিউদ্দিন (২৩), তারেক (৩২), তাহসিন (১৮), ফয়সাল (১৮), তরিকুল ইসলাম রাজীব (২৫), মো. আলী (১৭), হাসান (১৮), ইসমাইল (১৮), ফাইয়াদ (১৮), মাহির (১৭), সাকিন (১৮), তানভীর (১৮), তামিম (১৮), তাসফিকুর রহমান (১৭), আশিক (১৮), রাজ (১৮) ও মেহেদী (১৮)।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের মধ্যে সংঘর্ষে আহত অনেক শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন। কেউ কেউ চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলে গেছেন। কয়েকজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঢাকা কলেজে ভাঙচুরের অভিযোগ: রাজধানীর ঢাকা কলেজের স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক আ ক ম রফিকুল ইসলাম। সংঘর্ষের ঘটনায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং একজন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রকৃত দোষীদের বিচারসহ নয় দফা দাবি পূরণে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা কলেজ অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে কলেজ প্রশাসনের পক্ষে এসব দাবি উপস্থাপন করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক। লিখিত বক্তব্যে পরিষদ সম্পাদক আ ক ম রফিকুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক আহত হয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা কলেজের স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি হামলা ও ভাঙচুর করেছে। হামলায় জড়িত প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা যারা এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তাদের পদত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, সিটি কলেজের যেসব শিক্ষক এই নিন্দনীয় ঘটনায় সরাসরি নির্দেশ ও জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সশরীরে ক্যাম্পাস পরিদর্শন করতে হবে। হামলায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
ঢাকা কলেজের এই শিক্ষক বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা কলেজের সাত শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন এবং শত শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাই পরিকল্পিতভাবে ঢাকা কলেজের ১৮৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হামলা করে বর্তমান সরকারতে ব্যর্থ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যাতে সরাসরি সিটি কলেজ ও পুলিশ জড়িত ছিল।
আ ক ম রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব দাবি দাওয়া মেনে নিয়ে কলেজের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কলেজের ভেতরে ঢুকে পড়েন, আমিসহ কলিগরা এগিয়ে যাই। টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ফলে আমাদের কতজন ছাত্র আহত হয়েছেন তা নিশ্চিত নয়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তি চাই। আশা করি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য