রাজধানীর সড়কে দাপিয়ে বেড়ানো প্রতি চারটি বাসের মধ্যে একটি মেয়াদোত্তীর্ণ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বিশ্লেষণে এমন তথ্য মিলেছে। এই অবস্থায় রাজধানীর আত্মপরিচয় খাটো করে রাখা মেয়াদোত্তীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় সব বাস আগামী ছয় মাসের মধ্যেই সড়ক থেকে সরানোর কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুনর্ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে হলে ক্র্যাপ নীতিমালা হওয়া জরুরি। মানসম্পন্ন বাসে যাত্রীসেবা নিশ্চিতে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ তে বাস-মিনিবাসের ইকনমিক লাইফ বা অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণের কথা বলা হয়। এটি কার্যকরে গত বছর বাসের আয়ু ২০ বছর বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। তবে সপ্তাহ না ঘুরতেই অজানা কারণে সেই প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।
বিআরটিএর হিসাব বলছে, ঢাকায় সচল ১১০টি রুটে বাস-মিনিবাস চলে ৪ হাজার ৫৪৬টি। এরমধ্যে ১ হাজার ৫৩টিই বিশ বছরের পুরোনো বা মেয়াদোত্তীর্ণ। অর্থাৎ, প্রতি চারটি বাসের একটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। তবে সহসাই এসব বাসকে ফিটনেসে ফেরানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. মো. হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা প্রায়সময় ফিটনেস নিয়ে অনেক কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে এসব বাসের ফিটনেস নেই। ২০ বছরের পুরোনো এত সংখ্যক বাসকে ফিটনেসের আওতায় আনতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। ইঞ্জিন ওভারোলিং ছাড়াও কাঠামোগত যেসব পরিবর্তন আনতে হবে এতে আয়ের তুলনায় ব্যয় অনেক বেশি দাঁড়াবে। তবে ২০২৫ সালের মে মাস থেকে আইনের কঠোর প্রয়োগের দিকে ঝুঁকছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এর অংশ হিসেবে ২০ বছরের পুরোনো বাস সড়ক থেকে প্রত্যাহার ও ডাম্পিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
বিআরটিএ’র পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, পুরোনো বাস সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে যে প্রজ্ঞাপন হয়েছিল, সেটি আবারও রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, বাস-মিনিবাসের জন্য ২০ বছর এবং ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের ক্ষেত্রে আয়ুষ্কাল ২৫ বছর। যেসব গাড়ির মেয়াদ এই সময় অতিক্রম করবে সেগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে এবং ডাম্পিং স্টেশনে পাঠাতে হবে।
যদিও এক্ষেত্রেও জটিলতা রয়েছে। বিশ্বের বহু দেশে মোটরযান ক্র্যাপ নীতিমালা থাকলেও, বাংলাদেশে নেই। গত বছরের মে মাসে এ বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা করা হলেও, তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এই নীতিমালা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. হুমায়ুন রশিদ খলিফার মতে, অনেক মেয়াদোত্তীর্ণ ও লক্করঝক্কর যানবাহন কিন্তু ইতোমধ্যে সময়ের ব্যবধানে সড়ক থেকে উঠে গেছে। বিআরটিএ’র কাছে এর সঠিক হিসাব কিন্তু নেই। তাদের কাছে এখন পর্যন্ত কত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে সেই তথ্য রয়েছে। কিন্তু কত গাড়ি রাস্তা থেকে উঠে গেছে এ তথ্য বিআরটিএ জানে না। এ জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা অত্যন্ত জরুরি।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য