তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) পরিবেশক বা ডিস্ট্রিবিউটর এবং ডিলারদের তালিকা তৈরি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি জ্বালানি মন্ত্রণালয় এলপিজি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘লোয়াব’-এর কাছে সরবরাহকারী এবং ডিলারদের তালিকা চেয়েছে। কিন্তু এলপিজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি তাদের বিজনেস সিক্রেসি বা বাণিজ্যিক গোপনীয়তা। ফলে এই তালিকা তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না।
এলপিজির সরবরাহকারী বা ডিস্ট্রিবিউটরদের তালিকা কেন করা হচ্ছে- সে বিষয়ে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্যই এ কাজ করা হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে কারা এই বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত তা জানা প্রয়োজন। এজন্য সম্প্রতি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলারসহ সারা দেশের ব্যবসায়ীদের তালিকা চেয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এলপিজি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়ীদের সংগঠন লোয়াবকে তালিকা করার বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লোয়াবের সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, আমাদের সদস্যদের তালিকাটাই তো ব্যবসায়ীদের তালিকা। এই তালিকা তো সরকারের কাছেও আছে। এখন আমরা যতটুকু বুঝলাম- তারা আমাদের ডিস্ট্রিবিউটর এবং ডিলারদের তালিকা চাচ্ছে। প্রত্যেকটা কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর এবং ডিলার তালিকা আলাদা এবং এটা নির্দিষ্ট থাকে না। আজকে আছে, কাল নাও থাকতে পারে। এসবের লাইসেন্স দেয় সরকার। সরকার এই দায়িত্ব আমাদের ঘাড়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেছে। তিনি বলেন, এই তালিকা আমরা কেন দেবো? এটা সরকারের কাজ। সদস্যদের তালিকা চাইলে আবারও দেবো। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটর ও ডিলারদের তালিকা তো কোম্পানির বিজনেস সিক্রেট। এটা কেন আমি জানাবো? তারা (সরকার) নিজেরাই জানে না কারা অপারেট করতেছে। কাদের লাইসেন্স দিয়েছে, কাদের নাই। লাইসেন্স তারা দেয়। হিসাব তো তাদের কাছেই থাকার কথা।
প্রসঙ্গত, প্রতিমাসে এলপিজির দর ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি পাওয়া যায় না। এলপিজি বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো দাম ঘোষণার আগে প্রতিবারই বিইআরসির সঙ্গে আলোচনায় বসে। অর্থাৎ তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেই দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বরাবরই বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এক্ষেত্রে এলপিজির উদ্যোক্তা কোম্পানিগুলো দায় চাপায় সরবরাহকারীদের ওপর। কিন্তু সারা দেশে সরবরাহকারীদের কোনো তালিকা নেই কারও কাছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা বেশ জটিল মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বলা হচ্ছে, তালিকা থাকলে কোথায় কে এবং কেন বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করছে, তা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। তখন এ বিষয়ে ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে। এমন ধারণা থেকেই এলপিজি ব্যবসায়ী বা সরবরাহকারীদের তালিকা করা হচ্ছে। অন্য সরবরাহকারীদের মতোই এলপিজি বাজারজাতকারীদেরও কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এলপিজির উদ্যোক্তারা প্রথমে ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে তাদের সিলিন্ডার বাজারে দেয়। এরপর সেখান থেকে ডিলারদের এলপিজি দেওয়া হয়। সেখান থেকে আবার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে এলপিজি সরবরাহ করা হয়। এই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গ্রামগঞ্জে আবার দুই তিনটি স্তর রয়েছে। সঙ্গত কারণে উদ্যোক্তারা ভোক্তার কাছে সরাসরি এলপিজি বিক্রি না করায় হাতবদলে দাম বেড়ে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে এই দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে। তবে শুধু ডিলার আর সরবরাহকারীদের দায়ী করা হলেও এর বিপরীত অভিযোগও রয়েছে। বিইআরসিতে হাজির হয়েই এলপিজি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এলপিজি উদ্যোক্তারা তাদের কাছে বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করে। এলপিজির উদ্যোক্তা কোম্পানিগুলোও সরকার নির্ধারিত দরে এলপিজি বিক্রি করে না। ফলে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) প্রকৌশলী মো. ফজলে আলম বলেন, তালিকা করা না গেলে কোম্পানিগুলোর এলপিজি নিয়ে কোনো সমস্যা হলে আমরা ডিলারকে না ধরে কোম্পানিকেই দায়ী করবো। প্রত্যেক কোম্পানির কাছেই তালিকা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আমরা ডিস্ট্রিবিউটরদের লাইসেন্স নিতে বলেছি। এতে অনেকে লাইসেন্স নিতে আসছেনও। তিনি বলেন, লাইসেন্স নিলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে একেবারে অদক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া যায় না। পাশাপাশি সরকার রাজস্ব পেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এলপিজি ডিলাররা কে কোন কোম্পানির হয়ে কাজ করছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে মুশকিল। এলপিজি খাতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্যই এই তালিকা করা হচ্ছে। সুতরাং, সবার সহযোগিতা কাম্য।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য