-->
নতুন ইসির শপথ আজ

ভোটাধিকার ফেরানোই চ্যালেঞ্জ

এম বদি-উজ-জামান
ভোটাধিকার ফেরানোই চ্যালেঞ্জ

ভোটাধিকার ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েই দেশের ১৪তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে আজ রোববার শপথ নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন। একই সঙ্গে অপর চার নির্বাচন কমিশনারও শপথ নিচ্ছেন। বেলা দেড়টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সিইসি ও অপর চার কমিশনারকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।

দেশে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ গত ১৫ বছরে অনুষ্ঠিত সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনায় নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ভোট থেকে সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংষদ নির্বাচনে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এমপি হওয়া; ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভর্তি (নিশিরাতের ভোট হিসেবে খ্যাত); ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ডামি প্রার্থী’ দিয়ে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এমন তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ভোটারের আস্থা হারানোর পাশাপাশি দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার। এমনটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও সরকারদলীয় প্রার্থীদের ব্যাপক ভোট কারচুপির কারণে নির্বাচনের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়ছে সবাই। এমন অবস্থায় ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সব সদস্য পদত্যাগ করেন। এমন অবস্থায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। নতুন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ভোটারের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনা। সদ্য গঠিত নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এরই মধ্যে স্বাগত জনিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এ কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে বলেও প্রত্যাশা দলগুলোর নেতাদের। নিয়োগ পেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনও একটি সুন্দর নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, এত মানুষের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা ফেরাতে একটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশন কাজ করছেন। অপরদিকে ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন পৃথকভাবে কাজ করছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এই দুটি কমিটির সুপারিশের আগেই গঠিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন। যদিও এই কমিশন নিয়ে এখন পর্যন্তু তেমন কোনো সমালোচনা ওঠেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের একটি বড় দায়িত্ব ছিল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের কিছু কাজ করা। তবে এ বিষয়ে একটি কমিশন আগে থেকেই কাজ করছে। ফলে নতুন কমিশনকে সেদিকে আর যেতে হচ্ছে না। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে মিলিয়ে সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিতে হবে। এ কাজ করতে যেয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনকে দক্ষতা, দূরদর্শিতা, যোগ্যতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে।

নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ঠিক কি ধরনের সুপারিশ উত্থাপিত হয় এবং তা কিভাবে সরকার বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে উঠতে পারে প্রশ্ন। আর কাক্সিক্ষত সংস্কারের জন্য কতদিন লাগবে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তার কোনো রোডম্যাপ এখনও ঘোষিত হয়নি। এমন অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের সামনে ঠিক কি সংস্কারের কাজ আসে তা দেখার বিষয়। কারণ ইতোমধ্যেই সরকারের একাধিক উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, সংস্কার শেষেই নির্বাচন হবে। আর রাজনৈতিক দল বিশেষ করে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচন দাবি করা হচ্ছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সব সংস্কার করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নয়। এদিকে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের চ্যালেঞ্জ এবং অগ্রাধিকার কী হতে পারে, তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের নামে বিগত তিনটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে চরম তামাশা করা হয়েছে। ভোটের কথা বলা হলেও এসব নির্বাচনে জনগণ ছিল ভোটাধিকার বঞ্চিত। ইসি এবং ভোটের প্রতি রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষের আস্থা উঠে গেছে। সে জন্য ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানোই নতুন কমিশনের মূল কাজ হবে। মানুষকে ভোটে আনাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। সেটি অর্জনে ইসির কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যন্ত কোনো স্তরে কর্তৃত্ববাদী কেউ থাকলে তাদের সরিয়ে প্রশাসন ঢেলে সাজাতে হবে কমিশনকে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রগুলো জানায়, দায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই ভোটার তালিকায় হাত দিতে হবে নতুন কমিশনকে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই করতে হতে পারে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন। এ ছাড়া কমিশনের রুটিন অনেক কাজ থমকে আছে। দায়িত্ব নিয়ে সেগুলোও শেষ করতে হবে নতুন কমিশনকে। সব ঠিকঠাক থাকলে বর্তমান নির্বচান কমিশনের অধীনেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৫ সালের শেষ নাকি ২০২৬ সাল নাকি আরও পরে এই নির্বাচন হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে তার আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করা হতে পারে। জাতীয় সংষদ নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান। তার ভাষ্যমতে সংসদ নির্বাচনের আগেই সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোও এ কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো নতুন কমিশনকে স্বাগত জানালেও দলগুলোর আস্থা অর্জনে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসতে হবে নাসির উদ্দীন কমিশনকে। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ বা মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে দলগুলোর সুপারিশ এবং আস্থা তৈরি হবে। আর সর্বোপরি নির্বাচনের তফশিলের পর পুরো প্রশাসন ঢেলে সাজাতে হবে। এতে ভোট এবং নির্বাচনকালীন মাঠ প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থা তৈরি হবে। নির্বাচনের আগে গঠিত মাঠ প্রশাসন নিয়েও উঠতে পারে বিতর্ক। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলের রেখে যাওয়া দলীয় ও আস্থাভাজন কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্তরে বসে আছেন। তাদের দিয়ে নির্বাচন করা হলে তা কতটা স্বচ্ছ হবে তা নিয়েই উঠতে পারে প্রশ্ন। এসব কারণেই দেশবাসীকে নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও আস্থাভাজন ভোট উপহার দেওয়াই প্রধান চ্যালেঞ্জ।

সংবিধানের ১১৮(১) অুনচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গত ২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে নিয়োগ দেন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব বেগম তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের প্রস্তাবিত তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ দেন।

এর আগে গত ৩১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ এর ধারা-৩ অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। ছয় সদস্যের এই সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম এবং পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম। এই সার্চ কমিটির কাছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল ও পেশাজীবী সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়েও আগ্রহী ব্যক্তিরা নাম প্রস্তাব করেন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ১৭টি দল-জোট নাম প্রস্তাব করেছিল। তাদের প্রস্তাব থেকে সার্চ কমিটি গত ২০ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম সুপারিশ করে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সিইসি হিসেবে নাসির উদ্দীনের নাম প্রস্তাব করা হয় বলে জানা যায়।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের শাসনের পতন হয়। এর এক মাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন ১৩তম সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। একই সঙ্গে তার নেতৃত্বাধীন গোটা কমিশন পদত্যাগ করে। এ অবস্থায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলো।

নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। ১৯৫৩ সালের ১ জুলাই তার জন্ম। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করার পর শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৭৭ সালে। দুই বছর পর ১৯৭৯ সালে বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি। তিনি কর্মজীবনে তথ্য, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরিকল্পনা বিভাগের সদস্য ছিলেন।

এর আগে যারা সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা হলেনÑ কাজী হাবিবুল আউয়াল (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪); কে এম নূরুল হুদা (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২); কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ (৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭); এ টি এম শামসুল হুদা (৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি); বিচারপতি এম এ আজিজ (২৩ মে ২০০৫ থেকে ২১ জানুয়ারি ২০০৭); এম এ সাইদ (২৩ মে ২০০০ থেকে ২২ মে ২০০৫); মোহাম্মদ আবু হেনা (৯ এপ্রিল ১৯৯৬ থেকে ৮ মে ২০০০); বিচারপতি এ কে এম সাদেক (২৭ এপ্রিল ১৯৯৫ থেকে ৬ এপ্রিল ১৯৯৬); বিচারপতি আব্দুর রউফ (২৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ১৮ এপ্রিল ১৯৯৫); বিচারপতি সুলতান হোসেন খান (১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯০); বিচারপতি চৌধুরী এ টি এম মাসউদ (১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০); বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম (৮ জুলাই ১৯৭৭ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫) এবং বিচারপতি মো. ইদ্রিস (৭ জুলাই ১৯৭২ থেকে ৭ জুলাই ১৯৭৭)।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version