‘সুপার সানডে’ ঘোষণা দিয়ে আগের দিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ৩৩ কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে প্রথমে হামলা চালায় পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। অভিযোগ, পুরান ঢাকার ওই চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানটিতে ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীর হয়েছে। এর প্রতিবাদে গত রোববার ৩৩ কলেজের শিক্ষার্থীরা তাণ্ডব চালায় ন্যাশনাল মেডিকেলে। ওই তাণ্ডব ছড়িয়ে পড়ে পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এর পাল্টা হিসেবে ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা দিয়ে পুরান ওই প্রতিষ্ঠান দুটির শিক্ষার্থীরা গতকাল একজোট হয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় যাত্রাবাড়ীর ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা কলেজে। শিক্ষার্থীদের দু’পক্ষের সংঘাতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যাত্রাবাড়ী এলাকা। হামলা ও ভাঙচুরে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে কলেজটি। সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। ভাঙচুর ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। রক্তক্ষয়ী সংর্ষের পর পুরান ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল সরকারি কলেজে আজ মঙ্গলবার একদিনের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হওয়ার খবর সত্য নয় বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ডিএমপি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পুরান ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় ৩ জন নিহতের যে তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, তা সঠিক নয়। এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
ঘোষণা দিয়ে অরাজকতা, ধ্বংস স্তূপে মোল্লা কলেজপূর্বঘোষিত ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচি ঘোষণা কওে গত রোববার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের দিকে অগ্রসর হন। এসময় নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে দু’টি কলেজের শিক্ষার্থীরা পায়ে হেটে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মোল্লা কলেজে হামলা চালায়। এসময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু হামলাকারীদের রুখতে পারেননি তারা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী বিজয় আহমেদ বলেন, ‘গতকাল মাহবুবুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আমরা এর প্রতিশোধ নিতে এসেছি। মোল্লা কলেজে ঢুকে যা পেয়েছি, তা নিয়ে এসেছি।’
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, শুরুতে হামলাকারী শিক্ষার্থীরা কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েনি। বেলা একটার কিছু আগে তাদের ধাওয়া দেয় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তখন সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে দেখা গেছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করা হলে তারা সড়কে লুটিয়ে পড়েন। আর মোল্লা কলেজের সামনের কাঁচসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙচুর করার পর কলেজটির বিভিন্ন জিনিসপত্র সঙ্গে করে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে। অপরাধমূলক কাজ করার পরও হামলাকারীদের চোখে-মুখে যেন প্রশান্তির হাসি।
গতকাল সোমবার বিকালে মোল্লা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর বলেন, ‘ আমাদের এক থেকে ১২তলা পর্যন্ত সব ধ্বংস করে দিয়েছে, আগুন লাগিয়ে দিছে। আমাদের কোটি টাকার উপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমন হামলার আশঙ্কায় গতকাল রাত থেকে আমাদের চেয়ারম্যান প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে, প্রশাসন সহযোগিতা করলে আজ এমন হতো না। হামলার তার কলেজেরই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।’
সংঘর্ষের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোল্লা কলেজের সামনে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ কমিশনার ছালেহউদ্দিন বলেন, ‘২০-২৫ হাজার শিক্ষার্থী যাত্রাবাড়ী মোড় হয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলার জন্য এসেছে। তারা আমাদের ওভারটেক করে চলে এসেছে। আমরা তাদের পেছনে পেছনে এসে বারণের চেষ্টা করেছি। তারা এসে ভাঙচুর করেছে, চড়াও হয়েছে। এর সাথে এলাকার জনগণও এসেছে। বেলা ২টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা ছালেহউদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা যাত্রবাড়ী মোড়ে প্রস্তুত ছিলাম- যাতে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ আক্রান্ত না হয়। আমরা যাত্রাবাড়ী মোড়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ এপিসিসহ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায়। এরপর হাজার হাজার ছাত্র আমাদের ব্যারিকেড ভেঙে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে এসে ভাঙচুর করেছে। আমরা ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিকভাবে রাশ করেছি। আমরা এখানকার ছাত্র প্রতিনিধি, এ অঞ্চলের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, এ কলেজের অথরিটি, শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন সবার সাথে আলোচনা করবো। ঘটনা পরবর্তী আমাদের রেসপন্স টিম আছে। এটা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে যাতে আসে, সে চেষ্টা আমরা অব্যাহত রেখেছি।’
সংঘর্ষে আহত শতাধিকড.মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলার ঘটনায় প্রথমে ৩ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করলেও পরে তা সংশোধন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, কেউ নিহত হয়নি। হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার মোল্লা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর স্বাক্ষরিত সংশোধিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ গভীর শোক ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, ‘আজ আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তথাকথিত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
এ হামলায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের কিছু ছাত্র নামধারী ব্যক্তি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মদদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। হামলাকারীদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী নয়, বরং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত ব্যক্তি।
হামলাকারীরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, সম্পদ ও শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মালামাল লুট করেছে। এ ছাড়া কলেজ ভবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়সহ বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার প্রশাসনের স্থানীয় ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতার আবেদন করলেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আমরা ডক্টর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আহ্বান জানাই - হামলার প্রকৃত দোষীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কলেজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার। লুটকৃত সম্পদ উদ্ধার ও ক্ষতিগ্রস্ত নথি পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহাবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, মারা যাওয়ার খরবটি আমি নিশ্চিত নই। তবে প্রচুর ছেলে কলেজে এসে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রের সঙ্গে পিস্তল দিয়ে গুলি চালায়। এতে অনেকেই হতাহত হয়।
শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে গিয়ে বাধার মুখে যৌথ বাহিনীরাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ থেমে গেলেও বিকালেও বিরাজ করে থমথমে পরিস্থিতি। গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সামনে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা ও উৎসুক জনতা রয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনাবাহিনী, র্যাব, এপিবিএন ও পুলিশের কয়েকশ সদস্য রয়েছেন। তবে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের আশপাশে দেখা যায়নি।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ভেতরে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থী আটকা পড়েছে বলে জানা গেছে। তাদের উদ্ধারে বিকেল সোয়া ৩টায় যৌথবাহিনী মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে কলেজটির শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়ে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, ভেতরে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা আটকে আছে। আমরা তাদের উদ্ধারের জন্য ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আমাদের উপরে চড়াও হয়েছে। পরে আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের আমরা বিষয়টা অবগত করেছি। বিকেল ৪টায় আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসব।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা- ডিএমপি ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন। গতকাল সোমবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এর আগে, তিনি সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কলেজের ভেতরে পরিদর্শন করেন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন।
ডিসি মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনাকে আমরা দুর্ঘটনা বলবো না। একটি অবৈধ সমাবেশের মাধ্যমে ছাত্রবেশে সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায়। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে। আমাদের সীমিত পুলিশ সদস্যরা প্রথমে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় তাদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারা আমাদের প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কলেজের ভেতরে প্রবেশ করেছি। বিভিন্ন তলার বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেছি। এখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। কোটি কোটি টাকার সম্পদ লোপাট হয়েছে, যা খুবই ন্যক্কারজনক। একটি স্বার্থন্বেষী মহল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা মনে করছি।’
৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলাভাঙচুর ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার পুলিশের উপ-পরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় এই মামলা করেন। সোমবার আদালতের সূত্রাপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখারুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গতকাল ২৪ নভেম্বর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের ৭-৮ হাজার শিক্ষার্থী বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রসহ দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে। সরকারি অস্ত্রের (পিস্তল) গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরি, সরকারি ডিউটিতে ব্যবহৃত এপিসি গাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে।
কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করা, জীবননাশের হুমকি দেওয়া এবং ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে। এছাড়া পুলিশের আর্মড পুলিশ কার (এপিসি) ও ডিউটিরত পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে মোট দুই লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শান্ত থাকার আহ্বান সরকারেরসংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। একই সঙ্গে এ ধরনের সংঘাতের পেছনে কোনো ধরনের ইন্ধন পাওয়া গেলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।গতকাল সোমবার রাজধানীতে কয়েকটি কলেজে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এ আহ্বান জানান তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সরকার তার প্রতি নজর রাখছে। আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এ ধরনের সংঘাতের পেছনে কোনো ইন্ধন আছে কি না- সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের অন্য যে কোনো অঙ্গনে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির যে কোনো চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
কঠোর অবস্থানে না যাওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন আসিফগতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আসিফ লিখেছেন, ‘শত চেষ্টার পরও, বসে সমাধান করার আহ্বান জানানোর পরও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে জড়ানো থেকে আটকানো গেল না। এগ্রেসিভনেস (আক্রমণাত্মক মনোভব) ও প্রস্তুতি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও স্ট্রিক্ট অ্যাকশনে (কঠোর অবস্থানে) যায়নি। কোনো প্রকার অ্যাকশনে গেলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তপাত হতো। সকল পক্ষকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। একত্রে দেশ গড়ার সময়ে সংঘর্ষের মতো নিন্দনীয় কাজে জড়ানো দুঃখজনক। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অনেক মিত্রই আজ হঠকারীর ভূমিকায়- মাহফুজ আলম ছাত্র-তরুণদের মধ্যে বিভেদ ও বিরোধ তৈরি, অভ্যুত্থানের শক্তিকে প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলার অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। গতকাল সোমবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন,‘মুক্তিযুদ্ধের পরের দশ-পনেরো বছরের ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে হত্যার ইতিহাস। যারা চায়নি বাংলাদেশ শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াক, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের একে অপরকে দিয়ে হত্যা করিয়েছে। তাদের নিজেদের ভুল ছিল না তা নয়, কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক হত্যা বাংলাদেশকে কীভাবে পিছিয়ে দিল, তা ইতিহাস একদিন বলবে।’
তিনি লেখেন, ‘এবারের আন্দোলন সাহসী ছাত্র তরুণদের নেতৃত্বে জনগণের আন্দোলন। কিন্তু, একটি দল এবং দেশি-বিদেশি সুযোগ সন্ধানী এস্টাবলিশমেন্ট গত ৩ মাসে ছাত্রদের ভিলিফাই করেছে, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন দিয়ে ছাত্রদের মধ্যে বিভেদ ঘটিয়েছে, অন্য একটি তরুণ দলকে লেলিয়ে দিয়েছে ছাত্রদের বিরুদ্ধে, তদুপরি ছাত্রদের সঙ্গে সম্মানজনকভাবে ডিল তো করেইনি, বরং ছাত্রদের তারা শত্রু গণ্য করেছে। তার পরিণতি কি ভালো হচ্ছে, বা হবে?’
মাহফুজ আলম লেখেন, ‘মনে রাখতে হবে, বিদেশি শক্তির কোনো সাধ্য নাই এ দেশের মানুষকে পদানত করার। কিন্তু, গোলামির মানসিকতার কিছু গাদ্দার আর হঠকারীর এ শক্তি আছে। তারা গত তিন মাসে তা দেখাল। ছাত্রদের আজ সংঘাতের মুখে ঠেলে দিয়ে হত্যার মাধ্যমে ছাত্রদের বৈধতার সঙ্কট হলে, যারা যারা লাভবান হবে, তারা সবাই এ উসকানি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার সঙ্গে জড়িত। ধীরে ধীরে আমরা সবই বলব। অথবা, আপনারা চোখ খুললেই দেখতে পাবেন। এদিকে বাম এবং ডান মানসিকতার কতিপয় নেতৃত্ব বা ব্যক্তিগণ অভ্যুত্থানে এবং পরবর্তীতে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন। তাদের উন্মত্ততা, বিপ্লবী জোশ এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশটাকে অস্থির করে রেখেছে।’
তিনি লেখেন, ‘অনেক মিত্রই আজ হঠকারীর ভূমিকায়। আমরা আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করি। আমরা শিখেছি এবং ব্যর্থতা কাটানোর চেষ্টাও করছি। আমরা আরও চেষ্টা করব সবাইকে নিয়ে এগুনোর। কিন্তু, হঠকারিতা এবং ছাত্রদের অন্যায্যতার চেষ্টা এ জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। হঠকারিতা, উসকানি, ছাত্র-তরুণদের মধ্যে বিভেদ ও বিরোধ তৈরি, অভ্যুত্থানের শক্তিকে প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলার অপচেষ্টা- সবই ব্যর্থ করে দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ।মাহফুজ আলম আরও লিখেছেন, আমরা ৫ আগস্টের সকালের মতন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এবারের সাংগঠনিকভাবে গড়ে ওঠা ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী মুক্তির সুযোগ তৈরি করবে, ইনশাআল্লাহ।’
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য