উত্তরাঞ্চলের আলুর রাজধানী রংপুর। গত মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়। এখনো সেখানকার হিমাগারগুলোতে ১৪ লাখ টন আলু মজুত আছে। অন্যদিকে আলুর জন্য বিখ্যাত আরেক জেলা মুন্সীগঞ্জ। সেখানকার ৫৪টি হিমাগারে মজুত আছে ৫০ হাজার টন আলু। এরপরও আলুর দাম আকাশচুম্বী। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আলুর এত দাম আগে কখনো দেখেনি দেশবাসী। দাম কমাতে ভারত থেকেও আলু আমদানি করা হচ্ছে। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এ নিয়ে ভোক্তাদের ক্ষোভের শেষ নেই।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, আলুর রাজধানী বলে খ্যাত রংপুর জেলায় গত মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিল। আলু উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার টন। সেখানে রংপুর জেলায় আলুর চাহিদা মাত্র এক লাখ ২০ হাজার টন। তাহলে ১৪ লাখ টন অতিরিক্ত আলু উৎপাদনের পরও কেন আলুর রাজধানীতে রংপুরেই দাম কমছে না।
আলুর মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্য কাহিনীর অনুসন্ধান করতে রংপুরের ৪০টি হিমাগারের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এখনও বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুত আছে। আলুর পাইকাররা বলছেন, হিমাগারের থাকা বেশির ভাগ আলুর মালিক বড় ব্যবসায়ী, তাদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আলুর বিশাল মজুত করে রাখায় দাম কমছে না। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকাররা বলছেন, হিমাগার থেকে ৬২ থেকে ৬৩ টাকা কেজি দরে আলু কিনছেন তারা।
ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে আসা আলুর পাইকার সোহরাব হোসেন জানান, হিমাগারে আলু কিনছেন ৬৩ টাকা কেজি দরে। এই আলু ঢাকায় নিয়ে যেতে যেতে ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা পড়বে। ঢাকার আড়তে নিয়ে বিক্রি করছেন ৭০ টাকা কেজি দরে। আর সেই আলু ভোক্তারা কিনছেন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। ফলে আলুর দাম কোনোভাবেই কমছে না। এর পেছনে দায়ী সিন্ডিকেট।
ঢাকা থেকে আসা আলুর পাইকার রংপুরের নবদিগঞ্জে এসেছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির মালিকাধীন মুনশি হিমাগারে। ওই হিমাগারে গিয়ে দেখা গেছে, এখনও হাজার হাজার বস্তা আলু আছে। সেখানে কর্মরত এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, মন্ত্রী টিপু মুনশিরই আলু আছে চার হাজার বস্তা। আলু মৌসুমের শুরুতেই তার কেনা পড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। সেই আলু এখন তার লোকজন বিক্রি করছেন ৬২ থেকে ৬৩ টাকা কেজি দরে। যেহেতু নতুন আলু আসতে আরও সময় লাগবে সে কারণে ৮০ টাকা কেজি বাজার দর না হওয়া পর্যন্ত আল আলু বিক্রি করবেন না বলে তার কর্মকর্তা আদেশ দিয়েছেন।
টিপু মুনশির মতো রংপুরে আরও কমপক্ষে ২০-২৫ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ও দুই শিল্প প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ টন আলু হিমাগারে পড়ে রয়েছে। এর মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় আলুর দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা থেকে আসা আলুর আরেক পাইকার সোলায়মান শেখ বলেন, রংপুরের ৪০টি হিমাগার রয়েছে, প্রতিটিতে বিপুল পরিমাণ আলু মজুত আছে। কিন্তু এসব আলুর মালিকরা সিন্ডিকেট করে অল্প অল্প করে হিমাগার থেকে বের করে বিক্রি করছেন। ৬৩ থেকে ৬৪ টাকা দরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আলু কিনেছি। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। ফলে পড়েছি বিপদে। এখন দাম বৃদ্ধির কারণে ঢাকা নিয়ে গিয়ে বিক্রি করাতে পোষাচ্ছে না। নতুন আলু আসতে আরও সময় লাগবে। ফলে দাম আরও বাড়বে। অপরদিকে কাউনিয়ার মীরবাগ এলাকায় ভরসা হিমাগারে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ব্র্যাকের আলুর বীজ আলু ছাড়াও বিপুল পরিমাণ খাওয়ার আলু রয়েছে। কিন্তু মালিকরা আলু বের করছেন না। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এলেও ফিরে যাচ্ছেন বলে জানালেন ওই হিমাগারের কর্মকর্তা মাহফুজ আহামেদ।
তিনি জানান, গত বছরও এই সময় আলু কেজি রংপুরে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা ছিল। এবার আলুর বাম্পার ফলনের পরও দাম বৃদ্ধির কোনও কারণ নেই। এবার কেন পাইকারিতে ৬০ ও খুচরায় ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা? সে জন্য বড় বড় আলু ব্যবসায়ী ও তাদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করলেন তিনি। এদিকে দেশের অন্যতম সবজি মার্কেট সিটি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগার থেকে ৬২ টাকা ও এর বেশি দরে আলু কিনে আনতে হচ্ছে। ফলে ৬৫ টাকার নিচে আলু বিক্রি করা যাচ্ছে না।
আলু ব্যবসায়ী মোস্তফা দাবি করেন, প্রাণ কোম্পানি একাই পাঁচ লাখ বস্তা আলু কিনে রেখেছে। তারা চিপসসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বানানোর পাশাপাশি এবার তারাও আলু স্টক করে রেখেছেন। অপর এক আলু ব্যবসায়ী জহুরুল হক বলেন, আরও দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবার মৌসুমের শুরুতে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে।
তবে আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন শীতের সবজি বাজারে উঠেছে, দামও কিছুটা কম। ফলে আলু বিক্রিও কমেছে।
অন্যদিকে সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, আলুর যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর আলু কেনাই সম্ভব হচ্ছে না।
আলু কিনতে আসা সরকারি চাকরিজীবী নুরুল আমিন, কাঁচামাল ব্যবসায়ী সাহেব আলীসহ অনেকেই জানালেন, আলুসহ সব জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও বেতন বাড়েনি। ফলে তারা আগে পাঁচ কেজি কিনলেও এখন দুই আড়াই কেজি কিনছেন। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলছেন, আলুর বাম্পার ফলন হওয়া রংপুরের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ১৪ লাখ টন আলু উৎপাদন হওয়ার পরও বাজারে দাম কমা উচিত।
সার্বিক বিষয়ে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এবার রংপুরে রেকর্ড পরিমাণ আলুর ফলন হয়েছে। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার নেপথ্যে চিহ্নিত সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে এবং হিমাগার থেকে আলু বের করার সময় বেঁধে দিলেই আলুর কেজি ৫০ টাকায় নেমে আসবে।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুরের কার্যালয়ে গেলে দুই কর্মকর্তা অভিযানে বাইরে আছেন বলে জানালেন দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। তিনি বললেন, কয়েকদিন আগে ময়নাকুঠি এলাকায় একটি হিমাগারে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তা বললেন, রংপুরের ৪০টি হিমাগারের মালিককে যদি আলু বের করার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হলেই আলুর দাম কমে যাবে। এ জন্য প্রয়োজন জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর ভোক্তা অধিকারের সমন্বিত উদ্যোগ।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের ৫৪টি হিমাগারে এখনও ৫০ হাজার টন আলু মজুত আছে। তবু কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। হিমাগার থেকেই ৫৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তারা। যা খুচরা বাজারে ভোক্তাদের কিনতে হয় ৭৫ টাকায়। এতে বাজারে গিয়ে আলু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।
ক্রেতারা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে বেশি দামে আলু বিক্রি করছেন। হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত আলু মজুত রেখে কম কম বাজারে ছেড়ে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাদের লাগাম টেনে ধরতে জেলা প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। দাম নিয়ন্ত্রণে খুচরা বাজার মনিটরিংয়ের আগে হিমাগারগুলোতে অভিযান চালাতে হবে। গত বছর এই সময়ের চেয়ে এখন কেজিতে ৩০ টাকা বেশি দিয়ে ৭৫ টাকায় আলু কিনে খেতে হচ্ছে তাদের।
৭৫ টাকায় আলু কিনতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানালেন মুন্সীগঞ্জ বাজারে আলু কিনতে আসা উত্তর ইসলামপুরের মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেও ৬৫ টাকায় কিনেছি। সপ্তাহের ব্যবধানে ৭৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যদি এক কেজি আলু কিনতে হয় ৭৫ টাকায়, তাহলে অন্য সবজি কিনবো কী দিয়ে। আমাদের বাজার করে খেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এই কথা কাকে বলবো। একই কষ্টের কথা জানিয়ে বাগমামুদালী পাড়ার সেন্টু সরকার বলেন, প্রতিদিনের খাবারে সবজি হলো আলু। বিশেষ করে আমাদের বিক্রমপুরের মানুষের আলু ছাড়া চলে না। এবার বাজারে যে দাম, আগে কখনও দেখিনি। ৭৫ টাকায় কিনতে হয়। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, তারা যেন কঠোরভাবে হিমাগারগুলো তদারকি করে। কারণ হিমাগারগুলোতে আলু মজুত রেখে সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
হিমাগারে রসিদ ছাড়াই আলু বিক্রি: মুন্সীগঞ্জ বাজারের আলু ব্যবসায়ী মো. স্বপন মিয়াজি বলেন, খুচরায় ৭৫ টাকায় আলু বিক্রি করছি। ৬৫ টাকায় কিনতে হয় আমাদের। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ আছে। প্রতিদিন এক-দুই টাকা করে দাম বেড়েই চলছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের বলছেন, হিমাগারে আলু নেই। সেজন্য দাম বেশি। এখন বাজারে নতুন আলু এলেও দাম কমেনি। হিমাগারে আলু কিনতে গেলে পাইকাররা রসিদ দেন না। কারণ বেশি টাকা নেন তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিরকাদিমের রিকাবিবাজার পাইকারি আলু বাজারের অভি বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর হিমাগারে আলুর মজুত কম হওয়ায় দাম বেশি। কয়েকটি হিমাগার ঘুরে ১২ বস্তা আলু পেয়েছি, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ৫৭ টাকায় হিমাগার থেকে কিনতে হয়েছে। আবার হিমাগার থেকে পাইকাররা রশিদ দেননি। কারণ এতে তাদের দুর্নীতি ধরা পড়ে যাবে। আমরা ৬৫ টাকা করে বিক্রি করছি। খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে ৭৫ টাকায় বিক্রি করেন।
সংকটের অজুহাত মজুতকারীদের: মুক্তারপুর রিয়ারভিউ কোল্ডস্টোরেজের আলু ব্যবসায়ী আব্দুল আজিম বলেন, এখন আলুর মজুত কম। চাহিদার ওপর নির্ভর করে দাম বাড়ে এবং কমে। এখন প্রত্যেকটি হিমাগারে মজুত প্রায় শেষের দিকে। এজন্য দাম বেশি। মুন্সীগঞ্জের আলু প্রায় সব জেলায় যাচ্ছে। নতুন আলু বাজারে এলেও দাম কমেনি।
মৌসুমের শেষে এসে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অজুহাত দেখালেন পশ্চিম মুক্তারপুরের দেওয়ান কোল্ডস্টোরেজে আলু মজুত রাখা পাইকারি ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন ব্যাপারী। তিনি বলেন, মূলত আলুর দাম বেড়েছে এবারের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে। দুবার আলু রোপণ করতে হয়েছিল। প্রথমে যে বীজ রোপণ করা হয়েছিল, সেগুলো পচে গিয়েছিল। দ্বিতীয়বার রোপণের সময় পুরোনো বীজ রোপণ করেন কৃষকরা। এতে ফলন কম হয়েছিল। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার হিমাগারে মজুত কম। এজন্য শেষ সময়ে এসে দাম বেড়েছে। একই কোল্ড স্টোরেজে আলু মজুত রাখা ইব্রাহিম দেওয়ান বলেন, দাম বাড়ার কারণ চাহিদার তুলনায় জোগান কম। হিমাগার থেকে আমরা ৫৬-৫৭ টাকায় বিক্রি করছি। এই দামের পাকা রশিদ দিচ্ছি আমরা।
প্রায় একই অজুহাত দেখালেন মুক্তারপুরের বিক্রমপুর মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আব্দুল রশিদ। তিনি বলেন, প্রতি বছর আলুর দাম বাড়ছে। এটি এখন নিত্যসবজির মতো। এ বছর ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি। প্রতি বছর আমাদের হিমাগারে এক লাখ ২০ হাজার বস্তা আলু মজুত রাখা হয়। এবার সেখানে ৬০ হাজার বস্তা মজুত ছিল। বর্তমানে আমাদের হিমাগারে মজুত প্রায় শেষের দিকে।
কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না ভোক্তা অধিদপ্তর: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মুন্সীগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ বলেন, হিমাগার থেকে রসিদ না দিয়ে আলু বিক্রি করা কৃষি বিপণন আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী অপরাধ। আমরা বাজার ও হিমাগারগুলোতে অভিযান চালাচ্ছি। ব্যবসায়ীরা যদি আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে বলতেন, কোন হিমাগার থেকে রসিদ দেওয়া হচ্ছে না তখন ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হতো। আমরা যখন অভিযানে যাই তখন ব্যবসায়ীরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন না কিংবা কোনও ব্যবসায়ীর নামও বলতে চান না। যদি অন্তত তারা জানাতেন তাহলে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিতাম। তারপরও নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। হিমাগারগুলো মনিটরিং করছি। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে দাম কমে আসবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, মুন্সীগঞ্জের ৫৪টি হিমাগারে আলু মজুত রাখা হয়েছে। এখনও হিমাগারে ৫০ হাজার টন মজুত আছে। তবু কারসাজি করে বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
কৃষি বিপণন কর্মকর্তাও বলছেন সংকটের কথা: কৃষি বিভাগের কাছে এমন তথ্য থাকা সত্ত্বেও কোল্ডস্টোরেজের মজুতকারীদের মতো একই কথা বলছে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয়। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আলু উৎপাদন কম হয়েছে বলে জানালেন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. সামির হোসাইন সিয়াম। তিনি বলেন, এ বছর দাম বাড়ার একটি কারণ হলো ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আলু দু’বার রোপণ করতে হয়েছিল। এজন্য খরচ কিছুটা বেড়েছে। আবার ফলনও কম হয়েছে। আরেকটি কারণ হিমাগারে মজুত কম। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি।
মজুতকারীরা দাম বেশি নিলেও রসিদ দিচ্ছেন না জানিয়ে এই কৃষি বিপণন কর্মকর্তা বলেন, হিমাগার থেকে ব্যবসায়ীরা আড়তগুলোতে আলু পাঠান ঠিকই কিন্তু রসিদ দিচ্ছেন না। এজন্য তদারকি করতে সমস্যা হয়ে যায়। তারা কিনে এক দামে আর আমাদের বলে আরেক দাম। দুই পক্ষের মধ্যেই কারসাজি আছে।
কৃষি অধিদপ্তর বলছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন: কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ও মজুতকারীরা উৎপাদন কমের কথা বললেও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) শান্তনা রাণী বলেন, এ বছর ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। তা থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি।
মুন্সীগঞ্জের ৫৪টি হিমাগারে আলু মজুত রাখা হয়েছে জানিয়ে শান্তনা রাণী বলেন, এখনও হিমাগারে প্রায় ৫০ হাজার টন আলু মজুত আছে। যে পরিমাণ মজুত আছে, তাতে সংকট হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কী কারণে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করছেন, তা আমার জানা নেই।
শান্তনা রাণী বলেন, কৃষকরা আলু রোপণের কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে আগাম আলু বাজারে এসেছে। উত্তরবঙ্গের আলু বাজারে আসতে আরও দুই সপ্তাহ লাগবে। তখন দাম এমনিতেই কমে যাবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য