-->

কপিরাইট অফিসে দুর্নীতির হোতা ফযলুল

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
কপিরাইট অফিসে দুর্নীতির হোতা ফযলুল

কপিরাইট অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। তবে ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছেন ডেপুটি রেজিস্টার আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক। তার আইডি নাম্বার ৭৮৯৮, ১৮ ব্যাচে ছিলেন পরিসংখ্যান ক্যাডারে। ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে প্রশাসন ক্যাডারে যুক্ত হন। সেখান থেকে যুগ্ম-সচিব পদ মর্যাদায় কাজ করছেন কপিরাইট অফিসে।

সৃজনশীল ব্যক্তি তার মেধা প্রয়োগ করে যা কিছু সৃজন করেন, তাই মেধাসম্পদ। মেধাসম্পদের মালিকানা নিয়ে নিবন্ধন করে কপিরাইট অফিস। কপিরাইট আইন, ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) ও কপিরাইট বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী সৃজনশীল মেধাস্বত্বের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। একজন প্রযোজক তার মেধাস্বত্ব নিয়ে কপিরাইট অফিসে আবেদন করেন। তাকে সনদ দেওয়ার আগেই তার মেধাস্বত্ব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চলে যাচ্ছে। ভুয়া সনদ দিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে বাণিজ্যিকভাবে প্রচার হচ্ছে। এমন ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন প্রযোজক ও পরিচালকগণ।

কপিরাইট অফিস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ করেছেন প্রযোজকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রযোজকরা বলছেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ নিয়ে একজনের কপিরাইট সনদ আরেকজনকে দিচ্ছে। সম্প্রতি আবদুল গাফফার ও শাহজাহান নামে দুই কর্মকর্তার নামে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন একজন প্রযোজক। অভিযুক্ত ওই দু’জনের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা রাজি হননি।

ছবির প্রযোজক একজন, কিন্তু তার ছবি ডিজিটাল প্লাটফরমে দিয়ে টাকা কামাচ্ছে আরেকজন। অথচ প্রযোজক বিষয়টি জানেনই না। সালমান শাহ শাবনূর অভিনীত জনপ্রিয় ছবি বিক্ষোভ, এই মন তোমাকে দিলাম, ঝড়, কাজী হায়াতের ইতিহাস ছবিসহ শত শত ছবির ক্ষেত্রে ঘটেছে একই ঘটনা। খোঁজ নিয়ে যানা গেল, এই সিনেমাগুলোর কপিরাইট নিয়ে নিয়েছেন ডিজিটাল প্লাটফর্মের অসাধু প্রতারকরা।

প্রযোজক শেখ দিদারুল ইসলাম দিদার বলেন, বছরের পর বছর একই ঘটনা ঘটছে। তারা ইউটিউবসহ অন্যান্য মাধ্যমে ভিডিও দিয়ে লাখ লাক টাকা ইনকাম করছে। এমন ঘটনায় আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন পরিচালক ও প্রযোজকরা। প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম জানান, কপিরাইট নিবন্ধন অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত।

কপিরাইট অফিসের দু’জন কর্মচারীর নামে বহু বছর ধরেই এমন অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কপিরাইট অফিসের এক কর্মচারী জানান, জাল সনদসহ নানা ধরনের অবৈধ কাজের সাথে জড়িত কপিরাইট নিবন্ধন অফিসের দুই কর্মচারী শাহাজাহান ও গাফফার। অভিযুক্ত প্রধান সহকারী শাহজাহান ভূঁইয়ার নামে শুধু সনদ বাণিজ্য নয়, কপিরাইট অফিসের যন্ত্রাংশ ক্রয় করার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। ২০২১ সালে ১০টি কম্পিউটার মাউসের দাম ৬০ হাজার টাকা দেখানোর পর বিষয়টি নজরে আসে কপিরাইট অফিসের।

বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের সাবেক রেজিস্টার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, মাউসগুলোর দাম হওয়া উচিত ছিল সাত হাজার ৮০০ টাকা। যখন আমি ভুলটা দেখতে পারলাম তখন আমি চিঠি দিয়ে টাকা ফেরত দিতে বলি। আরেক অভিযুক্ত আব্দুল গাফফার দৈনিক ১২০ টাকা বেতনে পিওনের পদে যোগ দেন ২০১১ সালে। কম্পিউটার অপারেটরের পদে স্থায়ী হওয়ার পর কপাল খুলে যায় তার। নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য এবং অফিসে আসা সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে কয়েক বছরের ব্যবধানে নিজের নামে সাভারে বাড়ি ও সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। আর তাদের নেপথ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী নেতা ডেপুটি রেজিস্টার আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক।

৯০ এর দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল লতিফ হলের সভাপতি ছিলেন। সেই পরিচয় দিয়ে পরিসংখ্যান ক্যাডার থেকে প্রশাসন ক্যাডারে নিজেকে যুক্ত করেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নিজের আওয়ামী লীগ পরিচয় মুছে ফেলেন, ফেসবুক লকড করে পুরোনো সব ছবি ও কার্যক্রম মুছে ফেলেন। বর্তমানে নিজেকে বিএনপিপন্থী আমলা হিসেবে জাহির করেন।

নিজের জন্য রেজিস্টার পদ নিশ্চিত করতে কপিরাইট রেজিস্টার মোঃ দাউদ মিয়াকে সরিয়ে ওএসডি করা সাবেক সচিব খলিল আহমেদকে কপিরাইট অফিসে ডেপুটি রেজিস্টার হিসেবে এরই মধ্যে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। গতকাল মোঃ দাউদ মিয়াকে কপিরাইটের রেজিস্টার পদ থেকে সরিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে যুক্ত করা হয়েছে। কপিরাইট অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ডেপুটি রেজিস্টার আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক যদি রেজিস্টারের দায়িত্ব পেয়েই যান তাহলে কপিরাইট অফিসকে কখনই দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব নয়। তখন এটি দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হবে এতে কোন সন্দেহ নাই। এ বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিষয়টি জানতে সাবেক কপিরাইট রেজিস্টার মো. দাউদ মিয়া এর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। অভিযুক্ত অপর দুইজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। সরেজমিনে কপিরাইট অফিসে গেলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version