টগবগে যৌবন। বসবাসও নিষিদ্ধও পল্লীতে, যা হওয়ার তা-ই হলো। পড়লেন যৌনকর্মীর ‘প্রেমে’। সেই সম্পর্কই এখন জীবন ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইমন শেখের। সম্পর্ক ভেঙে ফেলায় তাকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের এই শিক্ষার্থী। এমনকি পুলিশ দিয়ে তার আইফোনটিও হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন ওই নারী।
ইমন শেখ জানান, সাংসারিক কারণে তিনি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে থাকেন। তার বাড়িও এর পাশেই। কয়েক মাস আগে তিনি তপুর বাড়ির ভাড়াটিয়া যৌনকর্মী মুন্নির প্রেমে পড়েন। কিছুদিন আগে তিনি আর সম্পর্কে থাকতে চান না বলে তাকে জানিয়ে দেন। এতে ভীষণ ক্ষিপ্ত হন মুন্নি। তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ নিয়ে সেখানকার বাড়িওয়ালা কনক মন্ডল বিচার বসান। সেখানে কোনোও দাবি নেই বলে জানান মুন্নি। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। কিন্তু কিছু লোকের উসকানিতে মুন্নি তার মোবাইল ফোনটি নিজের বলে দাবি করেন। শুধু দাবি নয়, তিনি ফোনটি উদ্ধারে গোয়ালন্দ থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত সোমবার বিকেলে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর গেটে পুলিশ বক্সে তাকে ডেকে নেন গোয়ালন্দ থানার এসআই রুস্তম আলী। সেখানে এসআই রুস্তম আলী ফোনটি মুন্নিকে দিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। ৫ তারিখের মধ্যে (আজ ৫ ডিসেম্বর) ফোনটি দিয়ে দিতে তাকে শাসান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন। এর আগে মুন্নি যৌনপল্লীতে হৈ চৈ করে বলেন, আমি ওসি স্যারকে ১০ হাজার টাকা দিব। তোকে (ইমন) জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব। মোবাইল ফোনটি নিজের টাকায় কিনেছেন দাবি করে ইমন বলেন, এ সংক্রান্ত কাগজপত্র তার কাছে আছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মুন্নি বলেন, ইমনের সঙ্গে আমার দুই বছর সম্পর্ক ছিল। আমরা স্বামী-স্ত্রীর মতো থেকেছি। প্রতিদিন তাকে ২০০-৩০০ টাকা হাত খরচ দিয়েছি। এর বাইরেও তিনি মাঝেমধ্যে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আমি লোন তুলে তাকে আইফোন কিনে দিয়েছি এক লাখ টাকা দিয়ে। আমি এখনও সেই টাকার কিস্তি টানছি। এ সংক্রান্ত বই আমার কাছে আছে। ও (ইমন) বেটা চান্স পেয়ে আমাকে ছেড়ে গেছে। যেহেতু আমাকে ছেড়ে গেছে, সেহেতু আমার ফোন আমাকে দিয়ে দেবে- এটাই আমার দাবি। আর না দিলে ফোনের টাকা ফেরত দিতে হবে। আমি ছাড়ব না। ও আমার সাথে প্রতারণা করেছে। পুলিশ দিয়ে হয়রানি করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি রাগের মাথায় বলেছি ওসি স্যারকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ওকে জেলের ভাত খাওয়াব। কিন্তু আমি কাউকে টাকা দিইনি। আসলে ওকে আমি অনেক ভালোবাসি, বাসব। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বিচারের সময় আমার বাড়িওয়ালা ছিলেন না। তিনি তো আমার অভিভাবক। একজন বললেই কি আমার টাকা আমি চাইব না?
এসআই রুস্তম আলী বলেন, যৌনকর্মী মুন্নি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। সেটা আমার কাছে আছে। পুলিশ বক্সে ইমন শেখকে ডেকে আনার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ইমন স্বীকার করেছেন ফোনটি মুন্নির টাকায় কেনা। এ কারণে তাকে সেটা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। সে রাজিও হয়েছে। পুলিশ কোনো জিনিস উদ্ধার না করে কাউকে ফেরত দেওয়ানোর দায়িত্ব নিতে পারে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ। ওসি স্যার বলেছেন, কেউ তথ্য চাইলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবা। এরপর তিনি থানায় গিয়ে তথ্য আনতে বলেন। এক পর্যায়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য