জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ লক্ষ্যে তিনি গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। আজ বুধবার প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও সংলাপে বসবেন তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সবার সঙ্গে সংলাপের আহ্বান করেছেন। তাদের সঙ্গে তিনি বসবেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য জাতীয় ঐক্য। তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমের এই প্রয়াসের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানোর একটা প্রয়াস আমরা দেখছি এবং অনেকাংশে ভারতীয় গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে এই কাজটি করছে। এটার জন্য জাতীয়ভাবে ঐক্য তৈরি করে আমাদেরকে বলতে হবে তোমরা দেখো আমাদের এখানে প্রকৃতপক্ষে কী হচ্ছে। অপপ্রচার বন্ধে জাতীয় ঐক্যটা খুব জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, অপতথ্য ছড়ানোর সঙ্গে দেশের ইমেজের প্রশ্ন জড়িত। তাই আমাদের পত্রিকাগুলোকে বলবো আপনারা এই ভয়াবহ তথ্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরুন।
ভারতীয় গণমাধ্যমে অপতথ্য বন্ধে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেদেশের সরকারের নিকট সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, আগস্টের শেষের দিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়, সেখানে অধ্যাপক ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করুন, তারা বাংলাদেশে এসে দেখুক প্রকৃত ঘটনা কী বা সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে কি না বা আদৌ এমন ঘটনা ঘটছে কি না। তিনি বলেন, ভারতীয় সাংবাদিকরা নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে তথ্য নিচ্ছে, সেখান থেকে তারা ভুল তথ্য পাচ্ছে।
শফিকুল আলম বলেন, তারা তথ্য পাচ্ছে তাদের লাইকিংয়ে (পছন্দে) যারা পড়ছেন, সেটা হতে তথ্য নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে নাম ছাড়া তথ্য নিচ্ছেন। আবার তারা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ থেকেও তথ্য নিচ্ছেন। নেত্র নিউজ দেখিয়েছে তাদের তথ্যে বড় রকমের গলদ আছে। ৯ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তার কোনোটি সাম্প্রদায়িক কারণে হয়নি। মৃত্যুগুলোর পেছনে ছিল রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত কারণ। সংগঠনটি নেত্র নিউজের প্রতিবেদনের নিয়ে কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। তারা এটাও বলেনি আমরা ঘটনাগুলো পুনরায় দেখি।
তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সকল গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনারা আসুন দেখে যান বাংলাদেশে কী ঘটছে।’ বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য চালানোর ফলাফল হলো আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এটার জন্য দায় চাপাবো ভারতীয় গণমাধ্যমকে। এ গণমাধ্যম কোনো তথ্য নিশ্চিত হওয়া ছাড়া মিথ্যা অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তারা আগেই নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশে কী হচ্ছে। অবস্থান পূর্বনির্ধারিত থাকলে বেশি এগোনো যায় না। ফলে ভারতীয় জনগণ সহিংসতা করছে।
শফিকুল আলম বলেন, অপতথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল, প্রবাসী সবাই মিলে সোচ্চার হওয়া উচিত। অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে আমাদের পুরো জাতিকে একটা কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তারা আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। আমরা মনে করি এ সুসম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে।
শেভরনের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদনের ৬০ শতাংশ শেভরনের কূপ থেকে আসে। তারা আবার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ইচ্ছে করেছেন। তারা ১০ ও ১১ ব্লকে কূপ খননের প্রস্তাব দেবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। গ্যাসের নতুন চাহিদা হচ্ছে। তারা জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গেও বসবেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে ভারত : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ভারত সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। তার বিপরীতে আমাদের প্রচার করতে হবে বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ বিশ্বদরবারে সেই তথ্য তুলে ধরতে হবে। জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করবে। গতকাল সন্ধ্যার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্নে ভারতকে একচুল ছাড় দেওয়া হবে না। ভারত আওয়ামী লীগের চোখ দিয়ে বাংলাদেশেকে দেখে। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতেই ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। সেই ঐক্যে ধরে রাখতে হবে। ভারতের অপপ্রচার বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য প্রচার করতে হবে।
তিনি বলেন, যত অসম চুক্তি হয়েছে সেই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সব গোপন চুক্তি প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ফেলানীসহ সব সীমান্তে সব হত্যার তথ্য প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য