সুসম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়া এবং নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে অপপ্রচার ও সেদেশের রাজনীতিবিদদের বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য, এর জবাবে এদেশের রাজনীতিবিদদের পাল্টা বক্তব্যে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। সম্পর্কও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এমন বৈরি সম্পর্কের মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি ঢাকা সফরে এসে দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিলেন। আকস্মিক সফরে এসে গতকাল সোমবার সকাল ৯টার কিছু আগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বিক্রম মিস্ত্রি। একে একে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। সর্বশেষ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে রাতেই দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি।

পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিক্রম মিস্ত্রি দু’দেশের সুসম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে বিক্রম মিস্ত্রি বলেছেন, বিভিন্ন কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে, সেই মেঘটি দূর করতে হবে। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, এটি দূর করতে হবে।

গতকাল বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্য এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘অপপ্রচারের জবাব লিখিত ও মৌখিক বহুভাবেই বলেছি, যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সেগুলোকে সাম্প্রদায়িক দেখানোর সুযোগ খুবই কম। সেগুলো কখনো কখনো ব্যক্তিগত, বেশির ভাগই রাজনৈতিক। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার না এটির অংশ, না এটি কোনোভাবেই বরদাশত করছে। যেখানে যেখানে এ রকম অভিযোগ এসেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সচিবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন কারণে যে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছে, এই মেঘটি দূর করতে হবে। আমরাও বলেছি, এই মেঘটি দূর করতে হবে।’

সুসম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা ভারতের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করতে আগ্রহী ভারত। দিল্লি আশা করছে, দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্ক একটা ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে সংল্যাঘলুদের নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছে দেশটি। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর এসব কথা বলেন ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।

বিক্রম মিস্ত্রি বলেন, ‘পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের আমন্ত্রণে আমি ঢাকায় এসেছি। অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মুহূর্তে আমি ঢাকায় এসেছি, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এ বছর আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে আমাদের উভয় দেশের নেতাদের মধ্যে প্রথম কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে টেলিফোন আলাপ হয়েছে। নিউইয়র্কে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। আমার এ সফর তারই অংশ। নতুন সরকারের সঙ্গে এটা প্রথম ফরেন সচিব মিটিং। আজকের এই আলোচনা আমাদের উভয়পক্ষকে এই সুযোগটা করে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে খোলামেলা এবং গঠনমূলক মতবিনিময় হয়েছে। আমাদের আকাঙ্খা হলো-ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক ও লাভজনক সম্পর্ক, যেটা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আমরা অতীতে দেখেছি ও আমরা ভবিষ্যতেও এটা দেখতে চাই।’

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উভয় দেশের মানুষকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে মিশ্রি বলেন, ‘এই সম্পর্ক হবে মানুষকেন্দ্রিক। এটা উভয় দেশের জনগণের উপকারে আসবে এবং এর প্রতিফলন আমাদের প্রাত্যহিক ঘটনার মধ্যে পাচ্ছি। যার মধ্যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, পানি, এনার্জি, উন্নয়ন সহযোগিতা, কনস্যুলার সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় রয়েছে। এই বিষয়গুলোর ওপর আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে আকাক্সক্ষার কথা তুলে ধরেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ‘ভারতের আকাঙ্খা হলো-অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করা। একইসঙ্গে আমরা সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি আলোচনা করেছি। সংখ্যালঘু ইস্যুতে আমি আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সংখ্যালঘু বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিষয়টি দেখবে।’

বিক্রম মিশ্রি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক বিষয়ে আক্রমণের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সার্বিকভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক মনোভাব চাই। অপেক্ষায় আছি, আমাদের সম্পর্ক একটা ইতিবাচক এবং গঠনমুলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের নিতে বলেছে বাংলাদেশসংখ্যালঘুদের প্রতি কথিত বৈরী আচরণ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর বয়ান রয়েছে, সে বিষয়ে ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক (এফওসি) শেষে এ তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এই প্রেক্ষিতে এফওসিতে উভয় প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে সামনের দিনে আরও এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এফওসিতে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামনে আলোচনা হয়। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের নিকট আমরা আমাদের দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সকল অনিষ্পন্ন বিষয়সমূহের দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য ভারতের সহযোগিতা কামনা করি এবং এই লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করি। আমি দুই দেশের সাধারণ জনগণের ভেতর আস্থা ও বিশ্বাস বিনির্মাণের গুরুত্বের বিষয়ে জোর দেই এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা রোধে ভারতের সক্রিয় ভূমিকা আশা করি।’

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব এবং বিপ্লব-পরবর্তী সংখ্যালঘুদের প্রতি কথিত বৈরী আচরণ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর বয়ান রয়েছে, সে বিষয়ে আমরা ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছি। সেই সাথে আমরা জোর দিয়ে বলেছি যে, বাংলাদেশে বসবাসরত সব ধর্ম নির্বিশেষে স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করে আসছে এবং এ বিষয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সরেজমিনে বাস্তব অবস্থা দেখার ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিদেশি সাংবাদিকদেরও আহ্বান জানিয়েছে। সেই সাথে আমরা এও বলেছি যে, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের মন্তব্য সমীচীন নয়। আমি এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছি যে, বাংলাদেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য থেকে বিরত থাকে এবং অন্যান্য দেশেরও একই ধরনের শ্রদ্ধাবোধ আমাদের প্রতি দেখানো উচিত।

সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা অগ্রাধিকার উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি প্রতিটি জীবন মূল্যবান। এই লক্ষ্যে ভারত সরকারকে দৃশ্যমান কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা অনুরোধ করেছি। তাছাড়া, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, মাদক পাচারসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম নির্মূলে ভারতের সহযোগিতাসহ সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সমাধানে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাই।

আলোচনায় আন্তঃনদী বিষয়সমূহ গুরুত্ব পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিস্তা নদীর পানি চুক্তি সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছি। গঙ্গা-পানি চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। সে প্রেক্ষিতে তা নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। আরও যে কয়টি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টন সংক্রান্ত চুক্তি দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনাধীন, সেসব সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। বন্যা পূর্বাভাস, উপাত্ত আদান-প্রদানসহ বন্যা প্রতিরোধে ভারতের সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি এ বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের মেকানিজম গঠন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ভারত আমাদের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান ট্যারিফ, প্যারা-ট্যারিফের মতো বাধাসমূহ দূর করার ওপর আমরা গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমরা ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছি।

তিনি জানান, বর্তমানে ভারতের সাথে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা ভারত থেকে বর্তমানে প্রায় ২৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। চলমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সহযোগিতা বৃদ্ধি পেতে পারে। ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আনার বিষয়েও ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এবং রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশে অবস্থানরত ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রতি বছর পর্যটন এবং চিকিৎসা উপলক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি ভারত সফর করে। তাদের ভিসা প্রাপ্তি সহজীকরণসহ অন্যান্য কনস্যুলার সহজীকরণের জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। যেসকল বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের আদালতের দেওয়া সাজা বাংলাদেশে অথবা ভারতে ভোগ করছে, তাদের সাজা মওকুফের বিষয়ে ভারতের যথাযথ বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া ভারতে আটক বাংলাদেশের জেলেদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকের আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে একযোগে কাজ করার বিষয়ে ভারত সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুই দেশের মধ্যে এটিই উচ্চ পর্যায়ের প্রথম বৈঠক। বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন বাংলাদেশে সনাতন ধর্মীয় একজন নেতার গ্রেপ্তারে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারত, সাথে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের অভিযোগও তুলেছে- আবার কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে হামলার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। কূটনৈতিক সম্পর্কের দৃশ্যমান অবনতি এবং উভয় দেশেই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশে ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য প্রদান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ফোনালাপ অব্যাহত করেছেন। দু’দেশের জনগণের মধ্যেও চলছে আক্রমনাত্মক ও বিদ্বেষমূলক বাগযুদ্ধ। ফলে মুখে সুসম্পর্কের বার্তা থাকলেও উভয় দেশের অন্তরে কী আছে তা জানার জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠক থেকে বড় কিছু অর্জনের সুযোগ না থাকলেও, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুই দেশ বৈঠক বা আলোচনায় বসেছে- এটাই একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

ভোরের আকাশ/রন