স্কুলে ভর্তির ডিজিটাল লটারিতে জালিয়াতির তথ্য সামনের আসার পর নড়ে-চড়ে বসেছে ভর্তি কমিটি। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ভর্তি প্রক্রিয়ার কিছু ‘ফাঁকফোকর’। এছাড়া এ ধরনের জালিয়াতিতে জড়িত বেশ কিছু আবেদনকারীকে চিহ্নিত করেছে ভর্তি কমিটি। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় এক ছাত্রী তিনবার মেধাতালিকা সুযোগ পাওয়ার ঘটনা তদন্তে সামনে এসেছে অভিনব অনেক জালিয়াতির তথ্য। যারা এমন অসদুপায় অবলম্বন করেছে তারা ভর্তির সুযোগ পাবে না বলেও জানিয়েছে ভর্তি কমিটি।
এদিকে আবেদন প্রক্রিয়াটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ায় আইডিয়াল স্কুলের ঘটনাটি তাদের তদন্ত করতে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
তদন্তে দেখা গেছে, ওই ছাত্রীর একই জন্মসনদ দিয়ে বিভিন্ন তথ্য পরিবর্তন করে মোট ৩০ বার আবেদন করা হয়েছে। একেক আবেদনে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়। এতে আবেদন প্রক্রিয়ায় দুর্বলতায় ওই ছাত্রী ৩ বার ভর্তির সুযোগ পায়।
স্কুলে ভর্তির ডিজিটাল লটারির ফলাফলে দেখা গেছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার দ্বিতীয় শ্রেণিতে মর্নিং শিফটে ইংলিশ ভার্সনের এক শিক্ষার্থীকে মেধাতালিকায় দুবার রাখা হয়েছে। এছাড়া একই শ্রেণির বাংলা ভার্সনের মর্নিং শিফটেও ওই শিক্ষার্থী মেধাতালিকায় রয়েছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা ভার্সনে মর্নিং শিফটে সাধারণ কোটায় ওই শিক্ষার্থী ৯৬তম হয়েছে। একই শ্রেণিতে ইংলিশ ভার্সনের মর্নিং শিফটে সে সাধারণ কোটায় ১৫ ও ১৯তম স্থানে রয়েছে। সব জায়গায় তার একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। বাবা-মায়ের নামও একই। তবে তিন জায়গায় তিনটি ভিন্ন মোবাইল নম্বর রয়েছে। জন্ম নিবন্ধন নম্বরও ভিন্ন।
ওই শিক্ষার্থীর বাবা মো. রুবেলের সঙ্গে কথা বলেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার সন্তানের জন্য দুই শিফটে দুটি আবেদন করেছেন বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) ও ঢাকা মহানগর ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, ওই ছাত্রীর নামে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে মোট ৩০ বার আবেদন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল ফাঁকফোকর দিয়ে একাধিক স্কুলে ভর্তি হওয়া। সে জন্য তার নাম তিনবার এসেছে। কিন্তু স্কুল তথ্য যাচাই করেই ভর্তি করবে। তথ্যের গরমিল হলে স্কুল ভর্তি নেবে না। এ ধরনের বেশ কিছু আবেদনকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হয়তো ভিন্ন। তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের আবেদনের লিঙ্কের সঙ্গে জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বা জাতীয় ভোটার তালিকার লিঙ্ক করা নেই তাই একই জন্মসনদ দিয়ে একাধিক আবেদন করতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়তো ভিন্ন মোবাইল নাম্বারসহ ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিতে পারে। কিন্তু একজন শুধু একটি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে।
এবার স্কুলে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা বাদ দিয়ে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় ভর্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে প্রচুর আবেদনও পড়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া অস্বাভাবিক। পেলেও সেই সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি হওয়া কথা। কিন্তু কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছে জানিয়ে এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সাধারণ কোটায় আবেদন করা অভিভাবকরা।
মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বাতিল হলেও অনেকেই নাতি-নাতনিকে সন্তান হিসেবে আবেদন করেছেন। এটা অনেকে না জেনে করেছেন। আবার অনেকেই জেনে বুঝে করেছেন। যাচাই বাছাইয়ে এসব প্রার্থী ভর্তির অযোগ্য হবে।
ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, কেউ আবেদনে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও তার আবেদন বাতিল হবে। প্রথম দিকে এই প্রবণতা বেশি ছিল। ভর্তি সুযোগ না পাওয়ায় তা কমে গেছে।
মাউশি জানিয়েছে, ভর্তিকালীন নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র যাচাইকালীন শিক্ষার্থীর জন্মসনদের মূল কপি, জন্মসনদের অনলাইন কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইনে যাচাই করতে হবে), বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি ভালো করে দেখতে হবে। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থী নির্বাচিত হলে (যাচাই সাপেক্ষে) তাকে ভর্তি করা যাবে না।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান শেখ বলেন, লটারিতে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করছি। যাদের সব তথ্য সঠিক তাদের ভর্তির জন্য টোকেন দিচ্ছি।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য