ঋণের চাপে ঢাকা ওয়াসা

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
ঋণের চাপে ঢাকা ওয়াসা

ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ঢাকা ওয়াসা) দেশি-বিদেশি খাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ রয়েছে, যা নিজস্ব সম্পদের অর্ধেকের বেশি। মূল টাকা পরিশোধের পাশাপাশি সুদের টাকার চাপও রয়েছে। এই পরিমাণ অর্থ পরিশোধে রাজস্ব আয়েই নজর দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার মোট সম্পদ প্রায় ৩৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গত ৩০ জুন পর্যন্ত সংস্থাটির দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ৯৮৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, আর সুদ তিন হাজার ২৫৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রায় আসল ও সুদ (ডিএসএল) বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা এবং সুদ বাবদ চার্জ ২৯৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ন্যাশনাল এক্সচেকারে ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রমের মাধ্যমে জমা হয়েছে দুই হাজার ৪২ কোটি টাকা।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, সরকার, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ডেনিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি, ইউরোপিয়ান ইনভেস্ট ব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, ইডিসিএফ কোরিয়া, চায়না এক্সিম ব্যাংকসহ বেশ কিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এই অর্থ পাবে।

সূত্র মতে, সংস্থাটির মোট স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ ১০ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪৬ একর নিজস্ব ভূমি রয়েছে ঢাকার ২৬৪ স্থানে। এ ছাড়া ৬৬৭ স্থানে ইজারা ভূমি রয়েছে ১২.৮৯ একর, যার মূল্য ২২১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ৮৬০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা মূল্যের দালানকোঠা ও স্থাপনা রয়েছে ৬৪৩টি। এ ছাড়া চার হাজার ৮৬২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা মূল্যের প্ল্যান্ট ও মেশিনারিজ, ৯১ কোটি ৪০ লাখ টাকার ৪৯৪টি জেনারেটর, ৭২ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের সীমানাপ্রাচীর এবং এক হাজার ৮৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার এক হাজার ২০৩টি গভীর নলকূপ রয়েছে।

জানা গেছে, বেশি ঋণের বড় কারণ বড় বড় প্রকল্প। চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে পানি সরবরাহের জন্য তিন হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প, আট হাজার ১৪৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ের ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট, সাত হাজার ৫১৮ কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ের সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-৩ প্রকল্প, সাত কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ের ঢাকা ওয়াটারশেডে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জলাশয়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রকল্প।

পয়ঃশোধনাগারের মধ্যে রয়েছে পাঁচ হাজার ১৮৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ের ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, এক হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ের উত্তরা এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প এবং এক হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের রায়েরবাজার পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প। চলমান এসব প্রকল্প ছাড়াও প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সাতটি প্রকল্প পরিকল্পনাধীন। ব্যয়ের হিসাব দীর্ঘ হলেও রাজস্ব আয়ের মধ্যে পানি বিক্রি থেকে এক হাজার ৭৬৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা, পয়ঃসেবা থেকে ৫৮৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা আয় রয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত পানি বিক্রি, ট্রাকের মাধ্যমে পানি বিক্রি, এটিএম বুথ সেবার মাধ্যমে আয় করছে সংস্থাটি। সংস্থাটির মোট পরিচালন ব্যয় দুই হাজার ৮৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ পরিচালন ব্যয় (পানি) এক হাজার ৫৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং প্রত্যক্ষ পরিচালন ব্যয় (পয়.) ৫২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ঋণ তো আছেই। এসব দেনা রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। আশা করছি, আমরা দেনা পরিশোধ করতে পারব। আসলে সেবার মান ভালো করতে প্রকল্প তো নিতে হয়ই।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য