দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে গ্যাসের বাড়তি সরবরাহ নিশ্চিতে নতুন করে আরও পাঁচটি কূপ খনন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। এরই মধ্যে পাঁচটি কূপ খননের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত ভোলা থেকে পাইপলাইন নির্মাণকে অর্থনৈতিকভাবে আরও লাভজনক করতে এসব কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে বিশেষ আইনের (বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইন) আওতায় ভোলায় কূপ খননের কাজটি রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রমের এককভাবে করার কথা ছিল। তবে বিশেষ আইন বাতিল হওয়ায় সেখানে আর গ্যাজপ্রমের এককভাবে কাজ করার সুযোগ নেই।
বাপেক্স-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ভাষ্যমতে, ভোলা থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনতে সেখানে আরও গ্যাসের মজুত নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। সে কারণেই গ্যাস কূপ খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ আইন বাতিল হওয়ার সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে এখন উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে এ খনন কাজে বিদেশি আরও কোম্পানিকে যুক্ত করতে চাইছে পেট্রোবাংলা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শোয়েব বলেন, ভোলায় পাইপলাইন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করার জন্য সেখানে আরও গ্যাস মজুত নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। সেখানে যে পরিমাণ গ্যাস মজুত নিরূপণ করা হয়েছে, তা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়। এজন্য নতুন করে পাঁচটি কূপ খননের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বিশেষ আইন বাতিল হওয়ার কারণে এখন কূপ খননে যেকোনো যোগ্য কোম্পানি কাজ পেতে পারে। প্রতিযোগিতা ও যোগ্যতা যাচাই করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হবে।
বাপেক্স-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোলায় যে পাঁচটি কূপ খনন করা হবে, সেখানে উন্নয়ন গ্যাস কূপ চারটি এবং অনুসন্ধান কূপটি একটি। কূপগুলো হলো শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের শাহবাজপুর-৫, শাহবাজপুর-৭, ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের ভোলা নর্থ-৩ ও ৪ নম্বর কূপ। আর অনুসন্ধান কূপটি হলো শাহবাজপুর নর্থ ইস্ট-১ কূপ। এ পাঁচ কূপ খননে ২ ডিসেম্বর উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়সীমা আগামী বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি।
জানা গেছে, উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করার পর এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানি দরপত্র কেনার তোড়জোড় শুরু করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত এসব কোম্পানি দরপত্র কিনবে কিনা বা অংশ নেবে কিনা, সে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি বাপেক্স-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পেট্রোবাংলার গ্যাস মজুত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভোলা জেলায় এখন পর্যন্ত তিনটি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে। ২পি (সম্ভাব্য ও প্রমাণিত) মজুত সমীক্ষা অনুযায়ী, এর মধ্যে শাহবাজপুরে গ্যাসের মজুত আছে ৬৩৪ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। এখান থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত উত্তোলন হয়েছে ১৪৩ বিসিএফ গ্যাস। জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে ভোলার গ্যাস পাইপলাইন সংযুক্ত না থাকায় সেখান থেকে উত্তোলিত গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে স্থানীয় কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
ভোলা নর্থ-১ গ্যাস ফিল্ডে আবিষ্কৃত মজুত ৪৩৫ বিসিএফ। সেখানের আরেকটি গ্যাস ক্ষেত্র ইলিশায় গ্যাসের মজুত পাওয়া গেছে ১৪০ বিসিএফ। গ্যাস ক্ষেত্র দুটি ২০১৮ ও ২০২৩ সালে আবিষ্কার হলেও এখানকার গ্যাস ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থাটি এখন ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা এবং সেখানে আরও কূপ খনন করে গ্যাস আবিষ্কারের প্রতি জোর দিচ্ছে। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পেট্রোবাংলার শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, ভোলায় আরও কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। দ্রুত কোম্পানি নির্বাচন করা গেলে সেখানে আরও গ্যাস মজুত আবিষ্কারের সুযোগ রয়েছে। পাইপলাইন নির্মাণের তোড়জোড়ও চলছে। তবে তার আগে প্রয়োজন সেখানে গ্যাসের মজুত বাড়ানো। সে লক্ষ্যে কাজ করছে পেট্রোবাংলা।
ভোলার গ্যাস গ্রিডে যুক্ত হলে দেশে বিদ্যমান জ্বালানি সংকট কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরূল ইমাম এ বিষয়ে বলেন, ভোলায় গ্যাস পাওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে বাপেক্স আড়াই দশক আগে গ্যাস পেয়েছে। এরপর যে কোম্পানি কূপ খনন করেছে, তারা গ্যাস পেয়েছে। এ গ্যাস দ্রুত গ্রিডে সংযুক্ত করার জন্য পেট্রোবাংলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে গ্যাস সংকট কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা যাবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য