জাতির ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা এখন আর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। যেখানে সংকট সেখানেই তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের অস্থিতিশীল বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যও তারা অন্যদের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছেন। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে ন্যায্যমূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করতে দেখা গেছে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থীদের। কলেজের সামনে তারা নিজ উদ্যোগে সবজি বিক্রি করেছেন। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এ দোকান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সবজি কিনে একই দামে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী বাজার বসিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করছেন। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গত কয়েকদিন থেকে চালু হওয়া এই সস্তার বাজার পেয়ে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও কম দামে শাক-সবজি কিনতে পারছেন। পাশপাশি বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য অনেকটা কমে এসেছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যখন অসহনীয়, সাধ আর সাধ্যের মিল করে নিম্ন আয়ের মানুষ যখন তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হিমসিম খাচ্ছেন, ঠিক সে সময় কৃষকের দামেই শাক সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে পটুয়াখালীবাসী নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে বন্যায় এবার শাক-সবজি, আদা, হলুদ, মরিচ, পেঁপে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও টমেটো, পান, আখসহ ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে দিনাজপুরের হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরাও উদ্যোগী হয়েছেন। ১০ লাখ সবজির চারার পাশাপাশি ৫ একর জমিতে ধানের চারা উৎপাদন করে বন্যার্ত কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করবেন তারা। জমিতে শুধু ধানের চাষ নয়, শিক্ষার্থীরা চাইলে তাদের স্কুল, কলেজের আশপাশের যে খালি জমি পড়ে আছে, সেখানে তারা বিভিন্ন শাক, সবজির চাষও করতে পারেন। ভারতের বিষ্ণুপুরের মড়ার সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয়ে তৈরি করা হয়েছে সবজির বাগান। সেখানে পেঁপে, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, কাঁচামরিচ থেকে শুরু করে শাক, বেগুন, সিম, বরবটি, ক্যাপসিকাম পর্যন্ত সব ধরনের সবজিই রয়েছে। তবে এই বছরই প্রথম না। বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে সবজির বাগান রয়েছে এই বিদ্যালয়ে। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের যৌথ পরিচর্যায় এই সবজি বাগানটি ক্রমশই শস্য-শ্যামলা হয়ে উঠছে।
বাগান পরিচর্যার জন্য প্রতিদিন ৩-৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ১৫-১৬ জন শিক্ষার্থীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক দিন পালা করে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাগান পরিচর্যা করে। ফুলকপি গাছের গোড়ায় মাটি দেওয়ার সময় দশম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ আরিফুল বায়েন গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাজারে এখন যে সমস্ত সবজি পাওয়া যায় সবই ক্ষতিকারক কীটনাশক দেওয়া। স্কুল শুরুর আগে, টিফিনে ও ছুটির পরে এই বাগান পরিচর্যা করা হয়। উদ্যোগের অভাবে হয়তো এদেশের শিক্ষার্থীরা এভাবে নিয়োজিত হচ্ছে না। কৃষি বিভাগ চাইলে শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে উদ্যোগী করতে পারে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য