পুলিশের উপ-পরিদর্শকদের (এসআই) ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ শেষ হয় প্রায় দুই মাস আগে। দুই দফা সময় নির্ধারিত হওয়ার পরও অনিবার্য কারণ দেখিয়ে স্থগিত করা হয় সমাপনী কুচকাওয়াজ বা পাসিং আউট। এর মধ্যে প্রশিক্ষণের শেষ পর্যায়ে এসে বাদ দেওয়া হয় তিন শতাধিক এসআইকে। এ অবস্থায় এত দিন পরও কুচকাওয়াজ না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় ও অনিশ্চয়তায় সময় পার করছেন বাকি ৪৮৮ জন ক্যাডেট।
পুলিশ সদর দপ্তর ও পুলিশ একাডেমি সূত্র বলছে, শিগগির তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজ হবে। সে লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভূঞা গত বৃহস্পতিবার বলেন, পার্সিং আউটের তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। যারা এখন আছেন তাদের সবাই পার্সিং আউটে অংশ নিতে পারবেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা এখনো বলা যাচ্ছে না। দ্রুততম সময়ে প্যারেড অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একাডেমি কাজ করছে। তবে তাদের যাচাই-বাছাই চলমান। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, পাসিং আউট শিগগিরই হবে। তারিখ নির্ধারিত হলে গণমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রশিক্ষণার্থীদের সূত্রে জানা যায়, দুবার কুচকাওয়াজ স্থগিতের পর কৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে ৮২৩ সদস্যের মধ্যে ৩১৩ জনকে অব্যাহতি দেয় পুলিশ একাডেমি।
জানা গেছে, তিন দফায় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণের মধ্যে রয়েছে সরবরাহকৃত নাশতা না করা, ক্লাসে মার্চিং না করে যাওয়া ও ক্লাস চলাকালীন বিকৃঙ্খলা তৈরি। এসব অভিযোগ এনে ৩১৩ জনকে প্রশিক্ষণের একদম শেষ পর্যায়ে এসে অব্যাহতি দেওয়া হয়, যা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ১১২ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ৩১৩ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার পর বর্তমানে একাডেমি এ বিষয়ে একাধিকবার ভেরিফিকেশন হয়েছে।
প্রশিক্ষণরত এসআইরা জানান, দ্বিতীয়বার পাসিং আউট প্যারেড স্থগিত করার পর থেকে প্রায় এক মাস ধরে অত্যন্ত অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একই রুটিনে প্যারেড ও ক্লাস করতে হচ্ছে। কিন্তু কেউ জানে না, এই প্রশিক্ষণ কবে শেষ হবে। একাডেমির ঊর্ধ্বতনরাও কিছু জানাচ্ছেন না।
২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর শুরু হয় ৪০তম এসআই ক্যাডেটদের এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ। নিয়মানুসারে প্রশিক্ষণ শেষ করে চলতি বছরের ৪ নভেম্বর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে যোগদানের কথা ছিল তাদের। প্রথমবার পাসিং আউট প্যারেডের সময় তারিখ নির্ধারণ হয় ৩১ অক্টোবর, যা অনিবার্য কারণে স্থগিত হয়। পরে নির্ধারিত নতুন তারিখ ২৬ নভেম্বরও স্থগিত করা হয়। দুজন প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেট বলেন, আমাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ১২ মাসের। প্রায় ১৪ মাস শেষ হলেও এখনো পুলিশ একাডেমি সারদাতেই আছি। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে মানসিক যন্ত্রণা ও হতাশার মধ্য দিয়ে। ক্যাডেটরা বলেন, তারা বেশির ভাগই নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। সীমিত আয় থেকে মা-বাবা ধার-ঋণের মাধ্যমে ১৪ মাস ধরে তাদের খরচ বহন করছেন। এখনো তাদের পদায়ন হচ্ছে না।
মৌলিক প্রশিক্ষণ চলাকালে কোনো বেতন পান না প্রশিক্ষণার্থীরা। খাওয়াদাওয়া ও প্রশিক্ষণের পোশাক সরকার সরবরাহ করে। একই সঙ্গে প্রতি মাসে এক হাজার ৮২৫ টাকা প্রশিক্ষণ ভাতা পান, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। উপরন্তু প্রত্যেকের জন্য নিযুক্ত সহায়তাকর্মীর (রুম বয়) মাসিক বেতন (দুই হাজার ৫০০ টাকা প্রতিজনের জন্য) দিতে হয়। ফলে প্রতি মাসে পরিবার থেকে টাকা এনে খরচ করতে হচ্ছে তাদের। একজন এসআই বলেন, আমরা সবাই চরম মানসিক অবসাদে ভুগছি। কারণ প্রথমত আমাদের চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে না, এর পাশাপাশি রেজাল্ট, পোস্টিং সব স্থগিত করে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ছয় মাসের অধিক সময় ধরে আমাদের কোনো ছুটি দেওয়া হচ্ছে না, মা-বাবার মুখটা দেখতে পারছি না। কান্না আসছে প্রতি মুহূর্তে। আজ যদি আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয় বা চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়, তবে পুরো পরিবার নিয়ে এক সীমাহীন দুর্দশায় পড়তে হবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য