রাত পোহালেই খ্রিস্ট্রীয় নববর্ষ- ২০২৫। আজ রাত ১২টায় উৎসবে মেতে উঠবে সারাবিশ্ব। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতি বছরের মতো এবারও আতশবাজির ঝলকানিতে দূর হবে রাতের আঁধার। হয়তো ফোটানো হবে পটকা। উড়বে ফানুসও। কিন্তু পটকায় সৃষ্টি হবে প্রচণ্ড শব্দ। এই আতশবাজি-পটকার শব্দ যে মানুষ ও প্রাণীকূলের জন্য কতটা ক্ষতিকর; সেটা হয়তো আমরা অনেকে জানি না। আবার জানার চেষ্টাও করছি না। এই আলো-শব্দে কিছু মানুষ যেমন আনন্দে মেতে ওঠেন, তেমনি কিছু পাখির জন্য তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে আতশবাজি-পটকার শব্দে অসংখ্য পাখি প্রাণ হারাচ্ছে। শুধু পাখির জন্যই যে এ শব্দ আতঙ্কজনক তা না, অনেক শিশু ও বয়স্ক মানুষও নববর্ষের রাতে আতঙ্কে অস্থির হয়ে থাকে।
সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে ঢাকায় শব্দদূষণ বাড়ে ৭৪ শতাংশ। বছরের এই সময়ে এমনিতে বায়ুদূষণ থাকে তুঙ্গে, তার ওপর আতশবাজি-পটকায় দূষণের মাত্রা চলে যায় বিপজ্জনক পর্যায়ে। খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণে উচ্চ শব্দে গানবাজনা, ফানুস ওড়ানো আর পটকার শব্দ থাকে সহ্য ক্ষমতার বাইরে। আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয় না।
ফলে রাজধানীতে গত ৭ বছরে আগের দিনের (৩১ ডিসেম্বর) তুলনায় পর দিন (১ জানুয়ারি) বায়ুদূষণ বাড়ে গড়ে ১৯ শতাংশ। একই কারণে এক দিনের ব্যবধানে শব্দদূষণ বাড়ে গড়ে ৭৪ শতাংশ। এরকম ঘটনা হয়তো ইউরোপ-আমেরিকাতেও ঘটে না। তাহলে আমাদের এখানে কেন ঘটছে? আমরা যদিও এখন কাজকর্মে খ্রিষ্টীয় পঞ্জিকাই মেনে চলি, তাও সেই অর্থে ইংরেজি নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির অংশ না। আমাদের নিজস্ব নববর্ষ বাংলা নববর্ষ উদযাপনে কিন্তু এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে না। এ দেশের একদল উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-তরুণীই এই আতশবাজির সঙ্গে যুক্ত থাকে।
তারা বেশির ভাগই অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সন্তান। দেশীয় ঐতিহ্যের কোনো সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে তাদের তেমন সম্পৃক্ততা নেই। তারা না বুঝে ইউরোপ-আমেরিকার সংস্কৃতি অনুকরণ করে, তা মোটেই ভালোটা নয়। বিপুল অর্থের অপচয়ে তারা যে উৎসব পালন করে, তাতে ক্ষতি বৈ লাভ কিছুই হয় না। এই বিপুল শব্দ উৎপাদনে কার কী লাভ হতে পারে? এতে আনন্দই বা কতটুকু? একটি বিকৃত আনন্দ প্রকাশ ছাড়া এ আর কিছুই না। ঢাকা শহর অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে গায়ে গায়ে দালান-কোঠা লেগে আছে। আতশবাজির কারণে অনেক সময় আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। অনেকে ছাদে উঠে আতশবাজির উৎসব করে; কিন্তু মনে হয় যেন সেগুলো ঘরে এসেই পড়বে। তিন-চার ঘণ্টা পুরো শহরে কোনো স্বাভাবিক পরিবেশ থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, এ আতঙ্ক নবজাতক ও বয়স্ক মানুষের মনে দীর্ঘদিন পর্যন্ত লেগে থাকে। কোনো নীতিকথায় এতে কাজ হবে না এটা বোঝা যাচ্ছে। তাই প্রশাসনকে অত্যন্ত কঠোর হতে হবে। যে করেই হোক, এই অতি উচ্চ শব্দের আতশবাজি বন্ধ করতে হবে। আতশবাজি কোত্থেকে আসে, কীভাবে তার উৎসপথ বন্ধ করতে হবে। যার কাছেই এই আতশবাজি পাওয়া যায়, তাকে শাস্তি ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। উৎসবের নামে এরকম একটি বিকৃত সামাজিক হট্টগোলকে কোনোভাবেই সহজভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। বিশেষ করে তা যখন আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে।
এগুলো বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বিশেষ করে র্যাব ও পুলিশকে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। পাড়া-মহল্লায় অভিযান চালাতে হবে। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না- একজনের আনন্দ যেন আরেকজনের ক্ষতি না হয়।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য