জুলাই বিপ্লব

শিক্ষার্থীদের ঐক্যে ফাটল

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
শিক্ষার্থীদের ঐক্যে ফাটল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোর দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র সংগঠন এক সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়লেও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তারা এক অবস্থানে থাকতে পারেননি। সমন্বয়করা চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। তারা সামনে এনেছেন বঞ্চনার কথা।

জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের ৯ দফার মধ্যে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্রসংসদ চালু করার কথা থাকলেও এখন এ ব্যাপারে বক্তব্য নেই কোনো ছাত্র সংগঠনেরই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবির ছাড়া মূলধারার বাকি সব ছাত্র সংগঠনগুলোর সম্পর্কে তিক্ততার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই বাকিদের সঙ্গে ফাঁক বেড়েছে বলে ধারণা করছেন ছাত্র নেতারা।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ চালু করার আলোচনা শুরুর পরই ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে বিভাজন স্পষ্ট হতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসুর নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলো ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিতে থাকে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ডাকসু নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। এ সময়সীমা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের। ডাকসুর যে সব সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো এই সময়ের মধ্যেই করা সম্ভব বলে মনে করছে তারা। কিন্তু ছাত্রদলের অভিমত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দ্রুত নির্বাচন করতে চাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ডাকসুকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের এ মতভেদ জন্ম দিয়েছে নতুন তর্কের।

৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবে শুধু সমন্বয়কদের বৈঠকের পর ছাত্র নেতাদের ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে ৪ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ডাকা সভা বয়কট করে ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন, ফ্রন্টসহ মূলধারার ছাত্র সংগঠনগুলো। এরপর গত ৫ ডিসেম্বর কাঁটাবনে সভা করে ছাত্রদল, যেখানে আমন্ত্রণ পায়নি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রশিবির।

জানা যায়, ছাত্রদলের ওই সভায় শিবিরের ‘গুপ্ত রাজনৈতিক কার্যকলাপের’ সমালোচনা করেন অনেক নেতা। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতাকর্মীর ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ প্রসঙ্গ তুলে ওই সভায় সমালোচনা করা হয়।এরপর বিরোধের বিষয়টি আরো সামনে আসে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের বক্তব্যে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছে, তাদের নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি।

তাদের সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিবিরকে কেন ডাকা হয়নি- এ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিজেদের রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন মনে করে না। তাই তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। আর শিবিরের ব্যাপারে অনেকের আপত্তি থাকায় দাওয়াত দেওয়া হয়নি তাদেরকেও।

ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিক্ততার মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে আরেক সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের দ্বন্দ্বও। পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা কড়া বার্তা দিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহকে। ইয়ামিন বলেছেন, হাসনাত জানেন আন্দোলন কে চালিয়েছে? কিন্তু মিডিয়াতে হাইলাইটস হয়েছে তারা। তারাই এখন নায়ক।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ইয়ামিন কিছুটা হুমকির সুরেই কথা বলেছেন। হাসনাতের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এখন নায়ক। আপনাদের খলনায়ক হতে সময় লাগবে না। মুখোশ খুলতে সময় লাগবে না। ইয়ামিন বলেন, ‘বিপ্লবের স্পিরিটকে যারা ধারণ করেন, যারা আহত ও শহীদ হয়েছেন, তাদেরকে পুঁজি করে নিজেরা ধান্দা-প্রতারণা কইরেন না।’

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে দূরত্ব ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সমন্বয়কদের প্রতি তাদের অভিযোগ হচ্ছে, সকলে মিলে গণতান্ত্রিক উপায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও সেই অঙ্গীকার থেকে সরে গেছেন তারা। এতে সকলের মাঝে ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে বলেও দাবি বাম সংগঠনের নেতাদের।

ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি) সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেছেন, গত সপ্তাহে আমরা সব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম। উপস্থিত ছাত্র সংগঠনের বেশিরভাগই সেই দাবিতে একমত ছিলেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে নিজেদের গোষ্ঠীগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে তারা ছাত্র সংগঠনগুলো দূরে ঠেলে দিয়েছেন।

অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে ফাটল স্পষ্ট হলেও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধীদের সম্পর্কের বাঁধন এখনো মজবুত বলেই মনে হচ্ছে। বৃহত্তর কোনো ইস্যুতে এখন পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মধ্যে মতপার্থক্য খুব একটা দেখা যায়নি। ডাকসু ইস্যুতে তাদের বক্তব্যও একই। পাশাপাশি দুই সংগঠনের নেতারাই পরস্পরের সভা- সমাবেশ-আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য