বিশ্ব তাকিয়ে ট্রাম্প যাত্রায়

নিখিল মানখিন
বিশ্ব তাকিয়ে ট্রাম্প যাত্রায়

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি শপথগ্রহণ করবেন আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি)। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কূটনীতির দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ববাসী। বিশেষ করে যুদ্ধ-বিগ্রহে ক্ষত-বিক্ষত অনেক দেশ। সব যুদ্ধ বন্ধ করার ঘোষণা এবং নিজের দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার অঙ্গীকার করে রেখেছেন তিনি। তাই বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইতিবাচক কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অভিষেক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয়বার ‘ক্ষমতায় ফেরা’ উদ্যাপন করতে গত ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকেই ওয়াশিংটন অবস্থান করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পাঠানো বিমানবাহিনীর একটি বিমানে করে তিনি ফ্লোরিডার পাম বিচে অবস্থিত রিপাবলিকান ঘাঁটিতে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে ইভাঙ্কা এবং তার স্বামী জ্যারেড কুশনার।

এদিকে, ৪০ বছর পর পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানের আবহে। ট্রাম্প শপথ নেবেন ইনডোরে। সর্বশেষ ১৯৮৫ সালে রোনাল্ড রিগ্যানের শপথ অনুষ্ঠান হয়েছিল এরকমভাবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে মার্কিন আবহাওয়া। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র ঠান্ডা পড়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে বলে এএফপি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে (এনডিটিভি, গার্ডিয়ান, এএফপি, রয়টার্স) প্রকাশিত প্রতিবেদনসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শপথ অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তালিকায় ইউরোপের মধ্যমপন্থিদের বাদ দিয়ে অনেক কট্টর ডানপন্থি ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ রয়েছেন। আর চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং আমন্ত্রণ পেলেও আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় নেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার দু'দিন আগে থেকেই ওয়াশিংটনের রাস্তায় বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন হাজার হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী। প্রথম দিনই ১০টি নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দিনে ওবামাকেয়ার ইস্যুতে মাত্র একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন ট্রাম্প।

শপথ অনুষ্ঠানের কাঠামো : সাধারণত মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথবাক্য পাঠ করান। এবার জন রবার্টস দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। শপথ শেষে নতুন প্রেসিডেন্ট আগামী চার বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। একই দিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেডি ভ্যান্সও শপথ নেবেন।

অনুষ্ঠানে অতিথির সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ইনডোরে স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে উপস্থিতির সংখ্যা কমতে পারে। ক্যাপিটল রোটুন্ডায় প্রায় ৬০০ জনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন ক্যারি আন্ডারউড এবং লি গ্রিনউডের মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা। এছাড়া ‘ওয়াই.এম.সি.এ.’ গানে পারফর্ম করবেন ভিলেজ পিপল। গান গাইবেন কিড রক এবং বিলি রে সাইরাসও।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ সোমবার রাতে তিনটি অফিসিয়াল গালায় (বিশেষ অনুষ্ঠান) অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আরও এক ডজনেরও বেশি গালার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আমন্ত্রিত চীনের শি জিনপিং, নাম নেই মোদি ও পুতিনের : যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে।

পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে সৌজন্যমূলকভাবে বিদেশি কূটনীতিকদের অংশগ্রহণ থাকে। তিনি তার শপথ অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে শপথ অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আমন্ত্রণ পেলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম নেই আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায়।

ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় আছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেইর, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসাকারী হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াও।

ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা দলের (ট্রানজিশন টিম) পক্ষ থেকে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে ও ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়াকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক ও শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের পাশাপাশি শপথ অনুষ্ঠানে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গের মতো প্রযুক্তি খাতের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকছেন। ফরাসি ধনকুবের এবং প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জেভিয়ে নিয়েল অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক উপস্থিত থাকবেন।

ট্রাম্পের সহযোগীরা যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত কারেন পিয়ার্সের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের ডানপন্থি রিফর্ম পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

ফ্রান্স থেকে, অভিবাসনবিরোধী রাজনীতিবিদ এবং ‘দ্য ফরাসি সুইসাইড’ বইয়ের লেখক জেমোর তার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। তার সঙ্গী ইউরোপীয় আইনপ্রণেতা সারাহ নাফোও অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তিনি উপস্থিত থাকবেন।

জার্মানির কট্টর ডানপন্থিদেরও আমন্ত্রণের তালিকায় রেখেছেন ট্রাম্পের সহযোগীরা। অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) দল থেকে জার্মান চ্যান্সেলর প্রার্থী অ্যালিস ভাইদেলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

জার্মানির রক্ষণশীলরা ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির মুখপাত্র ইয়ুর্গেন হার্ডটকে পাঠাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বার্লিনের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেয়াস মাইকেলিসও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

স্পেনের কট্টর জাতীয়তাবাদী ভক্স পার্টির নেতা সান্তিয়াগো আবাস্কালকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পর্তুগালের ডানপন্থি চেগা পার্টির প্রধান আন্দ্রে ভেন্তুরাসহ ইউরোপের আরও বেশ কয়েকজন কট্টর ডানপন্থি নেতা ট্রাম্পের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন।

প্রথম দিনই যে ১০টি নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন ট্রাম্প : এনডিটিভি এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম দিনই তিনি যেসব নির্বাহী আদেশে সই করতে পারেন সেগুলো হলো-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিনে অভিবাসন পরিকল্পনা ট্রাম্পের প্রধান এজেন্ডাগুলোর একটি। তিনি আগেই অবৈধ অভিবাসীদের লক্ষ্য করে গণনির্বাসন কর্মসূচি শুরু করার অঙ্গীকার করেছেন।

ট্রাম্প জন্মগত নাগরিকত্ব ( বার্থরাইট সিটিজেনশিপ) বাতিল করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই নিয়ম অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায় জন্ম নেয়া যেকোনো শিশু জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়ে যায়। ওই শিশুর বাবা-মা যে দেশেরই নাগরিক হোন না কেন, নবজাতক মার্কিন নাগরিক বিবেচিত হয়। কিন্তু প্রথম দিনে এই আইন বদলাতে সই করতে পারেন ট্রাম্প।

পররাষ্ট্র নীতির দিক থেকে ট্রাম্প সাহসের সঙ্গে দাবি করেছিলেন যে তিনি ক্ষমতা গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, এমনকি তার আগেও ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। ‘আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই এটি নিষ্পত্তি করব,’ ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সাথে একটি বিতর্কে বলেছিলেন।

ট্রাম্প আমেরিকার দুটি বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। এই পদক্ষেপ অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

বাকি নির্বাহী আদেশসমূহের মধ্যে থাকতে পারে-বাইডেনের ‘ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল (ইভি) ম্যান্ডেট’ বাতিল, জ্বালানি খাত, ট্রান্সজেন্ডার অধিকার, মেড-ইন আমেরিকা উদ্যোগ ইত্যাদি।

ট্রাম্পের সামনে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ : বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির উন্নয়নে অনেক পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছেন দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিপর্যয়কর মূল্যস্ফীতির অবসান, শুল্ক আরোপ, বড় ধরনের কর হ্রাস, নিয়মকানুন প্রবর্তন ও সরকারের আকার-কী নেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের এজেন্ডায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করছেন, এসব অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে যেমন গতি আসবে, তেমনি ফিকে হয়ে যাওয়া আমেরিকান ড্রিম বা স্বপ্ন আবার রঙিন হবে। চলতি মাসের শুরুর দিকে মার আ লাগোতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি নানা ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাধার সম্মুখীন হবেন। তাঁরা মনে করছেন, এসব অঙ্গীকার একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে সোজাসাপ্টাভাবে এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হওয়ার পথ নেই।

ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে জিনিসপত্রের দাম কমবে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, তার এই অঙ্গীকার বিপজ্জনক। বাজারে জিনিসপত্রের দাম কদাচিৎ কমে, অর্থনৈতিক সংকট না হলে জিনিসের দাম কমে না। মূল্যস্ফীতি তো জিনিসপত্রের দামের মানদণ্ড নয়, বরং দাম কতটা বাড়ল, তার মানদণ্ড। মূল্যস্ফীতির হার ইতিমধ্যে অনেকটা কমেছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি একেবারে কমে যাবে না।

এ ছাড়া ট্রাম্প গ্যাস ও জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছেন। তার লক্ষ্য হচ্ছে, জ্বালানির দাম হ্রাস করা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব কারণে মূল্যস্ফীতি হয় বা জ্বালানির দাম বাড়ে, সেই সব কারণের বেশির ভাগই প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

হোয়াইট হাউসের কিছু নীতির কারণে জ্বালানির দামে প্রভাব পড়তে পারে ঠিক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রাম্পের অন্যান্য প্রস্তাব, যেমন কর হ্রাস, শুল্ক আরোপ ও অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির উল্টো অবনতি হতে পারে।

ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণায় মূল্যস্ফীতি বড় ভূমিকা পালন করেছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প অর্থনীতির যতটা খারাপ চিত্র এঁকেছেন, বাস্তবতা অতটা খারাপ নয়। বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের নিরিখে পরিস্থিতি ভালোই ছিল।

নির্বাচনে জেতার পর ট্রাম্প ঠিকই তার ওপর মানুষের প্রত্যাশার রাশ টানার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, জিনিসপত্রের দাম কমানো চ্যালেঞ্জিং হবে। কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের অঙ্গীকার বাস্তবায়নযোগ্য, যদিও কিছু সময় লাগতে পারে। তাঁরা মনে করেন, ট্রাম্প চুক্তি করতে পারদর্শী। ফলে তিনি এমন কিছু করতে পারেন, যাতে মার্কিন নাগরিকদের জীবনযাপন সহজ হবে।

ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা সব পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি কানাডা, মেক্সিকো ও ডেনমার্কের মতো মিত্রদেশের পণ্যেও শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি। যদিও অনেকে মনে করেন, শুল্ক আরোপের হুমকি মূলত অন্যান্য বৃহৎ বিষয়ে আলোচনায় সুবিধা করার লক্ষ্য নেওয়া এক কৌশল, যেমন সীমান্ত নিরাপত্তা। তিনি হয়তো শেষমেশ আরও ধারাবাহিক হবেন।

ট্রাম্পের আরেকটি বড় অঙ্গীকার হলো, তিনি কর হ্রাস বিধিবিধান শিথিল ও সরকারের আকার ছোট করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, এসব অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যের অর্গল খুলে দেবে।

কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এসব রাতারাতি করা সম্ভব সনয়। তারা মনে করছেন, ট্রাম্প হয়তো সরকারের ব্যয় হ্রাস না করে বরং যেসব করছাড়ের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে, সেগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি করবেন। তিনি যে সরকারি ঋণ বৃদ্ধির কথা বলেছেন, তাতে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়তে পারে। সরকারের ক্রমবর্ধমান ঋণ নিয়ে উদ্বেগের কারণে ইতিমধ্যে বন্ডের সুদহার বেড়েছে।

ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের বিরোধিতার মুখে পড়বেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর হ্রাসের কারণে আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণ আরও ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার বাড়তে পারে।

ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে আছে যেসব দেশ : কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে আছে অনেক দেশ। কেননা, তার ওপর নির্ভর করছে ওইসব দেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের বিষয়টি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক পলিসির ওপর নির্ভর করতে পারে বিশ্বের কয়েকটি জায়গার যুদ্ধ ও শান্তি পরিস্থিতি। এছাড়া অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলোও এতে জড়িত। বিশেষ করে ইউরোপ মহাদেশের ইউক্রেন, রাশিয়া এবং এশিয়ার দেশ চীনের জন্য এই নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে চীন। কেননা তারা দেশটির সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। এরই মধ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, নির্বাচনে জিতলে শুল্ক বাড়াবেন। আর চীনের ক্ষেত্রে শুল্ক হবে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্য দিয়ে ‘বাণিজ্য যুদ্ধের’ দিকেই তিনি আগাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি চীনের বাণিজ্য কিছুটা মন্দার দিকে যাচ্ছে। ট্রাম্প সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নিলে চীনের জন্য হুমকিমূলক হবে।

মার্কিন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনও। যুদ্ধরত এই দেশ দুটি পর্যবেক্ষণ করবে মূলত ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে আছে। ট্রাম্পের যুুদ্ধ বন্ধের ঘোষণায় হয়তো ইউক্রেনে সহায়তা কমে যেতে পারে। তার প্রভাব পড়বে যুদ্ধে। বিশ্লেষকেরা এমনটাই বলছেন।

সহায়তা বন্ধ করে দিয়ে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য করতে পারেন। এতে ইউক্রেনের বেশকিছু এলাকা পেয়ে যাবে রাশিয়া।

এছাড়া নতুন প্রেসিডেন্টের দিকে তাকিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের ইসরাইল,ইরানসহ অনেক দেশ। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বদলে যেতে পারে।

মন্তব্য