রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশন ব্যবসায় জড়িত মালিক ও শ্রমিকরা। ঘন্টার পর ঘন্টা অধিদপ্তর ঘেরাও করে আট দফা দাবি উত্থাপনসহ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন তারা। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে ও আর-২২ গ্যাস সিন্ডিকেটের সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীরা জানান, অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় রিফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস্ এসোসিয়েশন ব্রামার সদ্য সাবেক সভাপতি, গত সরকারের আর্শীবাদপুষ্ট মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে লাগামহীন দুর্নীতি করে যাচ্ছে।
রেফ্রিজারেটর এবং এসিতে ব্যবহৃত আর-২২ গ্যাস আমদানীকারকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে বাংলাদেশ আরএসি মালিক শ্রমিক কল্যাণ এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ (০৪ ফেব্রুয়ারী-২৫) মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদপ্তর ঘেরাও করে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, ব্রামা’র তত্ত্বাবধানে ৫১টি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আর-২২ গ্যাস আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেরই আরসি গ্যাসসংক্রান্ত ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতা নেই। তবুও একেকজন অবৈধভাবে তিন-চারটা লাইসেন্স নিয়েছেন। এমনকি আমদানি করা গ্যাস পরিকল্পিতভাবে মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তিন-চার গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করছে এই সিন্ডিকেট।
বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ আরএসি মালিক শ্রমিক এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম ভূইয়া বলেন, ব্রামা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের আর-২২ গ্যাসের যে উচ্চমূল্যে ব্যবসা শুরু হয়েছে। অনতিবিলম্বে এসব লাইসেন্স বাতিল করে সংশ্লিষ্টদের লাইসেন্স দিতে হবে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আর-২২ গ্যাসের সাত হাজার টাকার সিলিন্ডারকে যারা ছাব্বিশ হাজার টাকায় উন্নীত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউএনডিপির সঙ্গে প্রতারণা কওে এই চক্রের হোতা মো. আসাদুজ্জামান হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণের অর্থ। শুধু তাই নয় দেশে গ্যাস আমাদনির নামে জালিয়াতি করেও হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন তিনি। তাকে পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেন।
বিক্ষুব্ধ মালিক-শ্রমিকরা বলেন, তাদের দাবি সমূহ যদি না মানা হয়, ঢাকা শহরের আরসি সংশ্লিষ্ট ৪০ হাজার টেকনিশিয়ান কর্মবিরতিতে যাবে। সেইসঙ্গে তারা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিবেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন। আর-২২ গ্যাস সিন্ডিকেটের সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের লাইসেন্স বাতিল। মনিটরিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার। পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রমে আরএসি সংগঠনকে স্টেকহোল্ডার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা। টেকনিশিয়ানদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শ্রম অধিকার সংরক্ষণে সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন। সেই সঙ্গে তারা তাদের কর্মচারীদের নিরাপত্তা সহ আরও বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারিদের একটি প্রতিনিধি দল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদের হাতে একটি স্বারকলিপি প্রদান করেন। স্বারকলিপি গ্রহণ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এ সময় স্বারকলিপি প্রদান শেষে বাংলাদেশ আরএসি মালিক শ্রমিক এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম ভূইয়া গণমাধ্যমকে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ আমাদের দাবিগুলো শুনেছেন। দাবিগুলো তিনি উচ্চপর্যায়ে জানাবেন এবং দ্রুত আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য