-->

বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে এবছরও, বাড়বে মূল্যস্ফীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে এবছরও, বাড়বে মূল্যস্ফীতি
বন্দরে জাহাজজট (ছবি: ইন্টারনেট)

কোভিড মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে জাহাজজট। খালাস হতে দেরি হওয়ায় কন্টেইনারগুলো আটকা পড়ছে বিভিন্ন বন্দরে। আবার খরচ বাঁচাতে অনেক জাহাজ কন্টেইনার ছাড়াই বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। মূলত এসব কারণে বিশ্বব্যাপী ভেঙে পড়েছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ সংকট ২০২২ সালজুড়েই অব্যাহত থাকতে পারে। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে ডিজিটাল সাপ্লাই চেইন বিষয়ক সংস্থা ‘প্রজেক্ট ৪৪’ এর বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, চীন থেকে ইউরোপের বাজারে জাহাজে করে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে গত ডিসেম্বর মাসে গড়ে ছয় দিন করে বিলম্ব ঘটেছে। আর গত বছরের অক্টোবর মাস হতে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে পণ্য পরিবহণেও দেরি হচ্ছে। এসব কারণে বন্দরগুলোতে বাড়ছে জাহাজট। প্রতিটি বন্দরে অতিরিক্ত জাহাজজট ঘটায় তা দেশগুলোর উৎপাদন ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। দেশগুলো পণ্য উৎপাদন করলেও জাহাজজটের কারণে সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না। এতে বাড়ছে মূল্যস্ফীতিও। 

প্রজেক্ট ৪৪, কোভিডকালীন জাহাজজট ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে এক পূর্ভাবাসে বলছে, ‘পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় এই চলমান সংকট এ বছরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর কোভিডের এই প্রভাবের কারণে ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য ক্রয় করতে হবে।’

কোভিডের কারণে বন্দরগুলোতে দেখা দিয়েছে কন্টেইনারজট।

 

পণ্য সরবরাহের ওপর প্রভাব:

প্রজেক্ট ৪৪-এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘কোভিড বিশ্ব বাণিজ্যের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলেছে। কারণ একদিকে যেমন শিপিং খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে পণ্য সরবরাহে বিলম্ব হওয়া রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পণ্য সরবরাহের পর খালি কনটেইনারগুলো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে ঠিকমতো পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না।’

প্রকল্প ৪৪-এর সাপ্লাই চেইন ডেটা ইনসাইটসের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোশ ব্রাজিল বলেছেন, ‘২০২২ সাল পর্যন্ত কনটেইনার ছাড়া খালি জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে যেটা বন্দরে পণ্যজট তৈরি করবে। এসব কারণে ভোক্তাদের পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বেশি টাকা খরচ করতে হবে।’

জাহাজ থেকে পণ্য নাামনো ও ওঠানোর ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে এখন বেশি সময় লাগছে। লয়েড’স লিস্ট ইন্টেলিজেন্সের ২৫ জানুয়ারি তথ্য অনুসারে, চীনের সাংহাই এবং নিংবো বন্দর থেকে ৮২টি কনটেইনার জাহাজ যাত্রার অপেক্ষায় ছিল। অন্যদিকে আরো দক্ষিণে ইয়ান্টিয়ান এবং হংকংয়ের কাছে আরো ৬১টি জাহাজ যাত্রার অপেক্ষায় আছে।

প্রশান্ত মহাসাগরের লং বিচ এবং লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের বাইরে, ৬৮টি জাহাজ তাদের পণ্যসামগ্রী খালাস করার জন্য অপেক্ষামাণ ছিল। ইউরোপের রটারড্যাম এবং এন্টওয়ার্পে ১৯টি জাহাজ বন্দরে অপেক্ষামাণ আছে।গত বছর এই দিনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দরে জাহাজজট আরো তীব্র ছিল। এই বছর সেখানে এ সমস্যা খানিকটা কমলেও এখন সরবরাহ ব্যবস্থায় এর রেশ রয়ে গেছে। 

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বজুড়ে বন্দরগুলো পণ্য ওঠানামায় গতি আনার চেষ্টা করছে। রটারডাম গত ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড সংখ্যক কনটেইনার ওঠানামা করেছে এবং চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বেশ কয়েকটি বন্দর সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা চালু রেখেছে।

চীনের বন্দরগুলোতে পণ্যবাহী জাহাজগুলোর সাম্প্রতিক অবস্থান। (ছবি: বিবিসি) 

 

শূন্য কোভিড নীতি :

চীনের শূন্য কোভিড নীতি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের সহায়ক না হলেও আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ করে চীনা নববর্ষের আগে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাঘাত ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লয়েড’স লিস্টের বাজারবিষয়ক সম্পাদক মিশেল উইজ বকম্যানের মতে, ‘ প্রধান রপ্তানিকারক বন্দরের কর্তৃপক্ষগুলো করোনার কারণে প্রচুর বিধিনিষেধ আরোপ করছে। এজন্য তাদের কাছে পাঠানোর উদ্দেশ্যে রাখা কন্টেইনারগুলো চীনের বন্দরে দীর্ঘ  সময় ধরে রাখতে হচ্ছে। এ জটিলার কারণেই চীনের বন্দুরগুলোতে কন্টেইনারজট দেখা দিয়েছে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘শূন্য-কোভিড নীতির কারণে বন্দর কর্মীরা পালাক্রমে অর্ধেক সক্ষমতায় পরিচালিত হচ্ছে। এজন্য বন্দরের পুরো সক্ষমতা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’

বন্দর কর্তৃপক্ষ অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করার কারণ হচ্ছে, যদি কোনো সংক্রমণ টার্মিনালগুলোর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কর্তৃপক্ষ এই টার্মিনালটি বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে পণ্য ওঠানামায় আরো বেশি বিলম্ব ঘটবে। পণ্য ওঠানামা কম হওয়ার অর্থ হলো পণ্য খালাসের জন্য জাহাজের অপেক্ষা আরো দীর্ঘ হওয়া।

পণ্য সরবরাহের এই ব্যাঘাতের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হচ্ছে জাহাজ কোম্পানিগুলো। কারণ পণ্য রপ্তানিকারকরা জাহাজে জায়গা পাওয়ার জন্য রীতিমত যুদ্ধ করছে এবং তা কোম্পানিগুলোকে কিনতে হচ্ছে চড়া দামে।

এশিয়া থেকে ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রে একটি কনটেইনার পাঠানোর খরচ বাড়তে বাড়তে এখন আকাশছোঁয়া। মেরিটাইম কনসালট্যান্সি ড্রুরির মতে, জাহাজ শিল্প-২০২১ সালে ১৯০ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে।ড্রুরি মনে করে, মুনাফার এই রেকর্ডটি ২০২২ সালে আরও বাড়তে পারে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি। সূত্র: বিবিসি

মন্তব্য

Beta version