-->

শীতে জবুথবু উত্তরবঙ্গ, কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ৬.১

নিজস্ব প্রতিবেদক
শীতে জবুথবু উত্তরবঙ্গ, কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ৬.১
শীতে কুড়িগ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত (ছবি: কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি)

মধ্য মাঘে সারা দেশের ওপর দিয়ে জাঁকিয়ে বসেছে শীত। বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ। প্রথমবারের মতো তাপমাত্রাও নেমেছে অনেক নিচে। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশের জেলা লালমনিরহাটেও তাপমাত্রা একইরকম। পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুরেও বইছে হিম বাতাসের দাপট আর ঘন কুয়াশা। জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে স্থবিরতা।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, মেঘলা আকাশ আর চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন সঙ্গে কনকনে ঠাণ্ডা-এমন পরিস্থিতি এখন কুড়িগ্রামসহ আশেপাশের এলাকায়। জবুথবু এলাকার মানুষ সন্ধ্যা হতেই ঘরমুখো হচ্ছেন। রাতে বাড়ছে কুয়াশার ঘনত্ব। মাঘের এ কনকনে ঠাণ্ডায় খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন ভীষণ বিপাকে। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে চারা রোপণের কাজ করা শ্রমজীবীরা এবং রিক্সা ও ভ্যানচালকরা সময় মতো কাজে বের হতে পারছেন না। শিশু ও বয়স্কদেরও ভোগান্তি চরমে। সর্দি, কাশি ও ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হচ্ছে তারা। ফলে বাড়ছে করোনার আতঙ্ক।

কুড়িগ্রাম পৌর শহরের রিকশা চালক পেসকার ইসলাম বলেন,' কাইল (গতকাল) থেকে প্রচুর ঠাণ্ডা পড়ছে বাহে, ইশকা (রিকশা) চালাইতেও কষ্ট হইতেছে । হাত পা বরফ হয়ে গেছে। সকালে অইদ (রোদ) দেখনো (দেখলাম) তাও ঠাণ্ডা কমেছে না।'

কদমতলা গ্রামের দিন মজুর আসকর আলী বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ, কাজ না করলে পেটোত্ ভাত জোটে না। এই ঠাণ্ডায় ধানক্ষেতে পানিত্ নেমে কাজ করা নাগে। হাত পা এত ঠাণ্ডা হয় যে ওগুলা আছে কি নাই বুঝাই যায় না।’

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন,'শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী কুড়িগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।'

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান,সরকারিভাবে জেলার ৯টি উপজেলার জন্য বরাদ্দের ৩৫ হাজার ৭শ কম্বল ও ১ কোটি ৮ লাখ টাকার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি সংগঠনগুলো যেসব শীতবস্ত্র দিয়েছে সেগুলোরও বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

এ অবস্থায় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। আগামী দুদিন ধারাবাহিকভাবে বাড়তে পারে শীত। সেইসঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের এলাকাও বিস্তৃত হতে পারে।

এদিকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়ছেন উত্তরাঞ্চলের নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। শীতের কারণে বেশি কষ্টের মধ্যে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ বয়সিরা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ যেন তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে পড়েছে। কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে বোরো বীজতলা ও আলুক্ষেত নিয়ে আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন কৃষক।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সারা দেশের ওপর দিয়ে এ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ের মধ্যে দিনের তাপমাত্রা আরো কমে যেতে পারে। সংস্থাটি জানায়, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, যশোর ও কৃষ্টিয়া জেলা এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তার লাভ করতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর শীত ধরন বদলাচ্ছে। এবার পৌষে শীতে দেখা মেলেনি বললেই চলে। প্রকৃতিতে এখন চলছে মধ্য মাঘ। এ সময়ে এসে কাঙ্ক্ষিত শীত যেন জাঁকিয়ে নেমেছে। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড শীতের কাঁপুনিতে দিশেহারা খেটে খাওয়া মানুষ। এ বছর শৈত্যপ্রবাহও কম ছিল।

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, শনিবার (আজ) রাতের তাপমাত্রা আরো কমবে। পরবর্তী ১ থেকে ২ দিন তাপমাত্রা একই রকম থাকবে। তবে সোম বা মঙ্গলবার থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আবার বাড়বে। ফেব্রুয়ারি প্রথম সপ্তাহে রাতের তাপমাত্রা আবার কমতে পারে। ফেব্রুয়ারি ৪ বা ৫ তারিখে আবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তখন তাপমাত্রা আবার কমবে। সেসময় আরেকটা শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে।

এদিকে, রাজধানীতেও শীতের তীব্রতা বেড়েছে অনেক। সকাল থেকে উত্তরের হিমেল বাতাস কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন থাকার পর দুপুরে আকাশে সূর্য দেখা গেলেও তাতে উষ্ণতা ছিল না। তার সঙ্গে উত্তরীয় হিমেল হাওয়ার প্রকোপে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের ১৭ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে অবস্থান করছে। এছাড়া ১০ ডিগ্রির মধ্যে আছে আরো ৭ জেলার তাপমাত্রা। এ কারণে সারাজুড়েই একযোগে শীতের তীব্রতা অনুভব হচ্ছে।

 

মন্তব্য

Beta version