বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২ মাস ১৯ দিন পর হাসপাতাল থেকে তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছেন। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিতে দেখা গেছে। শারীরিক অবস্থার খানিকটা উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় ফেরেন তিনি।
করোনার বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতেই তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম জিয়ার মেডিকেল বোর্ড আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মেডিকেল বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী।
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. এফ এম সিদ্দিক, ডা. নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. লুৎফর আজিজ, ডা. শাহরিয়ার, ডা. আরমান রেজা, ডা. আল মামুন, ডা. শামসুল আরেফিন, ডা. আবু জাফর, ডা. কবির প্রমুখ।
বিএনপি চেয়ারপারসন লিভার সিরোসিসের কারণে বাসায় রক্ত বমি করার পর তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে রক্তক্ষরণের সমস্যায় ভোগেন তিনি।
ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, আপাতদৃষ্টিতে মেজর ব্লিডিংয়ের চান্স সম্ভবত থামানো গেছে। তারপর সিসিইউতে রেখে আমরা আরও ছয়দিন পর্যবেক্ষণ করি। তখনও দেখেছি, উনার আর ব্লিডিং হচ্ছে না। এরপর আমরা উনাকে শিফট করে কেবিনে নিয়ে আসি। তিনি কেবিন থেকেই বাসায় ফিরছেন।
ডা. সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট বলে রাখা প্রয়োজন, উনার মূল যে অসুখ সেটার যে প্রক্রিয়া হাই-প্রেসারের টোটাল সাপোর্টেশনের জন্য বাইপাস ড্রেন তৈরি করে দেওয়া, সেটা কিন্তু আমরা করতে পারিনি। আমরা যেটা করেছি, দৃশ্যমান বড় যে বেসিকগুলো ফেটে যাচ্ছিল সেগুলোকে ব্যান্ডিং করেছি, ব্লক করা হয়েছে। উনার অবস্থা এখন স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) আছে। কিন্তু, অদূর ভবিষ্যতে আবার যে ব্লিডিং হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি আরো বলেন, বেগম জিয়ার প্রধান সমস্যা লিভার সিরোসিস। এই রোগের সর্বশেষ চিকিৎসা লিভার পরিবর্তন করা। কিন্তু, আপাতত তিনি সেই শারীরিক অবস্থায় নেই।
গেল বছরের মাঝামাঝি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই দফায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে যেতে হয়।
৭৭ বছর বয়সী এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বেগম জিয়া। এরপর তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান মেডিকেল বোর্ড।
এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে পাঠাতে সরকারের কাছে বারবার আর্জি জানানো হলেও অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তির শর্তের বিষয়টি উল্লেখ করে সরকার কোনোবারই সে আবেদনে সাড়া দেয়নি।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজা নিয়ে কারাগারে যেতে হয় খালেদা জিয়াকে। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও তার সাজা হয়। করোনা মহামারি, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও বয়স বিবেচনায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি দেয় সরকার। এরপর কয়েক দফা এ মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
মন্তব্য