আবু মহসিন ফেসবুক লাইভে এসে প্রথমেই নিজের পরিচয় দেন। বলেন, ‘আমি মহসিন। ঢাকায় থাকি। আমার বয়স ৫৮ বছর। কোনো এক সময় আমি ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসারে আক্রান্ত। তাই আমার ব্যবসা কিংবা কোনো কিছু নেই। ভিডিও লাইভে আসার উদ্দেশ্য হলো: মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আমার যে অভিজ্ঞতা সেটা শেয়ার করলে সবাই জানতে পারবে, সবাই সাবধানতা অবলম্বন করবে। ’
তিনি বলেন, ‘গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। তার একটি ছেলে আমেরিকায় থাকে। মা মারা গেল অথচ ছেলেটি আসল না। এটা আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। আজ আমার আরেকজন খালা মারা গিয়েছেন। তারও একটি ছেলে আমেরিকায় ছিল। অবশ্য তার তিনটা ছেলেই ইঞ্জিনিয়ার। তিনজনই বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। তারা হয়তো দাফন–কাফনের কাজ সম্পন্ন করছে। সেদিক দিয়ে বলবো, এই খালা অনেক ভাগ্যবান।’
নিজের ছেলের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার একটা মাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। আমি বাসায় সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে খুব ভয় করছে। আমি যদি বাসায় মরে পড়েও থাকি, মনে হয় না এক সপ্তাহ কেউ জানতে পারবে, আমি মারা গেছি। ’
‘আমরা সব কিছু করি সন্তান এবং পরিবারের জন্য। আপনি যদি ১শ টাকা আয় করেন, তার ২০ শতাংশ টাকাও নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি ২০ শতাংশ নিজের জন্য ব্যয় করেন, তাহলে ৮০ শতাংশ টাকা পরিবারের জন্য ব্যয় হয়। ’
করোনাকালে একাকীত্বে ভোগার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট, যারা একা থাকে, তারাই একমাত্র বলতে পারে বা বোঝেন। ’
বন্ধুর প্রতারণা শিকার হয়েছেন জানিয়ে আবু মহসিন বলেন, ‘যাদের জন্য বেশি করেছি, প্রত্যেকটা লোকের কাছে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল, নাম কামরুজ্জামান বাবলু। আমি না খেয়ে তাকে খাইয়েছি। সে আমার ২৩-২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে। ’
মহসিন খান আরও বলেন, ‘পিতা-মাতা যা উপার্জন করে, তার সিংহভাগ সন্তানদের পেছনে খরচ করে। প্রকৃত বাবারা না খেয়েও সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। পরিবারকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিবার অনেক সময় বুঝতে চায় না। নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারলাম না। যারা দেখছেন, তাঁদের সঙ্গে হয়তো এটাই শেষ দেখা। সবাই ভালো থাকবেন।’
এরপর নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে কালেমা পড়তে পড়তে গুলি করেন মহসিন।
এর আগে মহসিন বলেন, ‘আমি যেটা দিয়ে সুইসাইড করার চিন্তা করছি, সেটি অবৈধ কোনো কিছু নয়। এই হলো আমার পিস্তলের লাইসেন্স। এক বছরের রিনিউ করা আছে। আমি এ মুহূর্তে চলে যাব।
‘আত্মীয়-স্বজন যারা আছো... আমি যে কবরস্থানটা করেছি, সেখানে আমাকে দাফন করো না। আমাকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে যে একটা কবরস্থান হয়েছে, তোমরা ওইখানে দাফন করে দিও। ওটাই আমার জন্য ভালো হবে। কারণ, প্রত্যেকটা লোক আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে- আমার বাবা-মা, ভাইরা, প্রত্যেকটা লোক। সবাই ভালো থাকো।’
মন্তব্য