ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির শিক্ষক, ডাক্তার, ব্যবসায়ীসহ ১৩ সদস্যের একটি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার নাহিদা রহমান সুমনা। গত মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশনে এ মতবিনিময় সভা হয়।
ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, ব্রুনাইয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, করোনা সংক্রমণ, কর্মপরিবেশ, শ্রমিকদের মজুরি, অধিকার ও সমস্যা, বাংলাদেশ কমিউনিটির দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো উপলক্ষ্যে হাই কমিশন আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কমিউনিটির অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়।
বাংলাদেশ কমিউনিটি ১৩ সদস্যের দলটি ছিল ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি ব্রুনাইয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে গঠিত।
সভার শুরুতেই হাই কমিশনার নাহিদা রহমান সুমনা উপস্থিত সবাইকে হাই কমিশনে স্বাগত জানান। তিনি ব্রুনাইয়ে অর্জিত তার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং সেই আলোকে তাদেরকে বাংলাদেশ কমিউনিটির দৃশ্যমানতা আরো বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
ব্রুনাইয়ের রিপাস হাসপাতালের সদ্য যোগদানকৃত ডাক্তার সাজ্জাদ জায়েদ চৌধুরী ও ডাক্তার ফাতেমা খাতুনকে হাই কমিশনার ব্রুনাইয়ে অবস্থানরত সব নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণের জন্য তার উদ্যোগে তৈরি ডাটাবেজ সিস্টেমে নিবন্ধনের অনুরোধ করেন এবং নবাগত সব বাংলাদেশের নাগরিকের মাঝে এই তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি সবাইকে বাংলাদেশ হাই কমিশনের নানা দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পর্কে অবহিত করেন। ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির দৃশ্যমানতা বৃদ্ধির তাৎপর্য তুলে ধরে এ বিষয়ে কমিউনিটির সদস্যদ্যের আরো সক্রিয় ও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন হাই কমিশনার।
নাহিদা রহমান সুমনা জানান, ২০২১ সালে জনকূটনীতির মাধ্যমে ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে অনেক কাজ করেছেন। ২০২২ সালে ব্রুনাই-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য কাজ করবেন বলে সবাইকে অবহিত করেন। ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের অনেক পণ্যের চাহিদা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ব্যবসায়ী আবু তাহের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত ভূমিকা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
ব্রুনাইয়ের যে তিনটি এলাকায় তার তিনটি বড় মুদি দোকান রয়েছে সে এলাকার নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় এলাকার দুঃস্থ ও দরিদ্র মানুষদের আর্থিক সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন, যে খবর ব্রুনাইয়ের স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
সভায় ব্যবসায়ী মিন রফিকুল ইসলাম জানান, ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকরা কিছু দিন ধরে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ব্রুনাই ত্যাগের পর পুনরায় ব্রুনাইয়ে ফিরে আসার সময় নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ সময় বাংলাদেশের হাই কমিশনার এই সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দেন।
ডাক্তার সাজ্জাদ জায়েদ চৌধুরী জানান, পূর্বে রিপাস হাসপাতালের নন-ক্লিনিক্যাল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ডাক্তাররা সেবা প্রদান করলেও বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ক্ষেত্রে কাজ করার জন্যও বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার আসছেন, যা ব্রুনাইয়ের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ডাক্তারদের অবদান ও দৃশ্যমানতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি ব্রুনাই-এর অধ্যাপক জনাব ইয়াকুব আলী জানান, মাতৃভূমি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি যেমন তাদের প্রশ্নাতীত আনুগত্য প্রদর্শন করতে হয়, ঠিক তেমনি নিয়োগকারী হিসেবে ব্রুনাই সরকারের প্রতি অনুগত থাকতে হয়।
এই পরিস্থিতিতে দৃশ্যমানতা বৃদ্ধির জন্য যথাযথ সুযোগ ও প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার জন্য তিনি হাই কমিশনারকে অনুরোধ করেন। এই ব্যাপারে হাই কমিশনার পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস এবং তাদেরকে সব সময় হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেন।
আলোচনা সভা শেষে হাই কমিশনার নাহিদা রহমান সুমনা উপস্থিত সবাইকে বাংলাদেশ হাই কমিশনে অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’-এ নিয়ে যান। সেখানে তারা ফটশেসনে অংশ নেন। ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’-এ রাখা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কিত অনেক বই পড়ার জন্য হাই কমিশনার তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন।
এ সময় সবাইকে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ হাই কমিশনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন নাহিদা রহমান সুমনা।
মন্তব্য